কার্যকর তামাক কর ব্যবস্থার জন্য ‘জাতীয় তামাক কর নীতি’ জরুরি
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: ০৬:৪৮ পিএম, ২৫ নভেম্বর ২০২০ বুধবার আপডেট: ০৭:১৬ পিএম, ২৫ নভেম্বর ২০২০ বুধবার
তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে কার্যকর ও সাশ্রয়ী পদ্ধতি হলো দাম বাড়িয়ে একে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে আনা। এতে একইসাথে তামাকের ব্যবহার কমে এবং সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বাংলাদেশে জটিল ও ত্রুটিপূর্ণ তামাক কর কাঠামোর জন্য তা তামাক নিয়ন্ত্রণ ও রাজস্ব বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে না। তাই বাংলাদেশে কার্যকর তামাক কর ব্যবস্থার জন্য ‘জাতীয় তামাক কর নীতি’ প্রণয়ন জরুরি।
বুধবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি), বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এফসিটিসি নলেজ হাব অন টোব্যাকো ট্যাক্সেশন অ্যান্ড ইলিসিট ট্রেড কর্তৃক আয়োজিত ‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তামাক করের প্রবণতা, বিশেষত বাংলাদেশ’ (Trends in Tobacco Taxation in South East Asia, with a special focus on Bangladesh) শীর্ষক একটি আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
ওয়েবিনারে ‘সাউথ-ইস্ট এশিয়া: ট্রেন্ডস ইন টোব্যাকো ট্যাক্সেশন’ শিরোনামে তথ্য উপস্থাপন করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এফসিটিসি নলেজ হাব অন টোব্যাকো ট্যাক্সেশন অ্যান্ড ইলিসিট ট্রেড এর রিসার্চ অফিসার ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার স্যাম ফিলবি এবং ‘টোব্যাকো ট্যাক্সেশন ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে তথ্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিস (বিএনটিটিপি) এর টেকনিক্যাল কমিটির কনভেনর ড. রুমানা হক। বিশেষজ্ঞ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য ইউনিয়নের টোব্যাকো কন্ট্রোলের ডেপুটি ডিরেক্টর আশিষ পান্ডে।
ওয়েবিনারে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এফসিটিসি নলেজ হাব অন টোব্যাকো ট্যাক্সেশন অ্যান্ড ইলিসিট ট্রেড এর প্রোগ্রাম ডিরেক্টর তৌহিদা জ্যাকব এবং সঞ্চালনা করেন আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম।
সভায় বক্তারা আরো বলেন, বহুস্তরভিত্তিক দুর্বল কর কাঠামো এবং তামাকজাত দ্রব্যের ধরণে বিচিত্রতার দরুণ দাম বাড়লে বিকল্প বেছে নেয়ার সুযোগ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় রেখে সময়োপযোগী তামাক কর ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়ে সে লক্ষ্য পূরণের জন্য একটি বিস্তৃত তামাক কর নীতি গ্রহণের কথা বলেছেন। তাই প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি পূরণে অতি সত্ত্বর জাতীয় তামাক কর নীতি প্রণয়ন করতে হবে। যার মধ্যে করারোপসহ, কর আদায় পদ্ধতি ও পর্যবেক্ষণ, ট্রাকিং ও ট্রেসিং, কর ফাঁকি বন্ধ, আমদানি-রপ্তানি, তামাক করসংক্রান্ত প্রশাসনিক বিষয়াদিসহ তামাক কর সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়াদি যুক্ত থাকবে।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে মূল্যের ওপর শতাংশ হারে করারোপের ফলে তা তামাক নিয়ন্ত্রণ ও রাজস্ব বৃদ্ধিতে কোন অবদান রাখছে না বরং তা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে তামাক কোস্পানির মুনাফা বৃদ্ধি করছে। বিগত ১০ বছরে তামাকজাত দ্রব্যের উৎপাদন দ্বিগুণ বাড়লেও কোস্পানির মুনাফা বেড়েছে পাঁচ গুণ। এই অবস্থার পরিবর্তন বক্তারা মূল্যের ওপর শতাংশ হারে করারোপের পাশাপাশি সকল প্রকার তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট করারোপের দাবী করেন।
ওয়েবিনারে বাংলাদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, কলম্বিয়া ও শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিবিদ, তামাক কর বিশেষজ্ঞ ও তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মীরা অংশ নেন।