অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

চট্টগ্রামে করোনার সংক্রমণের সাথে বাড়ছে মাস্কের দাম

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১০:৪১ এএম, ২ ডিসেম্বর ২০২০ বুধবার   আপডেট: ০৩:০৫ পিএম, ২ ডিসেম্বর ২০২০ বুধবার

করোনার প্রকোপ বাড়তে শুরু করায় মাস্ক পরা নিশ্চিতে কঠোর অবস্থানে সরকার। মাস্ক ছাড়া সেবাও মিলছে না সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা। তাই মাস্ক পড়তে বাধ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ফলে মাস্কের ব্যবহার ও চাহিদা দুটোই সমানতালে বেড়েছে। 

একই সাথে নভেম্বর মাস থেকে চট্টগ্রামে করোনার সংক্রমণ উর্ধ্বমুখী। এমন যখন পরিস্থিতি, ঠিক তখনই ফের বাড়তে শুরু করেছে মাস্কের দাম। বিশেষ করে সার্জিক্যাল মাস্ক। ব্যবহারের সুবিধার কারণে এ মাস্কের চাহিদাও বেশি। তবে দাম বাড়লেও, তা এখনো সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। যদিও ক্রেতাদের আশঙ্কা, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ পুরোদমে শুরু হলে, মাস্কের দাম আরো বাড়বে। 

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে চট্টগ্রামের মাস্কের সর্ববৃহৎ পাইকারী ও খুচরা বাজার গোলাম রসূল মার্কেটে এমন চিত্র দেখা যায়। এখানে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি চলে বেচাকেনা। নগর ও উপজেলার খুচরা ব্যবসায়ীরা এখান থেকেই মাস্ক কেনেন। কেবল মাস্ক নয় করোনার সকল সুরক্ষা সামগ্রী পাইকারী দামে মেলে এখানে। 

চাহিদা বেশি সার্জিক্যাল মাস্কের 
পাইকারী দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, সার্জিক্যাল মাস্কের চাহিদা বেশি। বেচা বিক্রিও ভালো। মান অনুযায়ী এসব মাস্কেও রয়েছে ভিন্নতা। এখানকার ব্যবসায়ীরা জানান, লেয়ার অনুযায়ী দুই ধরনের সার্জিক্যাল মাস্ক রয়েছে বাজারে। একটি টু লেয়ার ও অন্যটি থ্রি লেয়ার। এছাড়া চায়না ও দেশি গেটওয়েল ব্র্যান্ডের উন্নতমানের সার্জিক্যাল মাস্কও রয়েছে। সংক্রমণ বাড়ায় দামও বেড়েছে এসব মাস্কের। বর্তমানে টু লেয়ারের মাস্কের ৫০ পিসের প্রতি বক্স পাইকারিতে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা অক্টোবরেও বিক্রি হয়েছিল ৭০ টাকায়। 
থ্রি লেয়ারের ৫০ পিসের প্রতি বক্স  ৩০ টাকা বেড়ে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর গেটওয়েল মাস্ক প্রতি বক্স ২৮০ টাকা।

বাজারে এসব সার্জিক্যাল মাস্ক ছাড়াও কাপড়ের তৈরি মাস্কও বিক্রি করতে দেখা গেছে। ধুয়ে ব্যবহারের সুবিধা থাকায় এসবেও ক্রেতাদের আগ্রহ আছে। মাস্ক কিনতে আসা মাসুদ আলম নামে এক খুচরা ব্যবসায়ী অপরাজেয় বাংলা কে জানান, মাস্ক পরা নিয়ে কড়াকড়ি থাকায় মাস্কের বিক্রি বেড়েছে। কাপড়ের মাস্কের চেয়ে দাম কম হওয়ায় সার্জিক্যাল মাস্কের চাহিদা বেশি। তবে তরুণ-তরুণীদের আগ্রহ বেশি কাপড়ের মাস্কে। ডিজাইনে বৈচিত্র্য থাকায় এসব মাস্কেরও বেচা বিক্রি ভালো। 

করোনা মহামারীর শুরু থেকে এখন পর্যন্ত লাখের অধিক মাস্ক বিক্রি করেছেন মিজানুর রহমান। সিফাত ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী এ ব্যবসায়ী অপরাজেয় বাংলা কে জানান, গত কয়েকমাস মাস্কের বাজার ভাটা ছিল। নভেম্বর মাস থেকে ফের বেচা বিক্রি বেড়েছে। তবে দামও বেড়েছে কিছুটা। 

সংক্রমণ বাড়ছে, তাই দাম বাড়ানো হয়েছে  কি না- এমন প্রশ্নে এ ব্যবসায়ী জানান, মোটেও এমন নয়। ৪ মাস আগে ৫০ পিসের প্রতি বক্স সার্জিক্যাল মাস্ক বিক্রি হতো ৩৫০-৪০০ টাকায়। বর্তমানে তা অর্ধেকের চেয়েও কম। চাহিদার চেয়ে মাস্ক সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় অনেক ব্যবসায়ীর লোকসান হয়। এখন দাম কিছুটা বাড়ায় সে ক্ষতিটা কিছুটা পুষিয়ে নেয়া সম্ভব। 

চাহিদা নেই কেএন-৯৫ মাস্কের
করোনা মহামারির শুরুর দিকে বাজারে সার্জিক্যাল মাস্কের পাশাপাশি দেদারসে বিক্রি হয় চায়নার কেএন-৯৫ মাস্ক। সার্জিক্যাল মাস্কের চেয়ে মান কিছুটা ভালো হওয়ায় এটির চাহিদাও ছিল ব্যাপক। অলিতে গলিতে এমনকি অনলাইনেও বিক্রি হয় এসব মাস্ক। চার মাস আগেও এসব মাস্ক প্রতিটি ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হতো। তবে এখন এসব মাস্কের চাহিদা একেবারেই নেই বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের পাইকারী মাস্ক ব্যবসায়ীরা। ফলে বর্তমানে পাইকারিতে ১৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে কেএন-৯৫ মাস্ক। 

লোকসানে বিক্রি হচ্ছে থ্রি এম এন-৯৫ মাস্ক
বলা হয়ে থাকে করোনা ভাইরাস থেকে অধিক সুরক্ষা দেয় আমেরিকায় তৈরি 'থ্রি এম' এন-৯৫ মাস্ক। দামও বেশি এই মাস্কের। মূলত করোনা চিকিৎসায় নিযুক্ত স্বাস্থ্যকর্মীরা এসব মাস্ক ব্যবহার করে থাকেন। তবে বর্তমানে তারাও এসব মাস্ক খুব একটা ব্যবহার করছেন না। ফলে চাহিদার তলানিতে দামী এ মাস্ক। ৯০০ টাকায় বিক্রি হওয়া এসব মাস্ক এখন বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২০০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, লোকসানেই বিক্রি করতে হচ্ছে এসব মাস্ক। এসব মাস্ক অবিক্রিত থাকলে পরে এ দামেও বিক্রি করা যাবে না। তাই যা লোকসান হলেও কিছু টাকা পাওয়া যাবে এ আশায় বিক্রি করছেন। 

চশমা, ফিস শিল্ড, গ্লাভসের চাহিদায় ভাটা
করোনার সংক্রমণে মাস্কের দাম কিছুটা বাড়লেও, দাম পড়তির দিকে সেফটি চশমা, ফেস শিল্ড আর গ্লাভসের। চাহিদা কমে যাওয়ায় লোকসান দিয়ে এসব সুরক্ষা সামগ্রী বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। ফেস শিল্ড বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৬৫ টাকায়, চশমা ৮০ টাকায় আর সার্জিক্যাল গ্লাভস বিক্রি হচ্ছে ১০০ পিস ৪৫০ টাকায়। তবে স্বাভাবিক দামেই বিক্রি করতে দেখা গেছে হ্যান্ড রাব ও স্যানিটাইজার। 

চায়না নয়, 'মেইড ইন মিটফোর্ড মাস্ক'
এদিকে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সার্জিক্যাল মাস্ক বস্তায় থরে থরে সাজানো। যেগুলো পরে ৫০ পিস করে রকমারি ব্র্যান্ডের বক্সে প্যাকেট করা হচ্ছে। গোলাম রসূল মার্কেটের মাস্ক ব্যবসায়ী আরমান স্টোরের মো. ফয়েজ অপরাজেয় বাংলাকে বলেন, মূলত দেশে এখন সার্জিক্যাল মাস্ক সবই আমাদের দেশে তৈরি। চায়নার কোন মাস্কই এখন বাজারে নেই। ঢাকার মিটফোর্ড থেকেই এসব মাস্ক আনা হয়। সব মাস্কই মেইড ইন মিটফোর্ড। চায়না মাস্কের সমমানের আর দাম কম হওয়ায় ব্যবসায়ীদের আগ্রহ বেশি মিটফোর্ডের মাস্কে। 

তবে আকিজ উদ্দিন নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, চট্টগ্রামেও ৪-৫ টি সার্জিক্যাল মাস্ক তৈরির কারখানা রয়েছে। অনেকে এদের কাছ থেকে এনেও বিক্রি করছেন। যদিও এখানে সিন্ডিকেট করে দাম নির্ধারণ করে মাস্ক প্রস্তুতকারীরা। তাই মিটফোর্ডের মাস্কেই ভরসা বেশি। 

এদিকে সংক্রমণ থেকে রক্ষায় মাস্কের কোনো বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবির। তিনি অপরাজেয় বাংলাকে বলেন, আগের চেয়ে মাস্ক ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে। ভ্যাকসিন এলেও মাস্কের ব্যবহারের অভ্যাস ছাড়া যাবে না।