স্মার্ট স্কিলস ফর স্মার্ট বাংলাদেশ: কোডার্সট্রাস্টের পাঁচটি নতুন কর্মসূচি ঘোষণা
দেশের প্রয়োজনে কোডার্সট্রাস্ট পাশে থাকে, বললেন শিক্ষামন্ত্রী, পরিবারের অংশ বললেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী
বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০১:৪৬ এএম, ১৫ জুন ২০২৩ বৃহস্পতিবার
স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট দক্ষতা, অমিত উদ্ভাবনের উন্মোচন' এই প্রতিপাদ্যে পাঁচটি নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে কোডার্সট্রাস্ট। আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের জন্য মানসম্মত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ তৈরি করা হবে এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্যই পৃথক পৃথক দক্ষতা অর্জনের সুযোগ তৈরি করছে কোডার্সট্রাস্ট।
বুধবার (১৪ জুন) ঢাকায় জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও কোডার্সট্রাস্টের গ্রাজুয়েট, তাদের অভিভাবক, সরকারি বেসরকারি পর্যায়ের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সামনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, এমপি। আর বিশেষ অতিথি ছিলেন আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। সভাপতিত্ব করেন কোডার্সট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা যুক্তরাষ্ট্রে সফল বাংলাদেশি আইসিটি উদ্যোক্তা আজিজ আহমদ।
জাতীয় উন্নয়নে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায় থেকে নানাবিধ উদ্যোগ নিয়ে আসার জন্য কোডার্সট্রাস্টকে ধন্যবাদ জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, দেশের প্রয়োজনে, শিক্ষাখাতের প্রয়োজনে আমরা কোডার্সট্রাস্টকে সবসময়ে পাশে পাই। আর আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তার বক্তৃতায় কোডার্সট্রাস্টকে সরকারের আইসিটি বিভাগের পরিবারের একটি অংশ হিসাবে উল্লেখ করেন।
দীর্ঘ ১০ বছরের পথ চলায় কোডার্সট্রাস্ট বাংলাদেশে ৭০ হাজার তরুণ তরুণী, ১০ হাজার স্কুল শিক্ষক, সহস্রাধিক নারীকে সরাসরি প্রশিক্ষিত করেছে। এমন বক্তব্য তুলে ধরে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, আইসিটি বিভাগের পক্ষ থেকেও এই সময়ে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে ৫৭ হাজার নারী-পুরুষকে। সেক্ষেত্রে কোডার্সটার্স্ট ফার্স্ট, আইসিটি বিভাগ সেকেন্ড, বলেন জুনাইদ আহমেদ পলক।
আর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে মানসম্পন্ন স্কিল বাংলাদেশে এনে তার প্রয়োগ করছে কোডার্সট্রাস্ট। একটি মেধা ও জ্ঞানভিত্তিক যে সমাজ আমরা গড়ে তুলতে চাই তাতে এই উদ্যোগ সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
অনুষ্ঠানে কোডার্সট্রাস্ট বাংলাদেশের জন্য নতুন যে উদ্যোগগুলো ঘোষণা করে তার অন্যতম হচ্ছে- বাংলাদেশে তরুণ প্রজন্ম তথা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য উপযোগী নেক্সট জেনারেশন স্কিল ডেভেলপমেন্ট কার্যক্রম। যা পরিচালিত হবে বিশ্বখ্যাত আইটি শিক্ষণ প্রতিষ্ঠান সিম্পলিলার্ন'র সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্কের ভিত্তিতে তাদের উচ্চমানসম্পন্ন কোর্সগুলো বাংলাদেশে প্রশিক্ষণার্থীদের কাছে সহজলভ্য করা হবে এই উদ্যোগের মাধ্যমে। এতে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা শিখতে পারবে মেশিন লার্নি, আর্টিফিসিয়াল ইন্টলিজেন্স, ডেভঅপস, সাইবার সিকিউরিটি, বিগ ড্যাটা, ক্লাউড কম্পিউটিং, ব্লকচেইনের মতো আধুনিক সময়োগযোগী কিংবা ভবিষ্যত উপযোগী বিষয়গুলো।
অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয় বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কোডার্সট্রাস্টের অ্যাফিলিয়েশনের কথা। এসংক্রান্ত একটি চুক্তি এরই মধ্যে স্বাক্ষর হয়েছে যার মাধ্যমে কোডার্সট্রাস্ট এখন থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশ নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, কোডার্সট্রাস্ট বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে একটি নতুন প্রজন্মকে আইসিটি দক্ষতায় তৈরি করার কাজ করছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫ লাখ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সফট স্কিল দিতে কোডার্সট্রাস্টের সঙ্গে অ্যাফিলিয়েশনকে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক সঙ্গে কাজ করে আমরা এই শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য গড়ে তুলতে চাই।
কোডার্সট্রাস্ট এখন থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে, আনুষ্ঠানিকভাবে জানান ড. মশিউর রহমান।
এসময় ঘোষণা করা হয় স্টেম এডুকেশন অ্যান্ড কোডিং এর কর্মসূচি। স্কুল শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে বাংলাদেশে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে বাংলাদেশের সহায়ক শক্তি হিসেবে পাশে থাকবে বিশ্বখ্যাত দুটি প্রতিষ্ঠান ডিসকভারি এডুকেশন ও থিম্বল। অনুষ্ঠানে দেওয়া বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডিসকভারি এডুকেশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন ক্রিল বলেন, বাংলাদেশে কোডার্সট্রাস্টের মাধ্যেম আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের যাত্রা শুরু করতে চাই। থিম্বল এর সিইও অস্কার পেড্রোসো বলেন, শিশুদের মধ্যে যারা কৌতুহলী তাদের জন্যই আমাদের সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। চাপ তৈরি করে নয়, তাদের আগ্রহ তৈরি করেই এই বিজ্ঞানমুখী শিক্ষায় এগিয়ে নিতে হবে। বাংলাদেশে একটি অমিত সম্ভাবনার দেশ, এখানে আমরা কোডার্সট্রাস্টের মাধ্যমে কাজ করতে চাই, বলেন অস্কার।
এ সময় বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয় জাতিসংঘের স্থায়ী পর্যবেক্ষক সংস্থা ইউনিভার্সিটি ফর পিস-এর সঙ্গে কোডার্সট্রাস্টের অংশিদারীত্বের কথা যার মাধ্যমে ডিজিটাল যুগে বৈশ্বিক উন্নয়ন ও শান্তির জন্য দেওয়া হবে আইটি প্রশিক্ষণ এবং করা হবে বাংলাদেশের সঙ্গে শিক্ষার্থী বিনিময়। অনুষ্ঠানে ইউনিভার্সিটি ফর পিসের ভাইস রেক্টর অধ্যাপক ড. হুয়ান কার্লোস সেনজ বোরগো ও অ্যাডভাইজার মেলিসা ম্যানিসের ভিডিও বার্তা উপস্থাপন করা হয়। ইউনিভার্সিটি ফর পিস জাতিসংঘের একটি ট্রিটি অরগাইজেশন। চার দশক আগে এই জাতিসংঘে পাশকৃত রেজুলেশনের মধ্য দিয়ে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। যাতে বাংলাদেশও অনুস্বাক্ষরকারী একটি দেশ। কোস্টারিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ক্যাম্পাস থেকে অধ্যাপক হুয়ান ও মেলিসা তাদের বার্তা পাঠান। এবং উল্লেখ করেন কোডার্সট্রাস্টের সঙ্গে এই সহযোগিতার সম্পর্ককে তারা গুরুত্বের সাথে দেখছেন।
পঞ্চম যে কর্মসূচিটি কোডার্সট্রাস্ট এই অনুষ্ঠানে ঘোষণা করেন সেটি হচ্ছে "ন্যাশনওয়াইড" (ন্যাশনওয়াইড ওয়ার্কফোর্স ইনক্লুশন ফর ডিজিটাল এরা) নামের একটি উদ্যোগ। ন্যাশনওয়াইড বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ কর্মশক্তি উন্নয়ন কর্মসূচি, যার মাধ্যমে কোডার্সট্রাস্ট আগামী ৫ বছরে প্রশিক্ষণ দেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাদ্রাসার ১ কোটি শিক্ষার্থীকে, বর্তমানে যাদের ৬৫ থেকে ৭৫ ভাগেরই লেখাপড়া শেষ করে বেকার হয়ে থাকতে হয় শুধুমাত্র চাকুরীক্ষেত্রে প্রত্যাশিত দক্ষতা না থাকার কারণে। কোডার্সট্রাস্টের বিশ্বমানের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা ডিজিটাল যুগের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ কর্মশক্তিতে রূপান্তরিত হবে এবং দেশে, বিদেশে চাকরি কিংবা অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে আর্থিক স্বনির্ভরতা অর্জন সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে আজিজ আহমদ বলেন, আমরা মনে করি অংশিদারীত্ব ও সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা আইসিটি খাতে গুনগত উৎকর্ষে সত্যিকারের প্রভাব রাখতে পারবো। তিনি বলেন, আমদের শিশুদের স্কুল পর্যায় থেকেই আমরা তৈরি করতে চাই।
জাতীয় উন্নয়নের জন্য কর্মশক্তির উন্নয়ন সবচেয়ে জরুরি, এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা তাদের স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় থেকেই দক্ষতার চর্চা করার সুযোগ পায় তাহলে কর্মজগতে প্রবেশের পর তাদের আর পিছিয়ে পড়ে থাকতে হবে না। আজ যে শিশু এলিমেন্টারি স্কুলে যাচ্ছে তাদের ৬৫ শতাংশই যখন কর্মজগতে প্রবেশ করবে তখন তারা যে কাজগুলো করবে সেগুলো এখন এক্সিস্টই করছে না, গবেষণাভিত্তিক এমন তথ্য তুলে ধরে আজিজ আহমদ বলেন, আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হবে, সে কারণে তাদের তৈরি করার সময় এখনই।
রোবটিকস, সায়েন্স, ম্যাথ, টেকনোলজি সবকিছুই তাদের দক্ষতার ভেতরে নিয়ে আসতে হবে। আর সে কারণেই নেক্সট জেনারেসনস স্কিলস নিয়ে আসছে কোডার্সট্রাস্ট, স্কুলগুলোর জন্য সৃষ্টি করছে কোডিং শেখা কিংবা স্টেম এডুকেশন অর্জনের সুযোগ। তিনি বলেন, অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি ডিজিটাল ইনফ্রাস্ট্র্যাকচারের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে ভিন্নতা কিছু নেই। তাই যুক্তরাষ্ট্রে সম্ভব হলে আমরা বাংলাদেশেও তা করে দেখাতে পারবো।
স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের কোডিং ও স্টেম এডুকেশন (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত) বিষয়ক আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে বিশেষ উৎসাহ প্রকাশ করে প্রধান অতিথি বলেন, এমন ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা ও আগ্রহের কথা কোডার্সট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা আজিজ আহমদকে জানিয়েছিলাম, তিনি সত্যিই তা বাস্তবায়ন করছেন। আমার খুব ভালো লাগছে এই ভেবে যে যুক্তরাষ্ট্রে থেকেও আজিজ আহমদ তার শেকড়কে ভুলে যান নি, দেশের তরুণরা যাতে এগিয়ে যেতে পারে সে লক্ষ্যে কাজ করছেন।
ডা. দীপু মনি তার বক্তৃতায় আরও বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক শিক্ষার্থী কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য যে কর্মদক্ষতার প্রয়োজন তারা তা অর্জন করতে পানে না। এজন্য অনেক গ্র্যাজুয়েটরা হতাশ হয়ে পড়ে। এজন্য একজন গ্র্যাজুয়েটকে তার সিলেবাস পড়ানোর পাশাপাশি অন্যান্য ভাষা শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি, আইসিটি এবং উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য যা যা প্রয়োজন তাই শেখানো হবে। কর্মক্ষেত্রের কেউ যেন বলতে না পারে তুমি এটা পার না, ওটা পার না। তার যদি চাকরি না হয় তারপর তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি চাকরি করবেন, নাকি উদ্যোক্তা হবেন।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তার বক্তৃতায় আরও বলেন, স্কুলে শিক্ষার্থীদের আনন্দের সাথে লেখাপড়া করার সুযোগ তৈরি করতে শিক্ষা ব্যবস্থায় গেমিফিকেশন চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। হাসিনাঅ্যান্ডফ্রেন্ডস.জিওভি.বিডি নামের একটি ওয়েবসাইটের কথা তুলে ধরেন তিনি। মেধার সঙ্গে সরকারের পলিসি সাপোর্ট প্রয়োজন যা বাংলাদেশ রয়েছে এমন মন্তব্য করে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, এ অবস্থায় নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। তিনি বলেন, দেশে জব সিকার না হয়ে জব ক্রিয়েটর হতে হবে।
কোলাবেরশেনর গুরুত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, টুগেদার উই ক্যান ডু মাচ। সকলকে নিয়ে আমরা আমাদের অর্জনগুলো নিশ্চিত করতে চাই। নতুন প্রজন্মকে আন্তর্জাতিক দক্ষতায় গড়ে তুলতে চাইলে তা সরকার একা পারবে না। আর সে কারণেই আমরা কোডার্সট্রাস্টের সাথে কাজ করছি। কোডার্সট্রাস্ট এখন আর আলাদা কোনো প্রতিষ্ঠান নয়, আমরা একটি পরিবার হয়ে গেছি।
চট্টগ্রামে কোডার্সট্রাস্ট তার নতুন ক্যাম্পাস খুলেছে এ জন্য সাধুবাদ জানিয়ে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি আশা করি কোডার্সট্রাস্ট এরপর বরিশালে একটি সেন্টার চালু করবে। কোডার্সট্রাস্ট ও হাইটেক পার্ক এক সঙ্গে মিলে একটি সেন্টার পরিচালনার ব্যাপারে আগ্রহ দেখান তিনি।
আরও বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্যসচিব ও কোডার্সট্রাস্টের উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য ড. মো. আবদুল করিম। তিনি বলেন কোডার্সট্রাস্টের দেশের যুব সমাজকে আইটি দক্ষতায় গড়ে তুলতে যে অবদান রেখে চলেছে তা যা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার পথে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ফরেন সার্ভিস কর্মকর্তা জেমস গার্ডিনার বলেন, আজিজ আহমদ বুঝতে পারেন আইসিটি বাংলাদেশের জন্য কতটা জরুরি। আজ বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০টি কোম্পানির মধ্যে ৬টিই আইটি বিষয়ক। টেকনোলজিই স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, কৃষি সবক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কোডার্সট্রাস্ট যে ভবিষ্যতের স্কিল তৈরির জন্য কাজ করছে, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে নিয়ে তা বাংলাদেশের জ্ন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, মন্তব্য গার্ডিনারের।
অনুষ্ঠানে কোডার্সট্রাস্টের দুই সফল গ্রাজুয়েটের গল্প তুলে ধরা হয়। এদের একজন আসিফ হোসেন কোডার্সট্রাস্টের প্রথম ব্যাচের সফল শিক্ষার্থী। এই সময়ের মধ্যে দেড় লক্ষ মার্কিন ডলার আয় করেছেন আপওয়ার্কে ফ্রিল্যান্সিং করে। তিনি তার সাফল্যের গল্প তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, কোডার্সট্রাস্টের পক্ষ থেকে পাওয়া দক্ষতাই আজ তার সাফল্যের পেছনের ইতিহাস।
অপর সফল শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান শাকিল অ্যাকাউন্টিং ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে ফ্রিল্যান্সিং করছেন। ওয়ার্ল্ড টপ রেটেড প্রথম ৭ জনের মধ্যে একজন তিনি। কোডার্সট্রাস্ট থেকে কুইক বুক শিখে এ পর্যন্ত দেড় লাখ ডলার আয় করেছেন এই শাকিল।
সবশেষে কোডার্সট্রাস্টের এমন সফল ১৪ জন গ্রাজুয়েটকে আইকনিক ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড তুলে দেোয়া হয়। এরা হচ্ছেন মোহাম্মদ সোহান সরদার যার আয় ৮০ হাজার ডলার, সিফাত উল্লাহ গ্রাফিক ডিজাইনে ফ্রিল্যান্সিংয়ে তার আয় ১০ হাজার ডলার, আইনুন্নাহার, গ্রাফিক ডিজাইন তার আয় ৫০ হাজার ডলার, খালিদ হাসান ডিজিটাল মার্কেটিংএ যার আয় ৭০ হাজার ডলার, সুলতানা রাবেয়া আয় করছেন ২০ হাজার ডলার, উন্মে সালমা ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে দক্ষতা নিয়ে আয় করেছেন ২০ হাজার ডলার , সোনিয়া তালুকদার ডিজিটাল মার্কেটিং আয় করেছেন ৫০ হাজার ডলার, আসিফ মাহমুদ ওয়েব ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে যার দক্ষতা নিয়ে আয় করেছেন ১৫০,০০০ ডলার , রোকসানা আয় করেছেন ৩০ হাজার ডলার, মুরাদ সজিব ওয়েব ডিজাইনিং থেকে আয় করেছেন ৩০ হাজার ডলার, নুরুন্নাহার পিংকি ওয়েব ডিজাইন থেকে ২০ হাজার ডলার, মেহেদী হাসান শাকিল অ্যাকাউন্টস ম্যানেজমেন্ট থেকে ১৫০,০০০ ডলার, হাসানুজ্জামান কনটেন্ট রাইটিং থেকে আয় করেছেন ৭০ হাজার মার্কিন ডলার।
কোডার্সট্রাস্ট একটি বিশ্ব পর্যায়ের দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা যা বিশ্বের ১৫টি দেশে এরই মধ্যে তার কার্যক্রম বিস্তার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে এর প্রধান কার্যালয়। নতুন নতুন দেশে কোডার্সট্রাস্ট তার কার্যক্রম বিস্তার করছে। বাংলাদেশে কোডার্সট্রাস্ট তার যাত্রা শুরু করে ২০১৪ সালে। এরই মধ্যে এখানে ৭০ হাজার তরুণ ছেলে মেয়েকে আইটি দক্ষতা দিয়ে তাদের বৈশ্বিক বাজার থেকে অর্থ আয় করে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। এছাড়া ১০ হাজার স্কুল শিক্ষককে প্রস্তুত করেছে কিভাবে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। এক সময় ঘর গৃহস্থালীতেই ছিলেন এমন সহাস্রাধিক নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আইটি পেশাদার কিংবা উদ্যোক্তা হতে সহায়তা করেছে কোডার্সট্রাস্ট। পরিবর্তিত বিশ্বে ডিজিটাল স্কিলের চাহিদা ক্রমাহত হারে বাড়ছে। আর বিশ্বটিও ক্রমাগত আরও ডিজিটাল হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় ডিটাল স্কিলই পারবে মানুষকে খাপ খাইয়ে চলার সুযোগ করে দিতে। আর ডিজিটাল স্কিলের ইতিবাচক প্রভাব থাকবে মানুষের জীবনে। কোডার্সট্রাস্ট সেই কাজটিই করছে। তারুণ্যকে লক্ষ্যে রেখেই বিশেষ করে যুবশ্রেণি ও নারীদের ডিজিটাল দক্ষতা দিচ্ছে কোডার্সট্রাস্ট। এই ক্ষেত্রে যারা অপেক্ষাকৃত বঞ্চিত, যারা অবহেলিত, যারা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠি কিংবা যারা বেকার ও যোগ্যতার চেয়েও কম বেতনের কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন তাদেরকে এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আওতায় আনতে সচেষ্ট কোডার্সট্রাস্ট। এরই মধ্যে কোডার্সট্রাস্ট সরকারের ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ভূমিকা রেখে এসেছে। এবং আজ যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছন তা অর্জনে স্মার্ট স্কিলস ই সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে, কোডার্সট্রাস্ট সেটাই মনে করে। আর সে কারণেই এই কর্মসূচিগুলো চালু করা হলো।
কোডার্সট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা আজিজ আহমদ একজন আইটি ভিশনারি হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন ও পুরষ্কারজয়ী আইটি উদ্যোক্তা। তিনি একজন বাংলাদেশি আমেরিকান। আজিজ আহমদ পেশায় ব্যবসায়ী হলেও একজন স্কলার আইটি প্রবক্তা হিসেবে সুপরিচিতি। তথ্য প্রযুক্তি যাতে বিশ্ব মানবতার জন্য কাজে লাগে, মানবতাকে অক্ষুন্ন রেখেই যাতে এই খাত এগিয়ে যেতে পারে সে লক্ষ্যেই তিনি কাজ করেন। প্রযুক্তি যেনো পরিবেশের জন্য ক্ষতির না হয়ে ওঠে সে জন্য তার অব্যহত প্রচেষ্টায় তিনি ভূষিত হয়েছে মর্যাদাকর গ্রিন টেকনোলজি অ্যাওয়ার্ডে। আইটি এই মানবিক দিকগুলো তুলে ধরার জন্য তার ডাক পড়ে ভ্যাটিকান সিটিতে পোপের দফতরে, বক্তব্য রাখেন ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে কিংবা ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে। এসব ফোরামে আজিজ আহমন কাজের ভবিষ্যতের নানা দিক তুলে ধরেন। আইটির উৎকর্ষের সাথে সাথে আমরা যাতে বিশ্ব শান্তির কথা ভুলে না যাই সে লক্ষ্যে তিনি সম্প্রতি বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘ সদরদফতরে ইউনিভার্সিটি ফর পিস আয়োজিত সেমিনারে। যুক্তরাষ্ট্রে আইটি খাতে তার রয়েছে আরও একাধিক ব্যবসায়ী উদ্যোগ।