দেশে ডেঙ্গু টিকার সফল প্রয়োগ আশা জাগাচ্ছে
অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:১৭ পিএম, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ শুক্রবার
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ডেঙ্গু টিকার গবেষণা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি করেছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)।
যুক্তরাষ্ট্রের ভার্মন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউভিএম) লার্নার কলেজ অব মেডিসিনের সঙ্গে আইসিডিডিআর,বির পরিচালিত এই যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরনের বিরুদ্ধেই উপযোগী এই টিকা। টিকার নাম দেওয়া হয়েছে ‘টিভি-০০৫’।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে আইসিডিডিআর,বি। সম্প্রতি দ্য ল্যানসেট ইনফেকশাস ডিজিজেস জার্নালে এই গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে দেশের জনস্বাস্থ্য যখন বিপর্যয়ের মুখে এমন পরিস্থিতিতে টিকা আবিষ্কার ও মানবদেহে সেটির সফল প্রয়োগ মানুষকে আশার আলো দেখাচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গবেষণায় ব্যবহৃত এক ডোজের ডেঙ্গু টিকা টিভি-০০৫ মূল্যায়ন করে দেখা গেছে, এটি শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রয়োগের জন্য নিরাপদ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সক্ষম।
ডেঙ্গু একটি মশাবাহিত ভাইরাস যা বিশ্বব্যাপী, বিশেষ করে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে একটি বড় সমস্যা হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ বিশ্বের ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। ২০ বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। সাম্প্রতিক সময়ে এর তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত বেশ গুরুতর এবং ঢাকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর এটি ভয়ানক প্রভাব ফেলেছে।
গবেষকরা জানান, ২০১৫ সালে ডেঙ্গু ইন ঢাকা ইনিশিয়েটিভ (ডিডি) নামক গবেষণাটি শুরু করেন আইসিডিডিআর,বি এবং ইউভিএমের ভ্যাকসিন টেস্টিং সেন্টারের গবেষকরা। এই সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার লক্ষ্য ছিল ডেঙ্গু টিকার উন্নয়নে বাংলাদেশকে সম্পৃক্ত করা। ২০১৫ থেকে ক্লিনিকাল ট্রায়াল, ল্যাবরেটরি পরীক্ষণ অবকাঠামো এবং প্রারম্ভিকভাবে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব অধ্যয়ন-সংশ্লিষ্ট গবেষণার জন্য আইসিডিডিআর,বিতে প্রয়োজনীয় সক্ষমতা তৈরি করা হয়।
২০১৬ সাল থেকে বিভিন্ন বয়সের (বয়স ১-৪৯ বছর) ১৯২ জন স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণকারীকে চারটি ভাগে ভাগ করে ৩:১ টিভি-০০৫ টিকা বা প্লাসিবো প্রদান করা হয়। এরপর তারা পরবর্তী ৩ বছর পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করেছেন। টিকা দেওয়ার পর বেশিরভাগ স্বেচ্ছাসেবকের মধ্যে চারটি ডেঙ্গুর সেরোটাইপের অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। যারা আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের অ্যান্টিবডির পরিমাণ বেশি পাওয়া গেছে। যদিও গবেষণাটির কার্যকারিতা মূল্যায়ন করার জন্য ডিজাইন করা হয়নি। তবে এখন পর্যন্ত টিকাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ডেঙ্গু সংক্রমণের কোনো ঘটনা শনাক্ত করা যায়নি। গবেষণালব্ধ এই ফলগুলো ডেঙ্গুপ্রবণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপকহারে টিভি-০০৫ ডেঙ্গু টিকা ব্যবহারের জন্য উপযোগী করে তোলার পাশাপাশি, তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল পরিচালনার জন্য সমর্থন জোগাড় করতে সহায়তা করবে।
জানা গেছে, ২০০৯ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের (এনআইএইচ) তৈরি ডেঙ্গু টিকার মূল্যায়ন করে আসছে ইউভিএমের ভ্যাকসিন টেস্টিং সেন্টার। আইসিডিডিআর,বির গবেষকদের মধ্যে প্রধান গবেষক হিসাবে রয়েছেন সিনিয়র বিজ্ঞানী রাশিদুল হক। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন মো. শফিউল আলম, সাজিয়া আফরিন ও মো. মাসুদ আলম।
এ বিষয়ে আইসিডিডিআর,বির গবেষক ড. রাশিদুল হক বলেন, একটি কার্যকর এবং টেট্রাভালেন্ট ডেঙ্গু টিকা বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের মানুষের অংশগ্রহণে টিভি-০০৫ টিকার গবেষণা করতে পেরে আমরা গর্বিত। আশা করি আমাদের কাজ ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে একটি কার্যকর টিকা প্রাপ্তির বিষয়কে ত্বরান্বিত করবে।