এক বছর ধরে ইসরাইলকে বোকা বানিয়েছে হামাস
ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:৩৪ পিএম, ১১ অক্টোবর ২০২৩ বুধবার
হামলার আগে দীর্ঘ এক বছর ধরে ইসরাইলকে বোকা বানিয়েছে ফিলিস্তিনি হামাস। সংগঠনটির ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র সোমবার রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছে।
সশস্ত্র সংঘাত নয় বরং আপেক্ষিক শান্তি বজায় রাখতে তারা অর্থনৈতিক প্রণোদনা নিয়েই সন্তুষ্ট-এমন প্রচারণা বছরব্যাপী চালিয়েছে সংগঠনটি। ইসরাইলে গাজাবাসীদের কর্মসংস্থান আর নতুন যুদ্ধ এড়ানো তাদের অগ্রাধিকারে ছিল বলে সবাইকে জানিয়েছে হামাস।
হামাসের সূত্র জানায়, তারা লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত নয় বলে ধারণা দিয়েছিল ইসরাইলকে। ইসরাইলকে বিভ্রান্ত করতে একটি অভূতপূর্ব গোয়েন্দা কৌশল ব্যবহারের কথাও জানান তিনি। এমনকি সাম্প্রতিক মাসগুলোতে গাজার সীমান্তও তুলনামূলকভাবে শান্ত ছিল।
হামলার প্রস্তুতির অংশ হিসাবে তারা একটি নকল ইসরাইলি সম্প্রদায়ও তৈরি করেছিল। আর এই সম্প্রদায়ই সীমান্তের শহরগুলোতে ঘরে ঘরে গিয়ে ইসরাইলের বাসিন্দাদের হত্যা করেছে।
সূত্রটি জানায়, ইসরাইল অবশ্যই তাদের দেখেছে কিন্তু তারা নিশ্চিত ছিল হামাস সংঘর্ষে জড়াবে না। কারণ, গাজাবাসীদের ওয়ার্ক পারমিট নিশ্চিত করতে তারা বেশি আগ্রহী-এমন স্বরূপ প্রকাশ করা হয়েছিল ইসরাইলের সামনে। তাই ইসরাইলও তাদের প্রবেশে বাধা দেয়নি।
ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়ে এই সংগঠনের অনেক নেতাকেই আক্রমণের পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি। এমনকি হামলার সঙ্গে জড়িত আনুমানিক এক হাজার সদস্যকে ঠিক কিসের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে সেটিও বলা হয়নি তাদের।
ইসরাইলের একটি সূত্র জানায়, তারা আমাদের ভাবতে বাধ্য করেছিল যে তারা অর্থ চায়। হামলা চালানোর আগ পর্যন্ত দলের সদস্যরা সবসময় অনুশীলন ও মহড়ায় ব্যস্ত ছিলেন।
ইসরাইলের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ইয়াকভ আমিদ্রর বলেন, ইহুদি রাষ্ট্রের সঙ্গে মিত্র কিছু দেশ একটি মিথ্যাকে সত্য বলে ধরে নিয়েছিল। ‘হামাস আরও দায়িত্বশীল আচরণ’ করেছে বলে জানিয়েছিল জেরুজালেমকে।
আমিদ্রর বলেন, আমরা নির্বোধভাবে এটিকে সত্য বলে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলাম। ইসরাইল এই ভুল আর করবে না বলে জানান তিনি। বলেন, ‘আমরা হামাসকে ধীরে কিন্তু নিশ্চিতভাবে ধ্বংস করব।’
শনিবার ইসরাইলে চার দফায় হামলা চালিয়েছে হামাস। হামলায় প্রযুক্তিহীন প্রাচীন কৌশল ব্যবহার করে ইসরাইলকে বোকা বানানো হয়েছে। প্রথমে ইসরাইলের দিকে প্রায় ৩ হাজার রকেট ছোড়া হয়। একই সময়ে সীমান্তের উপরে হ্যাং গ্লাইডার দিয়ে উড়ে আসে বাহিনীর অন্য সদস্যরা।
অন্যদিকে ইসরাইলের স্থাপন করা সুরক্ষাবলয় ধ্বংস করে আরেকটি ইউনিট। সীমান্ত পেরোতে বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছিল। প্রথমে সংগঠনের সদস্যরা মোটরবাইকে করে প্রবেশ করে। এরপর বুলডোজার ব্যবহার করে জিপগুলো প্রবেশ করে।
এরপর সংগঠনের একটি ‘কমান্ডো ইউনিট’ ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) দক্ষিণ গাজা বিভাগের সদর দপ্তরে আক্রমণ করে।
ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থার একটি হিসাবে পরিচিত। আর গাজা উপত্যকাও বিশ্বের সবচেয়ে কড়া নজরদারিতে থাকা একটি স্থান। সেখানে সব ধরনের ফোনকল রেকর্ড করা হয়।
স্যাটেলাইটগুলো প্রত্যেক পদক্ষেপের ওপর নজর রাখে। অঞ্চলটির ২৩ লাখ বাসিন্দার ওপর প্রতিনিয়ত নজর রাখে বহু গোয়েন্দা। ইসরাইলের নজর এড়াতে হামাস প্রযুক্তির ব্যবহার এড়িয়ে গেছে। সে লক্ষ্যে ‘প্রস্তর যুগ’র কৌশল ব্যবহার করেছে তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক ও জাতীয় সন্ত্রাস দমন কেন্দ্রের সাবেক প্রধান অ্যান্ড্র– বোরিনের বলেন, ‘আমার বিশ্বাস এখানে কোনো ডিভাইস ব্যবহার করে গোপন যোগাযোগের বিষয় জড়িত আছে।’ অনেকের মতে, নজরদারির বাইরে থাকতে আন্ডারগ্রাউন্ডে আশ্রয় নিয়েছিল হামাস।