অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

গরমে তাপজনিত অবসন্নতা বাড়ছে, করণীয় কি

অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:০৪ এএম, ১৮ এপ্রিল ২০২৩ মঙ্গলবার  

ঢাকার তাপমাত্রা এখন প্রতিদিন গড়ে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠছে। চলতি সপ্তাহে রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অনেক জেলায় তাপমাত্রা সর্বকালের রেকর্ড ভেঙে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠে যেতে পারে। এমনটাই আশঙ্কা আবহাওয়া অধিদপ্তরের। এই দাবদাহে দিনের পর দিন বাইরে অবস্থান এবং কাজ করায় অনেকে তাপজনিত অবসন্নতার শিকার হচ্ছেন। পাশাপাশি ‘হিট স্ট্রোক’ অর্থাৎ শরীর তাপ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলার ঝুঁকি বাড়ছে। বয়স্ক, অতিরিক্ত শুকনো বা স্থূল, শিশু, গর্ভবতী ও যাদের উচ্চরক্তচাপ আছে, তারা তাপজনিত অবসন্নতা ছাড়াও হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা চলমান দাবদাহজনিত অতিরিক্ত গরমে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন।

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা যুগান্তরকে বলছেন, মানুষের শরীর খুব তাপমাত্রা স্পর্শকাতর। গরমে বেশিক্ষণ বাইরে থাকার কারণে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। গরম বাড়তে থাকলে দেহ বিভিন্নভাবে তাপমাত্রা কমাতে কাজ শুরু করে। শরীর ঘাম তৈরি করে। যখন ত্বকের উপরিভাগ থেকে ঘাম বাষ্পীভূত হয়ে শুকায়, তখন শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে আনে। তবে এই ঘামের মাধ্যমে তাপমাত্রা কমানোর একটি সীমাবদ্ধতা আছে। এক্ষেত্রে ঘামজনিত কারণে শরীরের স্যাঁতসেঁতে ভাব যদি ৭৫ শতাংশের বেশি হয়, তাহলে এই পদ্ধতি খুব একটা কাজ করে না। তাপজনিত অবসন্নতায় ওই ব্যক্তি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন।

ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের (অস্টিন) মেডিসিন পালমোনারি ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিভাগের অধ্যাপক রুমি আহমেদ খান বলেন, কয়েকদিন ধরে অতিরিক্ত গরমে ঘামজনিত কারণে ঢাকার মানুষের শরীরের স্যাঁতসেঁতে ভাব ৭৮ শতাংশের মতো হচ্ছে। এর ফলে প্রথম ধাপে ‘হিট ক্রাম্প’ অর্থাৎ অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীরে লবণ ও পানির অভাব দেখা দিচ্ছে। এর প্রভাবে বিশেষ করে পায়ের পেশিতে কামড়ানো শুরু করে। তাছাড়া তাপজনিত অবসন্নতাও হচ্ছে। 

তাপজনিত অবসন্নতার লক্ষণগুলো হলো-অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, দুর্বলতা, মাথা ধরা, মাথাব্যথা, বমিবমি ভাব, মূর্ছা যাওয়ার ভাব হওয়া। তাপজনিত অবসন্নতা কি না, নিশ্চিত হওয়ার জন্য থার্মোমিটার দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা মেপে দেখতে হবে। অবসন্নতার একপর্যায়ে শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃৎকম্প দ্রুত হতে শুরু করে। একদিনের তাপের কারণে শুধু নয়, অনেকদিনের সামষ্টিক কারণেও হতে পারে তাপজনিত অবসন্নতা। যেমন কেউ টানা তিন-চার দিন দুই-তিন ঘণ্টা করে বাইরে গরমে অবস্থান করলেন। পঞ্চম দিনে তাপজনিত অবসন্নতার উপসর্গ দেখা দিতে পারে। ট্রাফিক পুলিশ, আনসার সদস্য, দিনমজুর, কৃষক, নির্মাণ শ্রমিক, রিকশাচালক, বয়স্ক, যারা অতিরিক্ত শুকনা বা স্থূল, শিশু, গর্ভবতী এবং যাদের উচ্চরক্তচাপ আছে তাদের এই সমস্যা বেশি হতে পারে।

সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মারুফা রহমান যুগান্তরকে বলেন, কারও তাপজনিত অবসন্নতা তৈরি হলে প্রথমে তাকে ছায়াশীতল জায়গায় নিয়ে আসতে হবে। পানি বা তরল খাবার পান করাতে হবে। এক্ষেত্রে ওরস্যালাইন সবচেয়ে ভালো। আশপাশে পুকুর থাকলে গলা পর্যন্ত পানিতে নামিয়ে দিতে হবে। পুকুর না থাকলে বাথটাবে শুইয়ে দেওয়া এবং পানির মধ্যে কিছু বরফ ঢেলে দেওয়া যেতে পারে। এই ব্যবস্থা না থাকলে রোগীকে ঠান্ডা পানিতে গোসল করিয়ে দিতে হবে। তারপর টেবিল ফ্যান দিয়ে শরীর শুকিয়ে দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, ঠান্ডা পানির ‘রিহাইড্রেশন’ খুব জরুরি। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, শুধু অতিরিক্ত পানি পান করা ক্ষতিকর হতে পারে। এজন্য ওরস্যালাইন উপকারী।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফজলে রাব্বি চৌধুরী বলেন, তাপজনিত অবসন্নতা ঠিকমতো শনাক্ত করা না গেলে এবং যথাসময়ে চিকিৎসা করা না গেলে হিট স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। যদি দেখা যায়-রোগীর ত্বক শুকনা লাল হয়ে গেছে, ঘাম হচ্ছে না, পালস ‘হাই’ হয়ে গেছে, রোগী উলটাপালটা কথা বলছে, কোনো কথা বলছে না অথবা অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে; তখন হিট স্ট্রোক সন্দেহ করতে হবে। এর পরের ধাপে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ বিকল হওয়া শুরু করতে পারে। প্রথমে মস্তিষ্কের নিউরোনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এরপর লিভার ও রক্তনালির কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রোগী এই অবস্থায় পৌঁছে গেলে যত দ্রুত সম্ভব আইসিইউ সেবা দিতে হবে। তবে রোগীকে দূরের হাসপাতালে পাঠানোর নামে আরও কয়েক ঘণ্টা গরমের মধ্যে ঠেলে দেওয়া ঠিক হবে না।

চিকিৎসকরা আরও বলেন, মনে রাখতে হবে, চলমান তাপপ্রবাহে কেউ যাতে তাপজনিত অবসন্নতা পর্যায়ে না যায়। ঘরের বাইরে যেতে হলে সঙ্গে ঠান্ডা পানির ফ্লাস্ক বা বোতল রাখতে হবে। কিছুক্ষণ পরপর পানি পান করতে হবে। শিশু যারা বাইরে বা স্কুলে যায়, মাঠে দৌড়াদৌড়ি করে, তাদের স্কুলে না পাঠানোই ভালো। হালকা-পাতলা ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে। রান্নাঘরে পর্যাপ্ত বাতাস প্রবাহিত হওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে।