অসময়ের দশ ফোঁড়
শেখ আনোয়ার
প্রকাশিত: ০২:১৬ পিএম, ৩ মার্চ ২০২৩ শুক্রবার আপডেট: ০২:১৮ পিএম, ৩ মার্চ ২০২৩ শুক্রবার
মানুষের জীবন খুবই ছোট ও সংক্ষিপ্ত। এরই মাঝে করতে হয় অনেক কাজ। মানুষের জীবনে সময়ের এতো অভাব যে, সময় যেনো হাতের মুঠো থেকে কেবলই পিছলে, ফসকে বেরিয়ে যায়। ফলে শত সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যের মাঝেও জীবন হয়ে উঠে দূর্বিষহ। সময়কে নিজের বশে আনা হয়তো সহজ কাজ নয়। কিন্তু কিছু নিয়ম কানুন মানলে সময়কে হয়তোবা সোনার হরিণ মনে হবে না।
জীবনের লক্ষ্য স্থির করুন
ব্যক্তিগত জীবনে অথবা কর্মক্ষেত্রে আপনাকে আপনার লক্ষ্য স্থির করতে হবে। আপনি যে কাজটি করতে চান, তা নির্দিষ্ট করুন। যদি অফিসে কোন একটি নির্দিষ্ট পদের প্রতি আপনার লক্ষ্য থাকে, তাহলে অফিসের কাজ একেবারে ঠিকমতো করবেন। একেবারে ঠিক সময়ে অফিসে বা যে কোন স্থানে এসে পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন।
সময়ের গতিপথ নির্ধারিত করুন
আপনি কিছুতেই সময় বাঁচাতে পারবেন না, যদি না বুঝতে পারেন সময় কোথায় নষ্ট হচ্ছে। এমনিতে যদি বুঝতে না পারেন তাহলে মোবাইলের নোটপ্যাডে বা একটা খাতায় প্রতি আধ ঘন্টা পর পর লিখুন কি করছেন কখন? দিনের শেষে দেখবেন, আপনি অনেক কাজ যা পাঁচ মিনিটে যা করা যায় তা করতে সময় নিয়েছেন দশ মিনিট। এবার আপনি হয়তো বুঝতে পারছেন, সময় কিভাবে আপনার চোখের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়।
সময়কে বেঁধে দিন
প্রতিদিন সকালে সারাদিনের রুটিন তৈরী করুন। সম্ভব হলে সাপ্তাহিক বা মাসিক রুটিন তৈরি করে ফেলতে পারেন। তাহলে আপনার নিজস্ব সময়ের আন্দাজ থাকবে। সাপ্তাহিক বা মাসিক রুটিন কিছু কিছু অদল-বদল ঘটালেও সময়ের মাপে যদি কাজের কাঠামো ঠিক থাকে, তাহলে হয়তো সময়টাকে কিছুটা করতলগত করতে পারবেন।
কাজ নির্দিষ্ট করুন
দিনের শুরুতেই সেদিন কি কি কাজ করবেন ঠিক করে নিন। একটি কাজ সম্পূর্ণ শেষ করে আরেকটা কাজ শুরু করে দিন। এভাবে দেখবেন সময় বাঁচাতে পারছেন। না হলে একবার এই কাজে হাত, আরেকবার ওই কাজে হাত দিয়ে সব কিছু গুলিয়ে ফেলবেন। এতে সময় বেশি নষ্ট হয়। কাজ কম হয়।
নিজ স্বকীয়তা প্রতিষ্ঠা করুন
আপনি যদি সবার কাছে প্রিয় হতে গিয়ে সবার অনুরোধেই হ্যাঁ বলতে থাকেন তাহলে আপনার সময় কখনই বাঁচবে বলতে থাকেন তাহলে আপনার সময় কখনই বাঁচবে না। আপনার একান্ত প্রয়োজনে ‘না’ বলতে শিখুন। তা সে যেই হোক। আপনি বিনয়ের সঙ্গে বুঝিয়ে বলতে চেষ্ঠা করুন। এতে আপনি বাড়তি ঝামেলা থেকে রক্ষা পাবেন।
কাজ ফেলে রাখবেন না, শেষ করুন
যে কাজটা শুরু করেছেন, করে যান। থামবেন না। এতে সময় নষ্ট হয়। একটা শেষ করে আরেকটা কাজে হাত দিন, কারণ যে কোনও কাজে একবার বাধা পড়লে আবার সেই কাজে মন দিলে বাড়তি কিছু সময় নষ্ট হয়ে যাবেই।
কিছু সামাজিকতা এড়িয়ে চলুন
প্রতিটি বিয়ে, জন্মদিনের অনুষ্ঠানেই যেতে হবে। তার কোন মানে নেই। যেগুলো খুব জরুরি নয়, বা আপনি যাদের খুব ঘনিষ্ট নন, তাদের আমন্ত্রণ এড়িয়ে গেলে আপনার সময় বাঁচবে।
অন্যকে সাহায্য করুন
প্রয়োজনে, অপ্রয়োজনে আপনার সহকর্মীদের সাহায্য করুন। দেখবেন তারাও আপনার প্রয়োজনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন।
ভয় পাবেন না
কাজের অসম্ভব চাপ পড়লে ভেঙে পড়বেন না। টেনশনে ভুগবেন না। কাজের লোড সামলাতে শিখুন। সাবধান থাকুন আর ঠান্ডা মাথায় কাজ করুন। তাড়াহুড়ো না করে স্বাভাবিক হয়ে কাজ করুন। দেখবেন ঠিক সময়মতো লক্ষ্যে পৌঁছে যাবেন।
মনে রাখবেন, সময়ের তটভ‚মিতেই মানুষের ভাঙা-গড়ার ইতিহাস। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্তের, জন্ম থেকে মৃত্যুর অন্তহীন এক লীলা। নদীর ¯্রােতের মতোই বহমানতা তার ধর্ম। কারো জন্যই তার অপেক্ষা নেই। নেই কোনো কিছুর জন্যেই আসক্তি, পিছুটান। মুহুর্তের জন্যেও সে থামে না। শুধু চলে, চলে আর চলে। মহাকালের সেই প্রবাহে ক্ষণবন্দি মানুষের জীবন। অনন্ত প্রবাহিত সময়ধারা থেকে যে-খÐসময়টুকু মানুষ তার জীবন রচনার জন্যে পায় তা এতো দুর্লভ, এতো মূল্যবান যে, মানুষকে চিরকাল হাহাকার করতে হয়-'নাই যে সময়, নাই আর নাই'। যে সময়টুকু মানুষ নিজের জীবনে লাভ করে তাই পৃথিবীতে টিকে থাকার সম্বল। তাই বাস্তব জীবনে এক মুহূর্ত থেমে থাকার উপায় নেই। সময় নষ্ট করার অবসর নেই।
শেখ আনোয়ার: বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক। এম.ফিল স্কলার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।