ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তর নিয়ে অবগত জাতিসংঘ, হালনাগাদ তথ্য চায়
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: ০৬:২৬ পিএম, ২ ডিসেম্বর ২০২০ বুধবার আপডেট: ০৫:৫১ পিএম, ৪ ডিসেম্বর ২০২০ শুক্রবার
বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর বিষয়ে প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পর্কে অবহিত রয়েছে জাতিসংঘ। তবে এ বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য জানতে চায় সংস্থাটি। ঢাকায় বুধবার (২ ডিসেম্বর) জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর দপ্তর থেকে এ সংক্রান্ত একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে-
সামনে কিছুদিনের মধ্যে রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে বঙ্গোপসাগরের ভাসানচরে স্থানান্তরের কাজ বাংলাদেশ সরকার এরই মধ্যে শুরু করছে। এই কাজটি প্রাথমিক পর্যায়ে শুরু হবে। বিষয়টি সম্পর্কে জাতিসংঘ অবগত। তবে, বরাবরের আহ্বান হলো প্রাসঙ্গিক ও হালনাগাদ তথ্যের ওপর রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই বিষয়ে এখনো গুরুত্ব দিচ্ছে জাতিসংঘ।
বাংলাদেশ সরকার এর আগে জাতিসংঘকে জানিয়েছে, ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তর স্বেচ্ছানির্ভর একটি বিষয়। অর্থাৎ যেসব রোহিঙ্গা নিজে থেকে ভাসানচরে যেতে চাইবেন তাদেরকেই নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে তাদের স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। দ্বীপে চলাচলের স্বাধীনতাসহ সব মৌলিক অধিকার ও সেবা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ গুরুত্বারোপ করেছে।
বিভিন্ন খবর বলছে আগামী সপ্তাহ নাগাদ প্রথম দফায় উদ্বাস্তুদের একটি দলের চরটিতে যাওয়ার কথা রয়েছে।
নিজেদের দেশে এখনও ফিরতে না পারা রোহিঙ্গারা এখন শিবিরের জনাকীর্ণ পরিবেশ থেকে নতুন চরে গিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে আগ্রহী এমনটাই বলা হচ্ছে খবরে। আর সূত্রগুলো বলছে, এমন ইচ্ছা পোষণ করা রোহিঙ্গাদের পাল্লা ক্রমশ ভারী হচ্ছে।
ভাসানচরের প্রস্তুতি-
১৪ থেকে ১৫ হাজার শ্রমিকের ২ বছরের পরিশ্রমে নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচর রোহিঙ্গাদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র। জেলার রামগতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রবর্তিত গুচ্ছগ্রাম ধারণা থেকেই এই আশ্রয় কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের অস্থায়ী আবাসন গড়তে পরিবেশবান্ধব টেকসই উন্নয়ন মডেল ব্যবহার করা হবে।
১২০টি ক্লাস্টার গ্রাম নিয়ে তৈরি ভাসান চর ১ লাখ রোহিঙ্গার আবাসনের জন্য প্রস্তুত। বিদ্যুৎ ও সোলার প্যানেল, বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট এবং মোবাইল ফোনের টাওয়ারসহ ভবনগুলো যে কাউকে অবাক করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। বাড়িগুলো মাটির চার ফুট উপরে কংক্রিটের ব্লক দিয়ে তৈরি। পুরো আবাসন সাইটটির নিরাপত্তায় রয়েছে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বন্যা সুরক্ষা বাঁধ। এছাড়াও রয়েছে চারটি কমিউনিটি ক্লিনিক, দুটি ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল, দুটি স্কুল ও তিনটি মসজিদ।
জাতিসংঘ নির্ধারিত আকারেরও বড় মাথা গোঁজার ঠাঁই এই দ্বীপ। সৌরবিদ্যুৎ জোগাবে আলো আর পানি। রান্নায় সাশ্রয়ী আর পরিবেশবান্ধব চুলা। শিশুদের জন্য স্কুল, খেলার মাঠ। কক্সবাজারের ক্যাম্পের তুলনায় এমন অন্তত ১৬টির বেশি সুবিধা নিয়ে ১ লাখ রোহিঙ্গা শরনার্থীর জন্য অপেক্ষা করছে ভাসানচর।
ভাসানচর আশ্রয়ন প্রকল্প কর্তৃপক্ষ কক্সবাজার ও ভাসানচরের তুলনা করলে- এখন রোহিঙ্গারা থাকছেন তাবুতে বা বাঁশের তৈরি কাঁচা ঘরে। আর ভাসানচরে প্রস্তুত, ১২০টি ক্লাস্টার বা গুচ্ছগ্রাম। যার প্রতিটিতে থাকছে ১২টি করে বাড়ি। প্রতিটিতে ১৬টি করে কক্ষ। প্রতিটি কক্ষ বরাদ্দ পাবে চার সদস্যের একটি পরিবার। সাবমার্সিবল পাম্প, ১৩০টি পুকুর ও ২টি লেক থাকায় পানি হাতের নাগালেই। ডিজেল জেনারেটর আর সৌরবিদ্যুতে সবসময় মিলবে আলো। কক্সবাজারে এমন কোন অবকাঠামো নেই।