শম্পার পাশে শেখ হাসিনা, পরিবারটির অসহায়ত্ব ঘুচলো যেভাবে
শওকত জামান, জামালপুর থেকে
প্রকাশিত: ০৭:২৯ পিএম, ২ ডিসেম্বর ২০২০ বুধবার আপডেট: ০৫:৫২ পিএম, ৪ ডিসেম্বর ২০২০ শুক্রবার
ভ্যান চালক শিশু শম্পা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বদলে গেল অসহায় পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে নেয়া ভ্যানচালক শিশু শম্পার জীবনের গল্প। এখন আর শম্পাকে ভ্যান চালিয়ে পরিবারের ভরনপোষণ ও বাবার চিকিৎসার খরচ যোগাতে হবেনা। লেখাপড়া করে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে জীবন সংগ্রামী এই শিশু। সে স্বপ্ন তাকে দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি নিজেই তুলে নিয়েছেন সম্পার পরিবারের দায়িত্ব। এতে ঘুচে গেল সম্পার পরিবারের অভাব অনটন।
শম্পার বাবা শরিফুল ইসলামের চিকিৎসার খরচ বহন, নতুন ঘর নির্মান, শম্পার লেখাপড়ার খরচ ও তাদের নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার শুরু হয়েছে শম্পার পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি দেয়া ঘর নির্মাণের কাজ। জেলা প্রশাসক মো. এনামুল হক এই ঘর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন।
নির্মাণ কাজ উদ্বোধনের পর সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গু শম্পার বাবা শরিফুল ইসলামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য এ্যাম্বুলেন্সযোগে রাজধানী ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা নেয় জেলা প্রশাসন। এখন শম্পা ও তার পরিবার ঢাকায় অবস্থান করছে।
শরিফুল ইসলামের মেয়ে শম্পা খাতুন জামালপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের নাকাটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্রী । ৫ বছর আগে জামালপুর শহর থেকে বাড়ি ফেরার সময় সড়ক দূর্ঘটনায় ডান পা ভেঙ্গে যায় শম্পার বাবা শরিফুলের। প্রথমে জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল এবং পরে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৭ লাখ টাকা খরচ করে চিকিৎসার পরেও ভালো হয়নি শরিফুল ইসলামের ডান পা। এরপর থেকেই সবসময় বিছানায় থাকতে হয় শরিফুল ইসলামকে। সবজি বিক্রি করে সংসারের হাল ধরেন শম্পার মা নেবুজা বেগম। সেই উপার্জনেও যখন সংসার চলে না তখন বাবার ঔষধের টাকা সংগ্রহ করার জন্য দেড় বছর আগে ভ্যান চালানো শুরু করে শম্পা।
‘বাবার চিকিৎসার জন্য ভ্যান চালায় শিশু শম্পা’ শিরোনামে প্রকাশিত হয় সংবাদ। যা নজরে পড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। এরপর যা ঘটেছে তা এখন সকলের জানা।
জামালপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে গত সোমবার সকালে তিনি শম্পা ও তার পরিবারের খোঁজ নিতে সরেজমিনে যান। ওইদিনই জেলা প্রশাসক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠান। এরপর প্রধামন্ত্রীর নির্দেশে জেলা প্রশাসক বুধবার সকালে আবারও শম্পার বাড়িতে যান। তিনি শম্পার বাবাকে একটি এ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে পাঠান।
এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শম্পার পরিবারকে একটি পাকা ঘর তৈরি করে দেয়া হচ্ছে। পাকা ঘরের নির্মাণ কাজও সকালেই উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক।
মোহাম্মদ এনামুল হক জানান, শিশু শম্পার লেখাপড়াসহ পরিবারটিকে স্বাবলম্বী করতে যা যা প্রয়োজন তাই করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদা ইয়াসমিনও উপস্থিত ছিলেন।
চিকিৎসাসহ পরিবারটির পুরো দায়িত্ব গ্রহণ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনা করেন এর সদস্যরা। অসহায় সেই পরিবারটি এখন আনন্দে আত্মহারা।
১০ বছর বয়সের শম্পা খাতুন সদর উপজেলার নাকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। শফিকুল ইসলাম ওরফে ভাসানীর দুই মেয়ের মধ্যে শম্পা ছোট। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে কয়েক বছর আগে।