আবারও ক্ষমা পেলেন জাহাঙ্গীর
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: ০৬:০৪ পিএম, ২১ অক্টোবর ২০২৩ শনিবার আপডেট: ০৬:৩৬ পিএম, ২১ অক্টোবর ২০২৩ শনিবার
দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কৃত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে আবারও ক্ষমা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ভবিষ্যতে সংগঠনের স্বার্থপরিপন্থী কার্যক্রম ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার শর্তে তাকে ক্ষমা করে দল।
শনিবার (২১ অক্টোবর) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই বিষয়টি জানানো হয়।
জাহাঙ্গীর আলম বরাবর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ‘শুভেচ্ছা গ্রহণ করবেন। উপর্যুক্ত বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বার্থ, আদর্শ, শৃঙ্খলা তথা গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার জন্য ইতোপূর্বে আপনাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। ভবিষ্যতে সংগঠনের স্বার্থপরিপন্থী কর্মকাণ্ড ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার শর্তে ক্ষমাপ্রার্থীদের প্রতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে। সেই সূত্রে আপনার প্রতিও ক্ষমা প্রদর্শন করা হল। উল্লেখ্য, ভবিষ্যতে কোনো প্রকার সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলে, তা ক্ষমার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।’
২০১৮ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দলীয় প্রতীকে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। তবে ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। পরে জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকেও বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তবে শর্তসাপেক্ষে চলতি বছরের জানুয়ারিতে জাহাঙ্গীরকে দলে ফেরানো হয়।
গত মে মাসে অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হন জাহাঙ্গীর। সেখানে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খানকে বেছে নেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। পরে দলের মনোনয়ন না পেয়ে জাহাঙ্গীর আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম কেনেন। পাশাপাশি মা জায়েদা খাতুনের নামেও পৃথকভাবে মনোনয়ন ফরম নেন তিনি। তবে ঋণখেলাপির জামিনদার হওয়ার কারণে জাহাঙ্গীরের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন গাজীপুর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম। পরে রিটার্নিং কর্মকর্তার ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করেন জাহাঙ্গীর। সবশেষ গত ৪ মে জাহাঙ্গীরের আপিল খারিজ করে দেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম। এতে জাহাঙ্গীরের মনোনয়ন বাতিল নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তই বহাল রয়ে যায়। এরপর ৭ মে প্রার্থিতা বাতিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গাজীপুরের সাবেক এই মেয়র হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। পরদিন ৮ মে বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ তার রিট আবেদনও খারিজ করে দেন।
প্রার্থিতা বাতিলের পর জাহাঙ্গীর আলমকে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খানের পক্ষে কাজ করতে বলা হয়। তবে এটি না করে ‘বিদ্রোহী’ হন জাহাঙ্গীর। ওই সময় তার এমন অবস্থানের পর থেকেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও নানা হুঁশিয়ারি দেন। একপর্যায়ে তাকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
নিজের প্রার্থিতা ফিরে না পেলেও মা জায়েদা খাতুনকে নিয়ে লড়ে যান জাহাঙ্গীর আলম। অবশেষে তিনি মাকে বিজয়ী করতে সক্ষম হন। জায়েদা খাতুন টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে দুই লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান নৌকা প্রতীক নিয়ে দুই লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট পেয়েছেন। ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটের ব্যবধানে জায়েদা খাতুন জয়লাভ করেন।