অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

কক্সবাজারে কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ১২০-শয্যার সেন্টার চালু আইওএম`র

প্রকাশিত: ০৭:৫০ পিএম, ১৭ আগস্ট ২০২০ সোমবার  

কক্সবাজারে কোভিড-১৯ মোকাবেলা করার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম-জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা) কোভিড-১৯ আক্রান্তদের জন্য যথাযথ স্বাস্থ্যব্যবস্থা সম্বলিত একটি ১২০-শয্যার সিভিয়ার একিউট রেস্পিরেটরি ইনফেকশন (এসএআরআই-গুরুতর তীব্র শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ) আইসোলেশন অ্যান্ড ট্রিটমেন্ট সেন্টার (আইটিসি)-এর কার্যক্রম শুরু করেছে।

সোমবার (১৭ আগস্ট) কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ২০ (এক্সটেনশন) ক্যাম্পে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের সাথে সমন্বয় করে নির্মিত এই স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের শুরু হয়। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মো. মাহবুব আলম তালুকদার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই এই স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইওএম বাংলাদেশ মিশনের উপ-প্রধান ম্যানুয়েল পেরেইরা। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো, মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, “করোনা পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের মাঝে সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে মানবিক কর্মসূচি পরিচালনা করেছি। সে কারণে সফলতাও পেয়েছি। স্বাস্থ্যসেবা খাতকে আমরা প্রথম অগ্রাধিকার দিয়েছি। প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার মাঝে করোনা আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়েছে। এই কৃতিত্ব সবার।“        

এছাড়া ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)-এর অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) মো. আতিকুর রহমান, রোহিঙ্গা ক্যাম্প ২০ ও ২০ এক্সটেনশন-এর ক্যাম্প ইনচার্জ মো. আবদুস সবুর, উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নিকারুজ্জামান, উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. রঞ্জন বড়ুয়া এবং ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ-এর স্বাস্থ্য খাতের সমন্বয়ক ডা. মুকেশ কুমার প্রজাপতি বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

এ পর্যন্ত তিনটি এসএআরআই আইটিসির ২৩০টি শয্যার মাধ্যমে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার স্থানীয় জনগোষ্ঠী এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কোভিড-১৯-এর সামগ্রিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমে ভূমিকা রাখছে জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থাটি। বাংলাদেশে কোভিড-১৯ স্বাস্থ্য সংকটের শুরু থেকেই কক্সবাজারে মানবিক সহায়তা কাজে নিয়োজিত সংস্থাগুলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরকে আশ্রয় দেওয়া এই জেলাটিতে সম্ভাব্য মহামারী মোকাবেলায় সম্ভাব্য প্রস্তুতির জন্য কাজ করছে।

এসএআরআই আইটিসিগুলোর পাশাপাশি আইওএম-এর মাইগ্রেশন হেলথ ডিভিশন এখন পর্যন্ত কক্সবাজারে আরো চারটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের পুনর্গঠন করেছে। কক্সবাজারের চকরিয়া এবং রামু উপজেলায় সরকারের পরিচালনাধীন আইসোলেশন সেন্টারগুলোতে সহায়তার জন্য আইওএম স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সিভিল সার্জন অফিস এবং বিশ্ব ব্যাংকের সাথে সমন্বয় করে কাজ করছে।

কক্সবাজারে কোভিড-১৯-এর প্রভাব কমানো ও বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা করার জন্য বিদ্যমান স্বাস্থ্য পরিষেবা আরো শক্তিশালী করা ও উন্নত করার কার্যক্রমের উপর সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে আইওএম। যদিও বর্ষা মৌসুমের কার্যক্রম, সুরক্ষা এবং জীবিকা সংস্থানমূলক কার্যক্রমও চলমান আছে।  মানবিক সহায়তাকারী সংস্থাগুলো কোভিড-১৯-এর বিস্তার নিয়ন্ত্রণে বহুমুখী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত আছে এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির ও জেলার স্থানীয় জনগোষ্ঠীদের সেবায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য অতিরিক্ত সহায়তা ও সংস্থান নিশ্চিত করা হচ্ছে।

কক্সবাজার জেলায় আইওএম-এর অতিরিক্ত স্বাস্থ্য সহায়তায় আরও রয়েছে:

- আইওএম কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ১০জন মেডিকেল অফিসার, একজন রেডিওলজিস্ট, একজন রেডিওগ্রাফার, একজন স্যানিটেশন অফিসার এবং ১৫জন ক্লিনার সহায়তা প্রদান করেছে এবং স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহকারীদের জন্য পিপিই সরবরাহ করেছে।
- আইওএম বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রামু এবং চকরিয়ায় এসএআরআই আইটিসিগুলোতে শয্যা বাড়ানো এবং অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন পরিষেবার মান উন্নয়নে সহায়তা করছে।
- উখিয়া ও টেকনাফসহ জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বিভিন্ন সহায়তা সরবরাহ করা হচ্ছে।
- আইওএম কোভিড-১৯ রোগীদের এবং তাদের পরিবারদের সাথে সমন্বয় ও সঠিকভাবে পরিচালনা করতে অ্যাম্বুলেন্স প্রেরণ এবং রেফারেল ইউনিটের নেতৃত্ব দিচ্ছে। রেফারেলকৃত কোভিড-১৯ রোগী বহন করার জন্য সাতটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়োজিত করা হয়েছে।
- অপারেশনাল চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও আইওএম ২৪-ঘন্টা হটলাইন এবং ইন্টারেক্টিভ ভয়েস রেসপন্স (আইভিআর) প্রযুক্তির মাধ্যমে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত গুজব এবং ভুল তথ্য প্রতিরোধ করে জীবন রক্ষাকারী তথ্য সরবরাহ করছে।
- আইওএম ৩৫টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা চালিয়ে যাচ্ছে।
- ৯৩-টি আশ্রয়সেয়াকে কোয়ারিন্টিন সেন্টারে রূপান্তর করা হয়েছে যেখানে ৪৬৫জন ব্যক্তির ধারণক্ষমতা রয়েছে।