অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

ওরে বাব্বা কত পিঠার কত নাম!

মাহমুদ মেনন, ভার্জিনিয়া, যুক্তরাষ্ট্র থেকে

প্রকাশিত: ১২:৫৩ এএম, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সোমবার   আপডেট: ০১:২৪ এএম, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সোমবার

"ওরে বাব্বা কত পিঠার কত নাম!" কে একজন বলে উঠলেন পাশ থেকে। তাকিয়ে দেখি শুঁকে দেখছেন একটা আস্ত পাকন পিঠা। দাম না চুকিয়েই মুখে পুরে দিলেন আর চিবুতে লাগলেন। স্বাদ ফুটে উঠলো মুখের অভিব্যক্তিতে। কান পাতলে চুক-চাক শব্দটাও হয়তো শোনা যেতো। এবার পকেট থেকে দুই ডলার বের করে তুলে দিলেন দোকানির হাতে।

নবান্ন পিঠা ঘরের স্টলের সামনে ভিরটা একটু বেশিই ছিলো। সেখানে পাকন ছাড়াও চিতই-ভাপা-পুলি-পাটিসাপটার পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন সাদিয়া ও তৃণা।

দুই দিন ধরে প্রাণভরে তারা বানিয়েছেন এইসব পিঠা। আর তা নিয়ে সেজেগুজে এখন এসেছেন পিঠা উৎসবে। উৎসবের আয়োজক ছিলো ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফ্যামিলি নামে এখানকার একটি জনপ্রিয় সংগঠন। 

পূর্ণাঙ্গ বাঙালিয়ানা এক আয়োজন। তাতে পড়েছে আরও আরও পিঠার দোকান। কোথা থেকে কোথা হয়ে বাংলাদেশের নানা জেলার নানা স্বাদের পিঠেরা শোভা পাচ্ছিলো যুক্তরাষ্ট্রেের ভার্জিনিয়ার উডব্রিজে আয়োজিত এই উৎসব আয়োজনে। 

স্টলে স্টলে ঘুরে ঘুরে দেখা গেলো পসরা যারা সাজিয়েছেন তারা সকলেই বাংলাদেশি। এখন আমেরিকান। প্রবাসের অতি আধুনিক জীবনে তারা অভ্যস্ত। কিন্তু এই দিনে তারা পুরোপুরি বাঙালি। সাজ-পোশাকেও বাঙালিয়ানা। আর প্রত্যেকের মধ্যেই সেই বাঙালি নারীর অভিব্যক্তি। যেনো খুব ইচ্ছা- তার হাতে বানানো পিঠা থেকে সবাই একবার একটু চেখে দেখুক। আর বলুক- বাহ! বেজায় মিঠে!

মিষ্টি জাতীয় পিঠাই বেশি। সেটাই বাঙালি পিঠার প্রকৃত রূপ। চালের গুঁড়ো, গুড় আর নারকেলের প্রধান্যেই তৈরি বেশিরভাগ পিঠা। সেগুলোর হরেক নাম। 

বাগডিসির পক্ষ থেকে পড়েছিলো একটি স্টল। তাতে দেখা গেলো শতেক পিঠার পসরা। দুধচিতই, সূর্যগোলাপ, কদমফুল, মুখশৈলি আরও কত নাম। আরেক দোকানে মিললো ফুল পিঠা ও ফুলঝুরি। আরও ছিলো নারিকেলগুজি, আতফুলি। 

কেউ কেউ আবার বানিয়েছেন নানা কিছুর আদলে নানা পিঠা। কোনোটির নাম কামরাঙা, কোনোটির নাম রসুন কোনোটা গোলাপ পিঠা। একটির নাম ডাক-সুন্দরী। সে পিঠা তৈরি হাঁসের আদলে। আরেকটি হৃদয়হরণ। আদল তার হৃদযন্ত্রের।

তবে পাটিসাপটা, চিতই, পুলি, পাকন প্রায় সকল স্টলেই ছিলো। তাতে একটা পাল্লাপাল্লি ঠিকই হয়ে গেলো- কার পিঠা কত সেরা।

ক্রেতারাই মূল বিচারক। তবে একটা বিচারিক প্রক্রিয়া ছিলো মেলা আয়োজকদের পক্ষ থেকেও। একটি দলকে দেখা গেলো তারা খাতা কলম নিয়ে স্টলে স্টলে ঘুরে পিঠা দেখে- পিঠা চেখে নম্বর দিচ্ছেন দোকানীদের। আর দোকানিরাও তাদের নিজ নিজ সেরাটি দলের সদস্যদের দিকে এগিয়ে দিচ্ছেন- বলছেন এটা খেয়ে দেখুন কত স্বাদ! ওটা দেখুন কত্ত সুন্দর! 

আগে দর্শনধারী পরে গুণ বিচারি... বিচারকরা বুঝি সেই পদ্ধতিতেই যাচ্ছিলেন। কেবল স্বাদে সেরা করাই না, গ্রামবাংলায় কিন্তু এই প্রচেষ্টাও চলে- তাদের তৈরি পিঠা দেখতে কত চমৎকার হয়। যাতে অতিথির সামনে দিলে তারা পছন্দ করেন। আর সে কারণে কত পিঠা-শৈলি রয়েছে বাংলায় সর্বত্র ছড়িয়ে। তারই যেনো একটা সমন্বিত রূপ চোখে পড়লো এই পিঠা উৎসবে। 

আর ছিলো ঝাল-মুড়ি, ফুচকা চটপটিও। যা না থাকলে মেলাই জমে না।

তবে স্বাদেই শেষ রক্ষা। সুতরাং প্রত্যেকেই তাদের সাধ্যমত নিজ নিজ সাধের পিঠাগুলো স্বাদসম্মৃদ্ধ করে বানিয়ে এনেছিলেন এই মেলায়। ক্রেতারাও তাই মজা করে খাচ্ছিলেন। কেউ কেউ ঠোঙা ভরে ভরে নিযে গেছেন বাড়িতেও।

পিঠার সাথে সাথে স্টলগুলোর নামেও ছিলো চমকারিত্ব। আয় সখি পিঠা ঘরে যাই, নবান্ন, ধানসিঁড়ি এমনই সব নাম। আবার কেউ কেউ নিজের অঞ্চলের পিঠার ঐতিহ্যকে উর্ধ্বে তুলে ধরতে নাম দিয়েছেন নিজ নিজ জেলার নামে।  

এদিকে পিঠার উৎসব যখন চলছিলো ওদিকে মঞ্চে তখন চলছিলো গ্রাম-বাংলার নানা গানের পরিবেশনা। বসেছিলো কিছু বাংলা সাজ-পোশাকের পসরাও। 

সব মিলিয়ে বাংলার রূপ, রস, গন্ধে ভরপুর একটি সন্ধ্যা ভার্জিনিয়াবাসী উপভোগ করলো এই পিঠামেলার আয়োজনে।