অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

বাড়ছে নদনদীর পানি, প্লাবিত হচ্ছে নতুন জনপদ

অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৩:৩৫ পিএম, ১৪ জুলাই ২০২৩ শুক্রবার  

উজান থেকে ধেয়ে আসা পাহাড়ি ঢলে গর্জে উঠেছে তিস্তা। এতে প্লাবিত হয়েছে নীলফামারীর ১৫ গ্রাম। উজানের ঢলে দুধকুমার নদের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করার পর ধরলা নদীর পানিও বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। ফলে কুড়িগ্রামে নদীতীরবর্তী নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বানের পানি। সকাল ৯টায় পাটেশ্বরী পয়েন্টে দুধকুমার নদ বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক নূরুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তিস্তার পানি বাড়তে থাকে এবং সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে গর্জে উঠে তিস্তা। আজ শুক্রবার (১৪ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে তিস্তার পানি ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৪০ সেন্টমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে সকাল ৯টায় পানি কিছুটা কমে ৩২ সেন্টিমিটারে নেমে এসেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।

তিস্তার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ী, খগাখড়িবাড়ী, খালিশা চাপানি, ঝুনাগাছ চাপানি ও গয়াবাড়ী ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি চরের মানুষজনের বসতবাড়িতে পানি উঠেছে বলে জানিয়েছেন ওইসব ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা। গ্রামগুলোর বাসিন্দারা রাত থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে শুরু করেছে বলে জানান জনপ্রতিনিধিরা।

পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল লতীফ খান জানান, তার ইউনিয়নের দুটি গ্রামের প্রায় এক হাজার পরিবারের বাড়িঘরে পানি উঠেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারীর ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আসফাউদ দৌলা জানান, উজানের ঢলে তিস্তার পানি গত দুদিন ধরে হু হু করে বাড়ছে। শুক্রবার সকালে এ মৌসুমের সর্বোচ্চ বিপদসীমা ৪০ সেন্টিমিটার অতিক্রম করে তিস্তার পানি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী সতর্ক রয়েছে বলে তিনি জানান।

পাউবোর পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী ছয় দিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমায় পৌঁছাতে পারে। এতে জেলার উলিপুর ও চিলমারী উপজেলার চরাঞ্চলসহ নদনদী তীরবর্তী এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। তবে পূর্বাভাসের চেয়ে দ্রুততার সঙ্গে সবকটি নদনদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে তীরবর্তী হাজারো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে নৌকায় আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশে বসতবাড়ি ত্যাগ করছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে সদরের পাঁচগাছী, যাত্রাপুর, হলোখানা ও ভোগডাঙা ইউনিয়ন, উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ও সাহেবের আলগা ইউনিয়ন; দুধকুমার অববাহিকার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীরঝাড় ইউনিয়ন, নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ, বল্লভের খাস, নারায়ণপুর, নুনখাওয়া ও বামনডাঙা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করে হাজারো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে প্লাবিত এলাকার পরিধি বাড়ছে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা করছেন নদনদী তীরবর্তী বাসিন্দারা।

শুক্রবার সকালে জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা জানায়, এখনো উপজেলা পর্যায় থেকে ক্ষতির পরিমাণ ও পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা জানা যায়নি। তবে প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলছে। বিকাল নাগাদ প্রতিবেদন পাওয়া যেতে পারে। এর পরই সরকারিভাবে সহায়তা বরাদ্দ ও বিতরণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আহমেদ সাদাত বলেন, ‘উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বেশ কিছু বাড়িঘরে পানিও প্রবেশ করেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘সম্ভাব্য বন্যা মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আমরা প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার মজুদ এবং আশ্রয়কেন্দ্র ও প্রয়োজনীয় নৌকা প্রস্তুত রেখেছি। পশু খাদ্য যেন ঘাটতি না হয় সে প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। সর্বোপরি আমরা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রেখেছি।’

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘নদনদীর পানি বাড়ছে। ধরলা ও দুধকুমার বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি আরও বাড়বে। পূর্বাভাস অনুযায়ী ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে আগামী ১৮-১৯ জুলাই বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে। এতে নিম্লাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এর পর পানি দ্রুত নেমে যাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে।’