করোনাভাইরাস
দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে প্রস্তুত চট্টগ্রামের ফিল্ড হাসপাতালগুলো
চট্টগ্রাম করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: ০৭:২৭ পিএম, ২৫ নভেম্বর ২০২০ বুধবার আপডেট: ১২:১২ পিএম, ২৬ নভেম্বর ২০২০ বৃহস্পতিবার
করোনাকালে চট্টগ্রামে ত্রাতা হিসেবে আর্বিভূত হয়েছিল বেশ কিছু ফিল্ড বা অস্থায়ী হাসপাতাল ও আইসোলেশন সেন্টার। যেখানে সেবা মিলেছিল হাজারের অধিক করোনা আক্রান্তের। চিকিৎসা সেবার সেই অস্থির সময়ে, যা স্বস্তি এনে দিয়েছিল নগরবাসীর মনে। মাঝে সংক্রমণ কমে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় ফিল্ড হাসপাতাল ও আইসোলেশন সেন্টারগুলো।
তবে শীতের প্রকোপ বাড়তেই সারা দেশের মতো চট্টগ্রামেও বদলাতে শুরু করেছে করোনা পরিস্থিতি। অক্টোবর মাসে ২ হাজার ৪৭৯ জন আক্রান্ত হলেও, এ মাসে মাত্র ২৪ দিনেই আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৮০৫ জন। যা গত ৩ মাসে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে গত ১৪ দিনে (১১-২৪ নভেম্বর) ১ হাজার ৮৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। করোনার এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতাকে দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরু বলছেন চিকিৎসকরা।
তাই দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় চিকিৎসা সেবা দিতে ফের প্রস্তুত হচ্ছে ফিল্ড হাসপাতাল ও আইসোলেশন সেন্টারগুলো। ইতোমধ্যে নতুন করে রোগীও ভর্তি শুরু হয়েছে আল-মানাহিল নার্চার নামে একটি ফিল্ড হাসপাতালে। এছাড়া যেকোন সময় রোগী ভর্তি করাতেও প্রস্তুত বিদ্যানন্দ মা ও শিশু হাসপাতাল। অন্য ফিল্ড হাসপাতাল ও আইসোলেশন সেন্টারগুলোও নিচ্ছে একই প্রস্তুতি। অপরাজেয় বাংলার সাথে আলাপকালে এমনটাই জানিয়েছেন ফিল্ড হাসপাতাল ও আইসোলেশন সেন্টারের উদ্যোক্তরা।
চটগ্রাম ফিল্ড হাসপাতাল
করোনার শুরুতে দেশের প্রথম ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি হয় চট্টগ্রামে। নাভানা গ্রুপের সহায়তায় সীতাকুন্ডে এ হাসপাতাল তৈরির প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন বিদ্যুৎ বড়ুয়া। যার ঐকান্তিক চেষ্টায় ও জনগণের অর্থায়নে স্থাপিত চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালে সেবা নিয়েছেন ১৬০০ জন রোগী। যার মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে সেবা পেয়েছেন ২৫০ জন। গত ৩০ আগস্ট এটির কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে প্রতিনিয়ত চট্টগ্রামে করোনা পরিস্থিতি ওপর নজর রাখছেন হাসপাতালটির প্রধান উদ্যোক্তা ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া। তিনি অপরাজেয় বাংলা কে বলেন, আমাদের ডাক্তার, স্বেচ্ছ্বাসেবক সবাই যেকোন সময় সেবা দিতে মানসিকভাবে প্রস্তুত। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সরকার যেভাবে নির্দেশনা দেবে আমরা সে অনুযায়ী কাজ করবো। আমাদের ফিল্ড হাসাপাতালের সব কিছুই রক্ষণবেক্ষণ করা আছে। হাসপাতালও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখা হয়েছে। এখন সামনে করোনা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে সব।
আল মানাহিল নার্চার হাসপাতাল
এদিকে করোনাকালে আরেক মানবিক সেবা প্রদানকারী আল মানাহিল-নার্চার জেনারেল হাসপাতালও ফের করোনা রোগীদের সেবা দিতে পুরোদমে প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইতোমধ্যে হাসপাতালটির করোনা ওয়ার্ড ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করা হয়েছে। রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায়, করোনা বেডের সংখ্যা বৃদ্ধিরও চিন্তাভাবনা করছেন হাসপাতালের উদ্যোক্তরা। এ বিষয়ে হাসপাতালটির ইনচার্জ আহমাদুল্লাহ অপরাজেয় বাংলা কে বলেন, গত ৪ দিন আগে থেকে নতুন করে করোনা রোগী ভর্তি শুরু হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে ১৯ জন করোনা রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। যেখানে মোট শয্যা সংখ্যা ৪৩টি। আমাদের এখানে সব শ্রেণী পেশার মানুষ নাম মাত্র মূল্যে চিকিৎসা সেবা নিতে পারবেন।
বিদ্যানন্দ মা ও শিশু হাসপাতাল
করোনার দুঃসময়ে চট্টগ্রাম মানুষের জন্য দেবদূত হিসেবে হাজির হয়েছিল বিদ্যানন্দ। শুরুতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সহায়তায় পতেঙ্গাতে অস্থায়ীভাবে যাত্রা শুরু করেছিল সিএমপি-বিদ্যানন্দ হাসপাতাল। যেখানে ২৫৬ জন করোনা রোগীসহ মোট ৩ হাজারের অধিক মানুষ সেবা নিয়েছেন। কিন্তু রোগী কমে যাওয়ায় ৩১ অক্টোবর অস্থায়ী হাসপাতালটি বন্ধ হয়ে যায়। তবে আশার কথা সম্প্রতি নগরের সাগরিকা এলাকায় ফের সেবা দেয়া শুরু করেছে বিদ্যানন্দ। বেসরকারী প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের দান করা একটি আবাসিক ভবনে বিদ্যানন্দ মা শিশু হাসপাতালে ইতোমধ্যেই করোনা রোগীদের জন্য ১৬ টি বেড রাখা হয়েছে বলে অপরাজেয় বাংলা কে জানান বিদ্যানন্দের চট্টগ্রামের সমন্বয়ক জামাল উদ্দিন।
তিনি বলেন, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়লে আমরা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছি। প্রয়োজনে বর্তমান ৮ তলা ভবনটি পুরোটাই করোনা রোগীদের জন্য ডেডিকেটেড করে দেয়া হবে। আপাতত ১৬ টি বেড প্রস্তুত। যেকোন মূহুর্তে করোনা রোগী ভর্তি করতে পারবো। আমাদের এখানে সেন্ট্রাল অক্সিজেন, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলাসহ রোগীদের জন্য সব ব্যবস্থা রয়েছে।
হালিশহর আইসোলেশন সেন্টার
করোনা মহামারীর শুরুতে যখন চট্টগ্রামে স্বাস্থ্যখাতে হাহাকার, সেবা পাওয়া ছিল সোনার হরিণ। ঠিক সেসময় দুঃসাহসী এক ঝাঁক তরুণ এগিয়ে এসেছিল সেবার মহান এক ব্রত নিয়ে। সাবেক-বর্তমান ছাত্রনেতাদের উদ্যোগে চট্টগ্রামের হালিশহরে একটি কমিউনিটি সেন্টারে প্রতিষ্ঠা করা হয় হালিশহর আইসোলেশন সেন্টার। যেখানে ৪০০ এর বেশি করোনা রোগী সহ মোট সেবা পেয়েছেন ৭৬৪ জন। তবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ায় ইতোমধ্যে সেন্টারটি ফের চালুর চিন্তাভাবনা করছেন বলে অপরাজেয় বাংলা কে জানিয়েছেন প্রধান পৃষ্ঠপোষক মো. সাজ্জাত হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের সব চিকিৎসা সামগ্রী আমাদের কাছে সুরক্ষিত আছে। আমরা পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করছি। যদি সরকার চায় আমরা যেকোন সময় সেবা দিতে প্রস্তুত। আর ব্যয় নির্বাহেরও একটা বিষয় আছে। তাই আমাদের দাতা ও উদ্যোক্তাদের সাথে কথা বলে কর্মপন্থা নির্ধারণ করবো।
এদিকে জুন মাসে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে একটি কনভেনশান সেন্টারে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) চালু করেছিল আইসোলেশন সেন্টার। পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। তবে বর্তমান চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন অপরাজেয় বাংলা কে জানিয়েছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় এবার আইসোলেশন সেন্টার হবে চসিকের মেমন হাসপাতালগুলো। ইতোমধ্যে এসব হাসপাতালে করনো চিকিৎসার জন্য আলাদা ওয়ার্ড করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া চসিকের চিকিৎসকরাও করোনা রোগীদের সেবা দিতে বদ্ধ পরিকর।
তবে ফিল্ড হাসপাতাল ও আইসোলেশন সেন্টারগুলো সেবা দিতে প্রস্তুতি নিয়ে রাখলেও, এ বিষয়ে কী ভাবছে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় তা জানতে অপরাজেয় বাংলা থেকে যোগাযোগ করা হয় সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বীর সাথে। তিনি বলেন, যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়, তাহলে এসব হাসপাতালগুলো নূন্যতম সময়ের মধ্যে যাতে চালু করতে পারে সে বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেয়া আছে। এবার ফিল্ড হাসপাতাল গুলো চালু করা হবে আর আইসোলেশন সেন্টারের জন্য সিটি কর্পোরেশন কে দায়িত্ব দেয়া আছে। এছাড়া কেউ যদি ব্যক্তি উদ্যোগে খুলতে চায় সে বিষয়ে আমাদের সহযোগিতা থাকবে।