১৮ বছর পর্যন্ত লিখতে-পড়তে পারতেন না, এখন কেমব্রিজের অধ্যাপক
সাতরং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:০৫ পিএম, ৮ মার্চ ২০২৩ বুধবার
‘একদিন আমি অক্সফোর্ড বা কেমব্রিজের শিক্ষক হব’ - এটা ছিল জেসন আরদের অনেক স্বপ্নের একটি। এটা তিনি বাড়িতে তার শোবার ঘরে লিখে রেখেছিলেন। তার বয়স তখন ২৭ চলছে এবং তিনি পিএইচডি করছেন। ১০ বছর পর তার সেই স্বপ্ন শুধু পূরণই হয়নি, সেই সঙ্গে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের খাতায়ও উঠে গেছে তার নাম।
দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, মাত্র ৩৭ বছর বয়সে ক্যামব্রিজের সবচেয়ে তরুণ কৃষ্ণাঙ্গ অধ্যাপক হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন জেসন আরদে। আগামী সপ্তাহেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব এডুকেশনের অধীনে সোসিওলজি অব এডুকেশন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব নেবেন তিনি। অথচ ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত পড়তেই পারতেন না তিনি।
জেসনের অনন্য সাধারণ অধ্যবসায়ের এ গল্প লাখো তরুণের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে সামনে এসেছে। জেসনের বয়স তখন ৩। অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার ধরা পড়ে তার। এ রোগে আক্রান্ত হওয়ায় ১১ বছর বয়স পর্যন্ত ঠিকমতো কথা বলতে পারতেন না।
আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী এমনকি তার চিকিৎসকরা ধরেই নিয়েছিলেন যে, তাকে সারাজীবন গৃহবন্দি জীবন কাটাতে হবে। কিন্তু জেসনের ইচ্ছাশক্তি অদম্য, যা দিয়ে সবাইকে ভুল প্রমাণ করেন তিনি। যে বয়সে অন্যরা উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, সেই বয়সে তিনি কেবল পড়তে শিখলেন। এর পরের বছরগুলো তিনি যা করে দেখান, তা পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতার বাধা কাটিয়ে এখন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে তরুণ কৃষ্ণাঙ্গ অধ্যাপক জেসন। যুক্তরাজ্যজুড়ে সব মিলেয়ে অধ্যাপক আছেন ২৩ হাজার, এর মধ্যে মাত্র ১৫৫ জন কৃষ্ণাঙ্গ।
কীভাবে এই অসাধ্য সাধন করলেন জেসন?
জেসনের জন্ম ও বেড়ে ওঠা দক্ষিণ লন্ডনের ক্ল্যাফামে। কিন্তু বড় হয়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় ব্রিটেনের নিম্ন মধ্যবিত্ত, কালো, এশীয় ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরা যে সব বাধার মুখোমুখি হন, তাকেও তার সব কিছুর মুখোমুখি হতে হয়েছিল।
কিন্তু জেসনের স্বপ্ন ছিল বড়। সহজেই থেমে যাওয়ার পাত্র তিনি ছিলেন না। ‘একদিন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হব’ - এ ছিল তার লক্ষ্য। কিন্তু শারীরিক এ অবস্থা নিয়ে তিনি কী করে অধ্যাপক হবেন, তা নিয়ে তাকে অনেকেই কটাক্ষ করতেন। এমনকি তার থেরাপিস্টরাও বলেছিলেন, এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
কিন্তু সেসব কটাক্ষ উপেক্ষা করেই লক্ষ্যে অবিচল থাকেন জেসন। জীবনের লক্ষ্যের একটি তালিকা করেন তিনি। সেখানেও লিখেছিলেন, একদিন আমি অক্সফোর্ড অথবা কেমব্রিজে শিক্ষকতা করব।
যে বয়সে অর্ধেক মানুষেরই পড়াশোনা অনেক দূর এগিয়ে যায়, সেই সময় তিনি কেবল লিখতে ও পড়তে শুরু করেন। কঠোর অধ্যবসায় ও ইচ্ছাশক্তি তাকে এ সাফল্য এনে দিয়েছে।
জেসন জানান, তার এ সাফল্য অর্জনের পথ মোটেই সহজ ছিল না। উচ্চশিক্ষার শুরুর দিকে তাকে অনেক বাধা পার হতে হয়েছে; অনেক উপেক্ষা সহ্য করতে হয়েছে। প্রথমদিকে তিনি মানসিকভাবে ভেঙেও পড়েছিলেন। তবে সেসব কাটিয়ে তিনি নিজের লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন।
ঠিকমতো উচ্চারণ করতে পারতেন না জেসন। ভাষাগত যোগাযোগের জন্য তাই সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ শেখেন তিনি। তারপর তাকে আর থামতে হয়নি। স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও লিভারপুল জন মুরস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন। ২০১৮ সালে তার প্রথম গবেষণাপত্র প্রকাশ পায়।
জেসনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘কীভাবে সুবিধাবঞ্চিতদের আরও বেশি করে সুবিধা দেয়া যায় এবং উচ্চশিক্ষাকে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া যায়, সেটাই আমার প্রাথমিক লক্ষ্য। আশা করি, কেমব্রিজের মতো জায়গা আমাকে জাতীয় ও বিশ্বব্যাপী সুবিধা দেবে।’