বিষাক্ত শুঁয়োপোকা
শেখ আনোয়ার
প্রকাশিত: ১১:৪১ এএম, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ শুক্রবার আপডেট: ১১:৪৩ এএম, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ শুক্রবার
অস্ট্রেলিয়ায় বাহারী এক ধরনের শুঁয়োপোকা রয়েছে। এদের গায়ের রঙ কলাপাতার মতো হালকা সবুজ। এদের জ্বলজ্বলে রঙটা দেখে টুপ করে হাতে তুলে নিতে ইচ্ছে করে। দেখলে সে কি আদর! মনে হয় এর মতো নিরীহ সুন্দর প্রাণী পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই। আসলে তুলতুলে সবুজ প্লাস্টিকের খেলনার মতো এই পোকার বাইরের দিক যতোটা সুন্দর, ভেতরটা তেমনি ভয়ানক গরলে পরিপূর্ণ। এদের শরীরে রয়েছে ভয়ংকর বিষ। কোন মানুষের গায়ে এই শুঁয়োপোকা লাগলে জ্বলুনী ধরে। ঘা হয়। যদি কেউ এই শুঁয়োপোকার হুল একবার খায় তাহলেই হয়েছে। অমনি জ্বলুনির চোটে তাল জ্ঞান লোপ পাওয়ার উপক্রম হয়ে যাবে।
ওরা এমন বিষাক্ত কেন? বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বিষাক্ত গাছের পাতার রস খেয়েই ওদের এই বিষাক্ত শরীর গড়ে উঠেছে। কোন বড় পাখি যদি একবার এই সবুজ শুঁয়োপোকা ঠোঁটে তোলে, দ্বিতীয়বার কখনও এই ভুলটি সে আর করবে না। যে পাখি জানে না এই শুঁয়োপোকার ত্বকে মারাত্বক বিষ রযেছে, সে অবলীলায় হামলা চালিয়ে বসে শুঁয়োপোকার ওপর। এতে কখনো গুরুতর আহত হয় শুঁয়োপোকা। অপরদিকে পাখিটির চরম ভাগ্য বিপর্যয় ঘটে। বিষের প্রচন্ড জ্বালা এবং মারাত্বক প্রতিক্রিয়া থেকে যদি পাখিটি কোন মতে পার পেয়েও যায়, বাকি জীবনে আর কক্ষনো নাম নেবেনা শুঁয়োপোকার। কোন প্রাণী যদি লোভনীয় খাবার হিসেবে মুখে তোলে, বিকট গন্ধে সঙ্গে সঙ্গে উগড়ে দিতে বাধ্য হয়।
গবেষকরা জানান, বিষাক্ত এই শুঁয়োপোকা কেপক নামে এক ধরণের তুলা জাতীয় গাছের পাতা খায়। এই পাতা থেকেই তারা পায় শত্রু তাড়ানোর বিষাক্ত দূর্গন্ধ। মাদাগাসকার সহ আফ্রিকার আরও ক’টি দ্বীপে দেখতে পাওয়া যায় এই পোকা। ওদের জ্বলজ্বলে সবুজ রঙের চেহারা দেখলেই পাখিরা সতর্ক হয়ে যায়। আর নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে বিচরণ করে অন্যান্য প্রাণীরা। গায়ের রঙ পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সঙ্গে মিলে যাওয়ায় শিকারী প্রাণীর কবল থেকে আত্মরক্ষার জন্যে ওরা সহজেই ছদ্মবেশ নিতে পারে। সহজেই আত্মগোপন করতে পারে।
বিজ্ঞানীদের কাছে এই পোকা অ্যাটলাস মথ ক্যাটারপিলার নামে পরিচিত। কে জানে, বিষাক্ত এই শুঁেয়াপোকাই হয়তো একদিন জীবন দায়ী ওষুধ হিসেবে মানুষের কাজে আসবে।
শেখ আনোয়ার: বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক। এম.ফিল স্কলার, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।