অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

টায়ার থেকে তেল

শেখ আনোয়ার

প্রকাশিত: ১০:৫০ এএম, ৪ ডিসেম্বর ২০২০ শুক্রবার   আপডেট: ১২:০০ পিএম, ৪ ডিসেম্বর ২০২০ শুক্রবার

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর নষ্ট হয় ২৫ কোটি গাড়ির টায়ার। তাহলে গোটা পৃথিবীতে পরিত্যক্ত টায়ারের সংখ্যা কত? এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেয়ে বরং ভাবা যাক, নষ্ট হয়ে যাওয়া এতো রাবারের টায়ার কিভাবে কাজে লাগানো যায়। অনেক গবেষক-বিজ্ঞানী এর আগে চেষ্টা করেছেন এসব টায়ার থেকে নতুন কিছু তৈরি করা যায় কীনা? সাফল্যও পেয়েছেন কিছু। যেমন রাস্তা তৈরির জন্য ব্যবহৃত অ্যাসফল্ট পাওয়া গেছে পরিত্যক্ত রাবার রাসায়নিকভাবে পরিবর্তিত করে।
 
সম্প্রতি কার্ক ম্যানফ্রেডির আবিষ্কার আগের সব সাফল্যকে ছাড়িয়ে গেছে। ম্যানফ্রেডি নর্দার্ন আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নবিদ। নষ্ট রাবার টায়ারের স্তুপ থেকে তিনি বের করেছেন লেমন অয়েল। আসলে ম্যানফ্রেডি কৃত্রিমভাবে তৈরি করেছেন লিমোনিন নামক একটা রাসায়নিক পদার্থ। যা লেবু ও লেবু জাতীয় ফলের তেলের প্রধান উপাদান। লেমন অয়েল বা লিমোনিন তৈরি করতে ম্যানফ্রেডি ব্যবহার করেন একটা বায়ুহীন পারমাণবিক চুলি। যার তাপমাত্র ৭২৫ ডিগ্রি সে:।
 
এরপর টায়ারের টুকরোগুলো ফেলে দেন ওই পারমাণবিক চুলিতে। ফলস্বরূপ একটা ঘন গাঢ় তেল বেরিয়ে আসে। তার মধ্যে থাকে পলি আইসোপ্রিন নামক একটা রাসায়নিক উপাদান। তারপর ম্যানফ্রেডি পলি আইসোপ্রিনকে উত্তপ্ত ও বাষ্পীভূত করতে থাকেন। ফলে ওই পলি আইসোপ্রিন ভেঙে যায় আলাদা আলাদা অণুতে। বাষ্পীভূত আইসোপ্রিন আর জটিল দীর্ঘ পলি আইসোপ্রিন শৃঙ্খলনে রূপান্তরিত হতে চায় না। তখন তাদের মধ্যে একটা প্রবণতা দেখা যায়। তারা পরস্পর মুক্ত হয়ে তৈরি করে সরল যৌগ লিমোনিন। বিজ্ঞানী লক্ষ্য করেন, পরীক্ষা শেষে যে যৌগটা তৈরি হয় তার সঙ্গে লেবু থেকে পাওয়া তেলের রাসায়নিক গঠনের রয়েছে হুবহু মিল। বিজ্ঞানী যে পরিমাণ টায়ার ব্যবহার করেন তার মাত্র ২০ শতাংশ পাচ্ছেন লিমোনিন। বিজ্ঞানী ম্যানফ্রেডি মনে করেন,তাঁর আবিষ্কৃত পদ্ধতিতে খানিকটা অদল-বদল করলে আরও বেশি ফল পাওয়া যাবে। তাঁর এই পদ্ধতিতে তাপমাত্রা ও চাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সমান গুরুত্বপূর্ণ টায়ারের আয়তনও। 

টায়ারের টুকরো যদি বড় হয় তবে সেই রাবারের গ্যাসীয় অবস্থায় যেতে অনেক বেশি সময় লাগে। ম্যানফ্রেডির আশা, শেষ পর্যন্ত ব্যবহৃত টায়ারের ওজনের ৫০ শতাংশ লিমোনিন পাওয়া যাবে তাঁর পদ্ধতিতে। লিমোনিন ব্যবহার করা রাস্তার গুণগত মানও দেখেছেন বিজ্ঞানী। তার মতে, এখন যে লিমোনিন পাওয়া যাচ্ছে তার গন্ধ খুব একটা ভালো নয়। 

ম্যানফ্রেডি এখন কাজ করছেন লিমোনিন পরিশুদ্ধির বিষয়ে। পরিশুদ্ধকরণের প্রক্রিয়া ঠিক ঠিক ভাবে কার্যকর হলে লিমোনিন ব্যবহার করা যাবে সাবান ও ক্লিনারে। এমনকি সোডাড্রিংকস-এর বোতলেও ছড়িয়ে দেয়া যাবে লেবুর গন্ধ। এখানেই শেষ নয়। ম্যানফ্রেডি টায়ার থেকে বের করতে চান আরও কিছু তেলের নির্যাস। যা ব্যবহার করা যাবে ছারপোকা দূর করা, মোমবাতি, চুইংগাম এবং মাউথওয়াশে। 

শেখ আনোয়ার: বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।