বিভিন্ন আয়োজনে তেহরানের বাংলাদেশ দূতাবাসে জাতীয় শোক দিবস পালন
প্রকাশিত: ০৬:৪৫ পিএম, ১৫ আগস্ট ২০২০ শনিবার আপডেট: ১১:৩৭ এএম, ১৬ আগস্ট ২০২০ রোববার
তেহরানস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে ৪৫তম জাতীয় শোকদিবস পালন করেছে। দিবসটি উপলক্ষে (ইরানে করোনা পরিস্থিতির কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে) আয়োজিত নানা কর্মসূচির অংশ হিসেবে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা, দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং ইউনেস্কোর মহাপরিচালকের বাণী পাঠ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীভিত্তিক স্থিরচিত্র ও প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন, আলোচনা সভা এবং জাতির জনক ও অন্য শহীদদের আত্মার মঙ্গল কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত আয়োজন করা হয়।
ইরান প্রবাসী বাংলাদেশি, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, কূটনীতিক, বিশিষ্ট ইরানি ব্যক্তিবর্গ এবং তেহরানস্থ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেন।
রাষ্ট্রদূত এএফএম গওসোল আযম সরকারের সভাপতিত্বে এবং দূতালয় প্রধান মো. হুমায়ুন কবিরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক রাউসুল মুসাভি, রেডিও তেহরানের বাংলা বিভাগের পরিচালক মুজতাবা ইবরাহিমি, বিশিষ্ট প্রকাশক সাদেগ সামি, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর ফার্সি ভাষায় অনুবাদকারী আমিন মোন্তাজেরি, তেহরানে বসবাসকারী সিনিয়র সাংবাদিক এজাজ হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ বিষয়ক পরিচালক আহমদ সাদেগি এবং ইরান ডেইলি পত্রিকার নির্বাহী পরিচালক তোরাজ শির আলিলুসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব মুজিব বর্ষের প্রতি সম্মান জানিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক রাউসুল মুসাভি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ব ইতিহাসে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। তিনি শুধু বাংলাদেশের নেতা নন, বরং বিশ্বশান্তি ও প্রগতির অন্যতম অগ্রদূত ছিলেন। মুসাভি বলেন, ইরানে মুজিব বর্ষের উদযাপনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সহায়তা করছে এবং করবে।
রেডিও তেহরানের বাংলা বিভাগের পরিচালক মুজতাবা ইবরাহিমি বলেন যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে রেডিও তেহরান এরইমধ্যে একাধিক অনুষ্ঠান প্রচার করেছে এবং বছরব্যাপী নানা অনুষ্ঠান প্রচার করবে। বাংলাদেশের জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রেডিও তেহরান রাষ্ট্রদূত এএফএম গওসোল আযম সরকারের সাক্ষাৎকার ও বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করেছে, জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে খ্যাতিমান প্রকাশনী কেতাবসারার চেয়ারম্যান সাদেগ সামি এবং সিনিয়র সাংবাদিক এজাজ হোসেন বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন।
অসমাপ্ত আত্মজীবনীর ফার্সি ভাষার অনুবাদক আমিন মোন্তাজেরি বলেন যে, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকথাটি পড়ে তিনি অভিভূত হয়েই তা ফার্সি ভাষায় অনুবাদের তাগিদ অনুভব করেন।
তিনি মন্তব্য করেন যে এটি কেবল একজন নেতার রাজনৈতিক স্মৃতিকথা নয়, বরং আত্মজীবনীটিতে একজন মহামানবের গড়ে উঠার প্রেক্ষাপট, মানস এবং বাংলাদেশর সমাজ-সংস্কৃতিও চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে।
সভার সভাপতি রাষ্ট্রদূত এএফএম গওসোল আযম সরকার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, তার সম্মোহনী নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয় এবং স্বাধীনতা অর্জন করে।
বিবিসির জরিপের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী এই মহান নেতার ৭ মার্চের ভাষণ আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসের অন্যতম স্তম্ভ।
স্বাধীনতা-উত্তর দেশগঠনে বঙ্গবন্ধুর অসামান্য অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতি থামিয়ে দিতেই স্বাধীনতা-বিরোধী চক্র তাঁকে সপরিবার হত্যা করেছিল।
১৫ আগস্টকে বাঙ্গালী জাতির কলঙ্কময় দিন হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদিন জাতির যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে তা কখনো পূরণ হবার নয়।
বিগত ২০০৯ সাল থেকে চলমান বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত আরও বলেন যে, জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে তার রূপকল্প ২০২১ এবং ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতির জনকের সোনার বাংলা অর্জনের লক্ষ্যে দৃঢ়তার সাথে এগিয়ে চলেছে।
তিনি স্বাধীনতা, জাতিগঠনে এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় জাতির পিতার অতুলনীয় ত্যাগ, অবদান, যুগান্তকারী দিক নির্দেশনা দানের জন্য তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। নিজ নিজ অবস্থান থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনে অবদান রাখার জন্য রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের প্রতি আহ্বান জানান।
দিবসটি উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপক পোস্টার দিয়ে দূতাবাস প্রাঙ্গন সজ্জিত করা হয় যা দেখে বিদেশি অতিথিরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন সৃজনশীল প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয় এই আয়োজনে।