বড় হারে সিরিজ হার বাংলাদেশের
স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:২৬ এএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ বুধবার
ব্যাটসম্যানদের চরম ব্যর্থতায় বিশ্বকাপের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। আর এই পরাজয়ে ২-০তে সিরিজ খোয়াল স্বাগতিকরা।
মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয় দুদল। যেখানে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বাজে ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনীতে ৫০ ওভারের ম্যাচে ৩৪.৩ ওভারেই ১৭১ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। জবাবে ৩ উইকেট হারিয়ে ও ১৫ ওভার বাকি থাকতে জয় নিশ্চিত করে কিউইরা।
১৭২ রানের লক্ষ্য তাড়ায় খুব একটা বেগ পেটে হয়নি কিউইদের। উইল ইয়ংয়ের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে সহজ জয়ে সিরিজ জিতে নিল নিউজিল্যান্ড।
লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা ভালোই করে নিউজিল্যান্ড। দেখে শুনেই এগিয়ে যেতে থাকেন দুই ওপেনার ফিন অ্যালেন ও উইল ইয়ং। ৪৯ রানের ওপেনিং জুটি গড়েন এই দুই ব্যাটার। তবে দশম ওভারে বল করতে এসে এ জুটি ভাঙেন শরিফুল ইসলাম। তার শর্ট বলে পুল করেছিলেন ফিন অ্যালেন। তবে অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বলে টেনে খেলতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। ২৬ বলে ২৮ রান করেন অ্যালেন।
অসাধারণ ডেলিভারিতে পরের বলেই ডিন ফক্সক্রাফটকে তুলে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা তৈরি করেন শরিফুল। তার ফুললেন্থ বলে বোল্ড হয়ে যান এ ব্যাটার। তুলে নিতে পারতেন হ্যাটট্রিকও। পরের বলটিও দুর্দান্ত করেছিলেন শরিফুল। হেনরি নিকোলসের আউটসাইড এজের আবেদন জোরালো আবেদন ছিল। তবে আম্পায়ার সাড়া দেননি। নিশ্চিত না হওয়ায় রিভিউ নেননি টাইগাররা।
এরপর বাংলাদেশের হতাশা বাড়াতে থাকেন ইয়ং ও নিকোলস। তৃতীয় উইকেটে ৮১ রানের জুটি গড়েন এ দুই ব্যাটার। তাতেই জয়ের ভিত পেয়ে যায় দলটি। এরপর দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে ইয়ংকে ফিরিয়ে এ জুটি ভেঙেছিলেন নাসুম। তার ভেতরে ঢোকা বলটি বাঁক খেয়ে অফ স্টাম্প ভাঙলে ব্যক্তিগত ৭০ রানে থামেন ইয়াং। ৮০ বলে ১০টি চার ও ১টি ছক্কায় সাজান তার ইনিংস।
এরপর বাকি কাজ টম ব্লান্ডেলকে নিয়ে শেষ করেন নিকোলস। এক প্রান্তে আগলে ৮৬ বলে ৫০ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। তবে উইকেটে নেমে কিছুটা আগ্রাসী হয়ে ১৬ বলে ২৩ রান তুলে দলের জয় নিশ্চিত করেন ব্লান্ডেল।
এর আগে টস জিতে আগে ব্যাটিং বেছে একমাত্র অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বাদে আর কেউ দৃঢ়তা দেখাতে পারেননি। বাকিরা কেউই তাকে খুব একটা সঙ্গ দিতে পারেননি। নিউজিল্যান্ড বোলারদের তোপে ১৫ ওভার বাকি থাকতে দুইশোর আগেই থেমে গেল টাইগাররা।
মঙ্গলবার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচটাতে বাংলাদেশ স্রেফ ১৭১ রানের পুঁজি। দলের হয়ে ৮৪ বলে ১০ চারে সর্বোচ্চ ৭৬ রান করে শান্ত। ৩৪ রানে ৩ উইকেট নিয়ে কিউইদের সফল বোলার অ্যাডাম মিলনে। ট্রেন্ট বোল্ট ৩৩ রানে পান ২ উইকেট।
বাংলাদেশ একাদশে একাধিক পরিবর্তন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য জাকির হোসেনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে অভিষেক। ওপেনিংয়ে নেমে অভিষেকটা সুখকর হয়নি এই ওপেনারের। ৫ বলে মাত্র ১ রান করে মিলনের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন জাকির। সেটাও ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে।
তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে সাজঘরে ফেরেন আরেক ওপেনার তানজিদ হাসান সাকিব। ৫ বলে এক চারে ৫ রান করা সাকিব বোল্টের বলে ক্যাচ দেন অ্যালেনের হাতে।
শান্ত ও তৌহিদ হৃদয়ের জুটি সাময়িক বিপর্যয় রোধ করে। ভালো খেললেও ইনিংস বড় করতে পারেনি তৌহিদ হৃদয়। ১৭ বলে ১৮ রান করে মিলনের শিকার তিনি। এরপর মুশফিকুর রহীমের সঙ্গে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর জুটি ছিল বেশ ভালোই। তবে প্রত্যাশা পূরুণ করতে পারেননি মুশফিক।
কিউই অধিনায়ক লকি ফার্গুসনের বলে বোল্ড তিনি। অনেকটা নাটকীয়ই ছিল তার আউট। রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে ঠেকালেও বল গিয়ে লাগে স্টাম্পে, পা দিয়ে সরাতে গিয়েও পারেননি মুশফিক। দৃষ্টিকটু আউটে ফেরেন ২৫ বলে ১৮ রান করে।
তবে অন্য প্রান্তে শান্ত ছিলেন ঠিকই ছন্দে। অধিনায়কত্বের অভিষেকেই তিনি পেয়েছেন ফিফটির দেখা। যা তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারে পঞ্চম ফিফটি। বাংলাদেশের হয়ে অধিনায়ক হিসেবেও সর্বোচ্চ ইনিংসটি এখন তার। তবে জুটিটা জমে উঠতে বিদায় নেন মাহমুদউল্লাহও। মিলনে গতি আর স্যুয়িং বুঝতে না পেরে ২১ রান করা ব্যাটার ক্যাচ দেন কিপারের হাতে। তবে আউট হওয়ার আগে বাংলাদেশের চতুর্থ ব্যাটার হিসেবে ওয়ানডেতে পাঁচ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার।
শেখ মেহেদী হাসানও বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি শান্তকে। এক পাশে উইকেট পতনের স্রোতেও কুঁকড়ে না থেকে রান বাড়িয়ে যান শান্ত। ৫৫ বলে ফিফটি করার পর সেঞ্চুরির আভাসও দিচ্ছিলেন। তবে টেল এন্ডারদের নিয়ে লড়াই আর করতে পারেননি। অফ স্পিনার কোল ম্যাকনকির বলে এলবিডব্ললিউতে শেষ হয় তার ইনিংস। দলীয় ১৬৮ রানে তিনি আউট হওয়ার পর মাত্র তিন রানেই বাকি ব্যাটাররা প্যাভিলয়নে ফেরেন।