বৃহস্পতিবার পায়রা বন্দর উন্নয়ন কাজ উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: ১০:০৪ পিএম, ২৫ অক্টোবর ২০২২ মঙ্গলবার আপডেট: ১০:০৫ পিএম, ২৫ অক্টোবর ২০২২ মঙ্গলবার
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৭ অক্টোবর পায়রা বন্দরের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। প্রায় ১১ হাজার ৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে পায়রা বন্দরের ক্যাপিটাল ড্রেজিং কাজ ও আটটি জাহাজের উদ্বোধন এবং বন্দরের প্রথম টার্মিনাল, ৬-লেন সংযোগ সড়ক এবং সেতু নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হতে চলেছে ওই দিন। এর মধ্যদিয়ে পায়রা বন্দর তথা দেশের উন্নয়নের ইতিহাসে এক মাইলফলক রচিত হতে যাচ্ছে।
পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ড্রেজিং-এর ফলে বন্দর থেকে সাগরের মধ্যে ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ, ১০০ থেকে ১২৫ মিটার প্রশস্ত, ১০ দশমিক ৫ মিটার গভীরতার একটি চ্যানেল সৃষ্টি হবে। এতে বন্দরে ৪০ হাজার টন কার্গো বা ৩ হাজার কন্টেইনারবাহী জাহাজ ভিড়ানোর সক্ষমতা তৈরী হবে। ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের জন্য ব্যয় হবে ৪ হাজার ৯শ ৫০ কোটি টাকা। বিশ্বখ্যাত বেলজিয়ামভিত্তিক ড্রেজিং কোম্পানি জান ডি নুল ড্রেজিং কাজটি করবে।
পায়রা বন্দরের জন্য নির্মিত আটটি জাহাজ দ্বারা পায়রা বন্দর দেশী-বিদেশী বাণিজ্যিক জাহাজের আগমন-বহির্গমন ও চ্যানেলের সংরক্ষণ কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে পারবে। আটটি জাহাজ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২০৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। আটটি জাহাজের মধ্যে দু’টি পাইলট ভেসেল, দু’টি হেভিডিউটি স্পীডবোট, একটি বয়া লেইং ভেসেল, একটি সার্ভে বোট এবং দু’টি টাগবোট। দু’টি পাইলট ভেসেল নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৫১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, দু’টি হেভি ডিউটি স্পীডবোট নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৬৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এ চারটি জাহাজ নির্মাণ করেছে খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড। আনন্দ শিপইয়ার্ড এন্ড স্লিপওয়েজ লিমিটেড কর্তৃক নির্মিত বয়া লেইং ভেসেল নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, ডকইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড কর্তৃক নির্মিত সার্ভে বোট নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২১ কোটি ৫০ লাখ টাকা, নিউ ওয়েষ্টার্ন মেরিন শীপ বিল্ডার্স লিমিটেড কর্তৃক নির্মিত দু’টি টাগবোট নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনাল, ৬-লেন সংযোগ সড়ক এবং সেতু নির্মাণ সম্পন্ন হলে টার্মিনালটির তিনটি জেটিতে একত্রে তিনটি বিদেশী কন্টেইনার বা বাল্ক কার্গোবাহী জাহাজ এসে ভিড়তে সক্ষম হবে। বন্দরের প্রথম টার্মিনাল নির্মাণে ব্যয় হবে ৪ হাজার ৫শ ১৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করে অপারেশনাল কাজ শুরু করা হবে।
প্রথম টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের উক্ত ব্যয়ের মধ্যে জেটি নির্মাণ কাজের চুক্তিমূল্য ৯শ ১৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা এবং ইয়ার্ড নির্মাণ কাজের চুক্তিমূল্য ১ হাজার ৩৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা। নির্মিতব্য জেটিতে ৪০ হাজার টন ধারণক্ষমতার জাহাজ বার্থিং ও খালাশের সুবিধা রাখা হয়েছে এবং উক্ত জেটিতে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের তিনটি জাহাজ একসাথে বার্থিং করতে পারবে। ইয়ার্ডে হাই কন্টেইনার স্থাপনের সংস্থান রাখা হয়েছে এবং রাবার টায়ার্ড গ্যান্ট্রি ক্রেন (আরটিজি) ব্যবহার করে কন্টেইনার স্টেকিং ও লোডিং-আনলোডিং কাজ সম্পাদন করা হবে। উক্ত ইয়ার্ড ব্যবহার করে বছরে বিশ ফুট দৈর্ঘ্যরে আট লাখ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে।
৬ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ৬-লেনের সংযোগ সড়কটি ডিপিপি এর সংস্থান অনুযায়ী ডিপোজিটরি ওয়ার্ক এর আওতায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃক নির্মাণ করা হচ্ছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃক স্থানীয় দরপত্র আহবানের মাধ্যমে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডকে নিয়োগ করা হয়েছে এবং কাজের চুক্তিমূল্য ৬৫৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে কাজটি শেষ হবে। পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ এর মালামাল পরিবহনের জন্য আন্দারমানিক নদীর উপর ১ হাজার ১৮০ মিটার দীর্ঘ ব্রীজ নির্মাণ করা হবে। এ কাজের প্রাক্কলিত ব্যয় ৭৪০ কোটি টাকা। কাজটি নির্মাণ করতে আনুমানিক ৩০ মাস সময় লাগবে।
এসব উন্নয়ন কাজের ফলে বন্দরটি পরিপূর্ণ সক্ষমতার সাথে কাজ করতে পারবে এবং দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে নতুন মাত্রা যোগ করবে, যার সুফল বাঙালি জাতি যুগ যুগ ধরে ভোগ করবে। ইতোমধ্যে এই বন্দরে ২৩৬ টি সমুদ্রগামী জাহাজ আগমন করেছে, যার মাধ্যমে প্রায় ৫৪৮ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর পায়রা সমুদ্র বন্দর উদ্বোধন করেন।