স্মরণশক্তি বাড়ানোর কৌশল
শেখ আনোয়ার
প্রকাশিত: ১১:১৭ এএম, ২০ জানুয়ারি ২০২৩ শুক্রবার আপডেট: ১১:২১ এএম, ২০ জানুয়ারি ২০২৩ শুক্রবার
কোন কিছু দেখে, শুনে বা ভাবা তথ্যকে মগজে জমা করে রেখে প্রয়োজনে সেই তথ্যকে বের করে এনে কাজে লাগানোই হলো স্মৃতিশক্তি। স্মৃতিশক্তি ধরে রাখে মস্তিষ্কে থাকা কয়েক হাজার কোটি স্নায়ুকোষ বা নিউরন যা এক দুর্ধর্ষ নেটওয়ার্ক। এই নেটওয়ার্ক অত্যাধুনিক ওয়াইফাই, ইন্টারনেট বা যে কোন নেটওয়ার্কেও চেয়ে কয়েক লক্ষ গুণ বেশি কার্যকরী।
স্মৃতি বড় রহস্যময়। এটা বাড়ানো যায় স্মৃতিশক্তির চর্চা করে। এই মানব জমি অমূল্য। মগজকে অলস বসিয়ে না রেখে যতো বেশী এর চর্চা বাড়ানো যায় ততো বড় হয়ে মেমোরি নেটওয়ার্ক। নেটওয়ার্ক যতো বাড়বে ততো বাড়বে স্মৃতির ধার। ছাত্রজীবনে নানা বিষয়ে চর্চা, পড়াশুনা, আলোচনা যে কোন মানুষের মগজের নিউরোনাল রিজার্ভ বাড়ায়। আর রিজার্ভ যতো বাড়ে স্মৃতির তীক্ষ্মতা ততো বাড়ে।
আর তাই-শুধু পাঠ্য বই নয়। কম বয়স থেকেই পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি নানা বিষয়ের বই, ম্যাগাজিন পড়ার অভ্যাস যেনো সঠিক পদ্ধতিতে, সঠিক পরিবেশে হয়। পড়ার টেবিলে যথেষ্ট আলো ও নিরবতা থাকা দরকার। পড়া বিষয়কে স্মৃতি আত্মস্থ করে নিতে হলে জোরে শুদ্ধ উচ্চারণে পড়তে হবে এবং বার বার পড়তে হবে। তাহলে মনে থাকবে বেশী। একবার রিডিং-হ্যাবিট তৈরী হয়ে গেলে নানা বিষয়ে পড়াশোনার আগ্রহ বাড়বে।
শুধু পড়া নয়, পড়া বিষয় আলোচনা করা, আড্ডা দেয়া, রসিকজনের সঙ্গে তর্ক করা। এসবও নতুন নতুন বিষয় জানার মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। জমা করে নেয় মগজে। এজন্যেই অন্যদের সঙ্গে আদান-প্রদান করতে হয় বিভিন্ন তথ্য। ভালো গান শুনা, ভালো বই পড়া , ভালো ছবি দেখা, ডায়েরি লিখতে পারো, পুরনো ডায়েরি পড়া। এক কথায় যখন যা যা করা হবে যথেষ্ট মন লাগিয়েই করতে হবে।
পড়ার পাশাপাশি বার বার লেখা বিশেষভাবে স্মৃতি সহায়ক। সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে, বয়স অনুযায়ী শরীর চর্চা করতে হবে। বেশী বয়সেও যেনো স্মৃতি শক্তি ধরে রাখা যায় তার জন্য দরকার স্মৃতি চর্চা করা, স্মৃতি কাজে লাগে এমন কাজকর্ম বেশী বেশী করা। পুরানো দিনের গল্প করা, বেড়ানোর কাহিনী বলা, পড়া বিষয় বলতে, বোঝাতে স্মৃতি কাজে লাগে খুব বেশী। টেনশন এড়িয়ে চলা, রক্তচাপ এবং দৈহিক ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। মনটাকে আনন্দে রাখুন, প্রাণখুলে হাসুন, কাজে লাগান মনের অসীম কল্পনাশক্তিকে। কাজে লাগান সৃজনশীলতাকে। নানা জ্ঞান বিজ্ঞান যত বেশী আয়ত্ত করবেন মন ততো একটা একটা করে ফুটতে থাকবে মনের নতুন চোখ। মনের চোখ যত বাড়ে, মেধা, স্মৃতি, বিচার-বিশ্লেষণের ক্ষমতাও ততো বাড়ে। কম বয়স থেকে মগজকে যতো বেশী কাজে লাগানো যাবে, বেশী বয়সে স্মৃতি লোপের আশঙ্কা ততো কম। আর দেরি নয়, আপনি আজই মন দিয়ে মস্তিষ্ক চর্চা বাড়াতে নেমে যান।
শেখ আনোয়ার: বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক। এম.ফিল স্কলার, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।