বহুমুখী, বর্ণাঢ্য, বর্ণিল
এন্টারটেইনমেন্ট করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: ১২:৪৯ পিএম, ২৭ নভেম্বর ২০২০ শুক্রবার আপডেট: ০১:৫৬ পিএম, ২৯ নভেম্বর ২০২০ রোববার
আলী যাকের [১৯৪৪-২০২০]
শেষ ঠিকানা ‘কবর’ দিয়ে তার কাজ শুরু, আজ ভোর হতে না হতেই সেই ঠিকানায় পৌঁছুনোর পরোয়ানা পেয়ে গেলেন তিনি। অসংখ্য অসামান্য সব সৃষ্টি এ দেশের মানুষের কাছে গচ্ছিত রেখে পরপারে পড়ি দিলেন বহুমাত্রিক অভিনেতা আলী যাকের।
এক বর্ণাঢ্য জীবন তার। টেলিভিশন নাটকে তুমুল জনপ্রিয় অভিনেতা আলী যাকের। আর গত শতকের সত্তর থেকে নব্বইয়ের দশকে করেছেন মঞ্চ শাসন। বেতারে অর্ধশতাধিক নাটক করেছেন তিনি। অভিনয় করেছেন বেশ কিছু চলচ্চিত্রে। নানা বিষয়ে দৈনিক পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখিও করেছেন দীর্ঘদিন। ছিলেন নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি। এছাড়া যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির পূর্ণ সদস্যও তিনি।
১৯৪৪ সালের ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক মোহাম্মদ তাহের ও তার স্ত্রী রিজিয়া তাহেরের ঘরে আলী যাকের জন্ম। সেন্ট গ্রেগরি থেকে ম্যাট্রিক এবং নটরডেম কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে আলী যাকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই জড়িয়ে পড়েন নাট্যচর্চায়, সেই সঙ্গে ছাত্ররাজনীতিতেও।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষে কর্মজীবন শুরু করাচিতে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিজ্ঞাপনী সংস্থা ডব্লিউ এস ক্রফোর্ডাসে ট্রেইনি এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। এরপর মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রথমে ভারতে গিয়ে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন। শুরু করেন প্রচারযুদ্ধ, আলী যাকের যুক্ত হন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে যাত্রা শুরু হয় এশিয়াটিক থ্রিসিক্সটির, ছিলেন এই বিজ্ঞাপনী সংস্থার গ্রুপ চেয়ারম্যান।
বন্ধু নির্দেশক ও নাট্য ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদের সূত্র ধরেই ১৯৭২ সালে আরণ্যকের ‘কবর’ নাটকে অভিনয় করেন আলী যাকের, শুরু হয় মঞ্চে তার পথচলার। সে বছরেই তিনি নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে যোগ দেন। আলী যাকেরকে ডেকে নিয়েছিলেন আতাউর রহমান ও জিয়া হায়দার। তখন থেকে নাগরিকই তার ঠিকানা।
‘বাকি ইতিহাস’, ‘সৎ মানুষের খোঁজে’, ‘দেওয়ান গাজীর কিস্সা’, ‘কোপেনিকের ক্যাপটেন’, ‘গ্যালিলিও’, ‘ম্যাকবেথ’সহ অনেক আলোচিত মঞ্চনাটকের অভিনেতা ও নির্দেশক তিনি। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে তিনি ব্যস্ত হন টিভি নাটকে। পান অসীম জনপ্রিয়তা। ‘আজ রবিবার’, ‘বহুব্রীহি’, ‘তথাপি’, ‘পাথর’,‘ দেয়াল’সহ বহু টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পান আলী যাকের। বিশেষ করে হুমায়ূন আহমেদের বেশিরভাগ নাটকে তার চরিত্রগুলো জনপ্রিয়তা পেয়েছে আকাশছোঁয়া। তবে মঞ্চের সঙ্গে তার সংযুক্তি ছিলো আমৃত্যু। ছিলেন দারুণ সঞ্চালকও।
পেয়েছেন একুশে পদক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক, নরেন বিশ্বাস পদকসহ অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা। মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার ২০১৮-তে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন অভিনেতা আলী যাকের।
স্ত্রী সারা যাকেরও মঞ্চ আর টেলিভিশনের এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী। তাদের বিয়ে হয় ১৯৭৭ সালে। দুই ছেলেমেয়ে ইরেশ যাকের ও শ্রেয়া সর্বজয়াও অভিনয়শিল্পী।