জেন্ডার সংবেদনশীল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিশ্চিতে মাউশি ও প্ল্যান ইন্টারন্যশনাল বাংলাদেশ
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: ০৭:১২ পিএম, ২০ নভেম্বর ২০২২ রোববার আপডেট: ০৭:১৩ পিএম, ২০ নভেম্বর ২০২২ রোববার
বয়ঃসন্ধিকাল যেকোন শিশুর বেড়ে ওঠার পর্বে স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। এসময় শারীরিক পরিবর্তনের সাথে সাথে মনস্তাত্ত্বিক ও নিরাপত্তাজনিত বিভিন্ন বিভ্রান্তির মধ্যে যেতে হয় সকল কিশোর কিশোরীদের। তাদের সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার পেছনে পরিবারের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও।
আর এই প্রেক্ষাপটে সামনের দিনগুলোতে নিরাপদ ও পরিষ্কার বিদ্যালয় পরিবেশ, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং জেন্ডার সংবেদনশীল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সচেতনে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার বিষয়ক কার্যক্রম আরও জোরদার করতে যৌথভাবে কাজ করার লক্ষ্যে যৌথভাবে কাজ করবে বাংলাদেশ-এর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ।
মাউশি-এর কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ এবং প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোস রবিবার সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে এই উদ্যোগটির সূচনা করেন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের মধ্যে সংবেদনশীল এবং সক্রিয় পরিবেশ তৈরীতে আর দৃঢ় ভূমিকা পালন এবং শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের বৃহত্তর কল্যাণ নিশ্চিতে কাজ করবে এই সমঝোতা সাক্ষর।
এই দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির লক্ষ্য, মাধ্যমিক এবং মাদ্রাসা পর্যায়ে কিশোর কিশোরীদের বয়োঃসন্ধিকালের মানসিক ও জৈবিক পরিবর্তনের সাথে পরিচিতি লাভ, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদানের উদ্দেশ্যে মাউশি'এর গাইডলাইন অনুযায়ী 'জেন্ডার ইকুইটি মুভমেন্ট ইন স্কুল (জেমস)' উদ্যোগটির বাস্তবায়ন। পাশাপাশি, শিক্ষকদের জন্য জেন্ডার রেসপন্সিভ ইনক্লুসিভ পেডাগজি ট্রেনিং ম্যানুয়াল ও সাইকোসোশ্যাল কাউন্সেলিং মডিউল তৈরি ও পরিচালনাসহ নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। আরও রয়েছে, কিশোরকালীন সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কিত জরূরী সাড়াদানসহ পরিচ্ছন্ন, নৈতিক ও সহানুভূতিশীল পরিবেশ, কিশোরিদের জন্য এডোলেসেন্ট কর্নারের ব্যবস্থা, অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান, স্কুল বাগান, স্যানিটারি এবং হাইজিন ট্রেনিং, হ্যান্ড ওয়াশিং স্টেশন ও মাসিক হাইজিন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণসহ নানা কার্যক্রম।
সমঝোতা স্বারক চুক্তি সাক্ষরকালে প্রফেসর নেহাল আহমেদ বলেন, "জেমস পাঠ্যক্রম একটি এমন একটি আন্দোলন যার মাধ্যমে আমাদের তরুণ ছেলে-মেয়েরা সমতাকে আত্মস্থ করছে। জেমস এর অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলি সাধারণত আমরা পরিবারের মধ্যে বা সমাজ হিসাবে আলোচনা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না। এটা একটা বড় অর্জন যে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সাথে আমরা এই পাঠ্যক্রমটি মাদ্রাসায়ও সম্প্রসারিত করেছি।"
কবিতা বোস জানান, মাউশি'র সাথে এই দীর্ঘমেয়াদী অংশীদারিত্ব স্থাপন করে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সম্মানিত এবং আনন্দিত। আমরা আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই মাউশি'কে তাদের ক্রমাগত সমর্থন দিয়ে আমাদের সকল মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-ভিত্তিক কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এসকল কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে, অভিজ্ঞদের মাধ্যমে প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান, জেমস কারিকুলাম প্যাকেজের গুণগত বাস্তবায়নে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এবং পরিদর্শন পর্যবেক্ষণ নিশ্চিতসহ নানা পদক্ষেপ।
২০১৩ সাল থেকে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ দীর্ঘদিন যাবৎ ডিরেক্টরেট অব সেকেন্ডারি এন্ড হায়ার এডুকেশন বাংলাদেশের সাথে কাজ করে এসেছে। দেশে মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (স্কুল ও মাদ্রাসা) 'যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যশিক্ষা' কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মাধ্যমে পরিচালিত 'জেনারেশন ব্রেক থ্রু' প্রকল্পের আওতায় এই কার্যক্রম চালু করা হয়। এই প্রকল্পেটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ফ্যাসিলিটেটরের ভূমিকা পালনের মাধ্যমে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ মাউশি'র সাথে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে চলেছে। মাউশি'র তত্ত্বাবধানে ৬ষ্ঠ এবং ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করছে "জেন্ডার ইকুইটি মুভমেন্ট ইন স্কুলস (জেমস)" কারিকুলাম।
১২- ১৪ বছর বয়সী, শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে এই ২ বছরের জেন্ডার ইকুয়ালিটি মুভমেন্ট ইন স্কুল (জেমস) নামক জেন্ডার সমতা এবং জেন্ডার সহিংসতা-বিরোধী কারিকুলাম, যা বিভিন্ন শিক্ষণীয় পাঠদানের পাশাপাশি নাটক, বোর্ড গেমস, আলোচনা এবং দৈনিক ডায়রি লেখার মত আনন্দদায়ক কার্যক্রমের মাধ্যমে তাদের জ্ঞান বৃদ্ধি এবং জেন্ডার সমতা-ভিত্তিক আচরণ তৈরিতে সহায়তা করবে।
এই সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, মাউশি-এর ডেভেলপমেন্ট ও প্ল্যানিং শাখা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের গৃহীত এই উদ্যোগের ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে কাজ করবে। মাউশি'র ডেভেলপমেন্ট ও প্ল্যানিং শাখার পরিচালক প্রফেসর ডঃ আকম শফিউল আজম ও সহকারী পরিচালক-২ দিল আফরোজ বিনতে-আসির, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের এসআরএইচআরের প্রধান ফেরদৌসী বেগম ও সিএসই উপদেষ্টা সৈয়দ মোঃ নুরুদ্দিন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।