কাঙ্খিত হোক সকলের `ডিসি বইমেলা`
মাহমুদ মেনন, ভার্জিনিয়া, যুক্তরাষ্ট্র থেকে
প্রকাশিত: ০৯:২৪ পিএম, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ বুধবার আপডেট: ০৯:৩১ পিএম, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ বুধবার
'বইমেলা' কথাটি শুনলেই বইপ্রিয় সংস্কৃতিমনা বাঙালির মধ্যে একটা আগ্রহ তৈরি হয়। তেমনি কিছু আগ্রহী মানুষের সমাগম ছিলো গত ১২ ফেব্রুয়ারি রবিবার ভার্জিনিয়ার আলেক্সান্দ্রিয়ার একটি হলরুমে। দেশি পোশাকের সাজে তারা জড়ো হয়েছিলেন একটি ছোট্ট অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। সেটি ছিলো ডিসি-বইমেলার সূচনা অনুষ্ঠান।
ডিসি-বইমেলা একটি আয়োজনের নাম। ২০১৮ সালে যার যাত্রা শুরু। তবে এই পাঁচ বছরের মধ্যেই ভার্জিনিয়া-মেরিল্যান্ড-ডিসি'র গণ্ডি ছাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য স্টেটেও যারা বইপ্রিয় মানুষ তাদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে। ফলে প্রতিবছরই যখন এই বইমেলা উদযাপন হয় তখন অনেক বাঙালি এতে অংশ নেন। মেলায় প্রদর্শিত হয় বিপুল সংখ্যক বই। আর দেশ থেকে প্রকাশকরা তাদের বই নিয়ে স্টল সাজিয়ে বসেন। আর প্রবাসি বাঙালি লেখকরাও তাদের বই প্রদর্শন ও বিক্রির সুযোগ পান।
সব মিলিয়ে একটা জমজমাট আয়োজন। সারা বছর ধরে আর অনেকই এই আয়োজনের অপেক্ষায় থাকেন। ২০২৩ সালে আগস্টের শেষভাগে কিংবা সেপ্টেম্বরের প্রথমভাগে এই বইমেলার আয়োজন করা হবে, এমনটাই জানাচ্ছিলেন এর আহ্বায়ক দস্তগীর জাহাঙ্গীর তুঘরিল।
"এখানে বইমেলার ভেনু নির্ধারণ ও তা নিশ্চিত করা কিছুটা কঠিন। আমাদের তো নিজস্ব একটা স্থান নেই যেখানে হরবছর এই আয়োজন করা যাবে। ফলে ভেনু চূড়ান্ত হলেই আমরা চূড়ান্ত তারিখ ঘোষণা করতে পারবো," বলছিলেন দস্তগীর জাহাঙ্গীর।
তবে তারিখ যেটাই হোক ২০২৩ সালে ডিসি-বইমেলা তার উদযাপনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে এবং সে জন্য প্রকৌশলী ড. নজরুল ইসলামকে প্রধান সমন্বয়ক করে একটি কমিটি গঠিত হয়েছে এবং তারই আনুষ্ঠানিকতা ছিলো ১২ ফেব্রুয়ারি।
সে আয়োজনে ডিসি-বইমেলা ২০২৩ আয়োজনের বাজেট পেশ করা হয়। আর প্রধান সমন্বয়কারীকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। আর ছিলো প্রশ্নোত্তর পর্ব। তবে সেসব ছাপিয়ে সংক্ষিপ্ত আয়োজনে সম্পন্ন হয়ে যাওয়া সাংস্কৃতিক পরিবেশনটাই ছিলো দারুণ উপভোগ্য। তাতে ছিলো গান, কবিতা আর গান ও গল্প।
আলোচনা পর্বে ডিসি-বইমেলার আহ্বায়ক দস্তগীর জাহাঙ্গীর, ২০১৮ সালে আয়োজনের প্রধান সমন্বয়ক আনোয়ার ইকবাল কচি এবং ২০১৯ সালে আয়োজনের প্রধান সমন্বয়ক সামিনা আমিন বইমেলার পথচলার অতীত অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যত পরিকল্পনার নানা দিক তুলে ধরেন। ড. নজরুল ইসলাম তার বক্তব্যে ডিসি-বইমেলা ২০২৩ কিভাবে সফল করা যায় তা নিয়ে কথা বলেন, পরামর্শ চান। এ ছাড়াও ডিসি বইমেলার প্রধান উপদেষ্টা মিডিয়া ব্যক্তিত্ব রোকেয়া হায়দার, নৃত্য শিল্পী লায়লা হাসান, ডুয়াফির প্রেসিডেন্ট আব্দুল কাইয়ুম খান, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব কবিতা দেলোয়ার, বিশিষ্ট লেখক ড. আশরাফ আহমেদ, কমিউনিটির বিশিষ্টজন মাহতাব আহমেদ, কাজী জামান, হিরণ চৌধুরীসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন।
আর সাংস্কৃতিক আয়োজনে পরিবেশিত হয় রবীন্দ্রসংগীত, আধুনিক গান, কবিতা ও নজরুলের জীবন নিয়ে আলাপ ও নজরুল গীতি। ড. প্যাট্রিসিয়া শুক্লা গোমেজ, ক্লেমেন্ট স্বপন গোমেজ, জেনিথ এশা সামাদ্দার কথা কণ্ঠে সেসব গান দর্শকদের মুগ্ধ করে। অসাধারণ তবলা বাজিয়ে সকলকে সঙ্গ্যত দেন ড. পল ফাবিয়ান গোমেজ। শেষাংশে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবনের গল্প ও গানের আসরটি ছিলো বেশ জমজমাট। এতে অংশ নেন সাংবাদিক ও লেখক আশীফ এন্তাজ রবি ও সঙ্গীত শিল্পী দিনার মনি।
প্রতিবছরের মতো এবারও ডিসি-বইমেলা সাহিত্য পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে কোনো না কোনো সেরা সাহিত্যিককে। এর আগে এই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন দিলারা হাশেম, ড. নুরুন্নবী ও আসাদ চৌধুরী। এই সাহিত্য পুরস্কার নিয়েও বড় স্বপ্ন দেখেন ডিসি-বইমেলার আহ্ববায়ক দস্তগীর জাহাঙ্গীর তুঘরিল। তিনি বলেন, একটি সময় আসবে যখন বাংলা সাহিত্য জগতের মানুষের কাছে এই পুরস্কার প্রত্যাশিত হবে। আর সকলের কাছে কাঙ্খিত হবে ডিসি-বইমেলা।