অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

সুনীল অর্থনীতি, এমপিডিপি হবে ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ প্রযুক্তির!

বিশেষ সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ১০:১৮ এএম, ৩ ডিসেম্বর ২০২০ বৃহস্পতিবার   আপডেট: ০৫:৫১ পিএম, ৪ ডিসেম্বর ২০২০ শুক্রবার

মাতারবাড়ি

মাতারবাড়ি

মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প (এমপিডিপি) গ্রহণ এখন চূড়ান্ত প্রায়। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেরশন এজেন্সি- জাইকা এই প্রকল্পে ২৫.৪ বিলিয়ন ডলার দিতে সম্মত হয়েছে। আর নিপ্পন কোয়েই জয়েন্ট ভেঞ্চার নামে জাপানি পরামর্শক কোম্পানি এই প্রকল্পে প্রকৌশল সহায়তা দেওয়ার সংক্ষিপ্ত তালিকায় রয়েছে। প্রত্যাশা করা হচ্ছে ২০২৬ সাল এমপিডিপি'র কাজ শেষ হয়ে বন্দরটি ব্যবহারের জন্য সচল হবে। যাতে ৮,৫০০ টিইইউর একেকটি পোস্ট পানাম্যাক্স জাহাজ ভেড়ানোর সক্ষমতা থাকবে।

আন্তুর্জাতিকভাবে পানামা খাল দিয়ে যে জাহাজগুলো চলাচল করে সেগুলো পানামাক্স ভেসেল নামে পরিচিতি। কিন্তু যেসব জাহাজ পানামা খাল ধারণ করতে পারেনা সেগুলো পোস্ট-পানামাক্স বা ওভার পানামাক্স জাহাজ। সে হিসেবে বৃহদাকায় সব জাহাজ ভেড়ানোর সক্ষমতা নিয়েই তৈরি হচ্ছে এই মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দর। বছরে ২৮ লাখ টিইইউ (২০ ফুটের সমান কন্টেইনার ইউনিট) হ্যান্ডলিং সক্ষমতা থাকবে এই বন্দরের।

আরও পড়ুন: বন্দরের ব্যাপ্তি বাড়ছে বাংলাদেশে, পাঁচ প্রকল্প পাইপলাইনে

বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথা বেল্ট "বিগ-বি" কনসেপ্ট সামনে রেখে এই এমপিডিপি এগিয়ে নিচ্ছে বাংলাদেশ। প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১৪ সালে। এখন দ্রুত গতিতেই তার কাজ এগুচ্ছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ তথা বঙ্গোপসাগরের জন্য দুটি অর্জন অপেক্ষা করছে-

এক.  বিভিন্ন বৈদেশিক বন্দর থেকে পণ্য রপ্তানি-আমদানিতে বাংলাদেশের ফিডার-ভেসেলের ওপর যে নির্ভরতা রয়েছে তা কমে আসবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কনটেইনার ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য বাংলাদেশকে এখন সিঙ্গাপুর, শ্রিলংকা ও মালয়েশিয়ার বন্দরগুলোর ওপর নির্ভর করতে হয়। গভীর সমুদ্রে এই বন্দর নির্মিত হলে সে নির্ভরতাই কমবে।

দুই. বঙ্গোপসাগরে স্বল্পপাল্লার জাহাজগুলোর জন্য একটি বড় সুবিধা হয়ে দেখা দেবে এই বন্দর। বাংলাদেশ ভাবছে এটি সমুদ্রপথে আঞ্চলিক যোগাযোগের একটি হাব হয়ে উঠবে। আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের পোর্ট ব্লেয়ার ও ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রার আচেহ বন্দর এখন এই বাণিজ্যের অধিকাংশ সুবিধা নিয়ে নিচ্ছে।

বঙ্গোপসাগর থেকে সুনীল অর্থনীতির ফসল ঘরে তুলতে এই এমপিডিপি বড় ভূমিকা রাখবে বলেও ধারনা করা হচ্ছে। ধরেই নেওয়া হচ্ছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত হবে এই পোর্ট। বিশ্বে এখন 'স্মার্ট পোর্ট' কনসেপ্টটি সবচেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেবলমাত্র এই স্মার্ট পোর্টগুলোই টিকে থাকবে, কারণ এগুলো এখন তৈরি হচ্ছে ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ প্রযুক্তির সমন্বয়ে। যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং, ব্লক চেইনিং, বিগ ড্যাটা, অটোনোমাস সিস্টেম আইসিটি দুনিয়ার এসব বিষয়কে সমন্বিত করা হচ্ছে। এতে মেরিটাইম কানেক্টিভিটির ইকো-সিস্টেমে ঢুকে থাকবে বন্দরগুলো। 

বাংলাদেশ এখন যেসব বন্দরের সঙ্গে কনটেইনার ট্রেড করছে, তার অন্যতম সিঙ্গাপুর পোর্ট। যেটি অত্যাধুনিক ও ডিজিটাইজড। শ্রিলংকার কলম্বো বন্দরও একই উদ্যোগ নিয়ে এগুচ্ছে। সুতরাং নতুন বন্দর হিসেবে এমপিডিপি তার অপারেশন সিস্টেমে ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ প্রযুক্তি যুক্ত করবে সেটাই প্রত্যাশিত। 

সমুদ্রে সুনীল অর্থনীতির উন্নয়নে প্রযুক্তির একটা বড় ভূমিকা থাকবে সে কথা এখন বিশেষজ্ঞরা বলছেন। বাংলাদেশ সরকার ব্লু ইকোনমি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে রেখেছে। এখন প্রকল্পে ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ প্রযুক্তি করা হলে তা বঙ্গোপসাগর থেকে প্রত্যাশিত ফল আনতে সহায়ক হবে।