রাজু ল` ও এক তরুণের সফল আইনজীবি হয়ে ওঠার গল্প
নিউইয়র্ক করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: ০৮:৫৮ পিএম, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ শনিবার আপডেট: ০৯:৩৭ পিএম, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ শনিবার
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি আমেরিকানরা অনেক ক্ষেত্রেই সাফল্যের সন্ধান পেয়েছেন। কেউ শিক্ষায়, কেউ চিকিৎসায়, কেউ আইন পেশায় আবার কেউ ব্যবসায়। এখানে আমরা পাঠকদের একজন তরুণ এটর্নির গল্প শোনাবো যিনি যুক্তরাষ্ট্রে এসে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে এখন আইন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। এবং মাত্র তিন বছরে এখানে বাংলাদেশি-আমেরিকান আইনজীবিদের মধ্যে এখন তার ফার্মটিই সবচেয়ে বড়। এবং বেশ পসার জমিয়েছে।
কি করে এলো এই সাফল্য? সে প্রশ্নটিই করেছিলাম টিমোথি রাজু মহাজনকে। তরুণ এই আইনজীবী উত্তর শুরু করলেন ছেলেবেলার গল্প দিয়ে। জানালেন, বাবার চাকরির সুবাদে তাকে ছেলেবেলায় দেশের বিভিন্ন শহরে কাটাতে হয়েছে। আর প্রতি এক-দুই বছরে নতুন বন্ধু তৈরি করতে হয়েছে। এই বন্ধু তৈরিতে তিনি নিজেকে পটু বলেই দাবি করলেন। বললেন, 'হয়তো এটাই আমার সেরা যোগ্যতা আমি মানুষের সঙ্গে মিশতে পারি, মিশেও যেতে পারি যে কোনো পরিবেশে।'
"সুতরাং আইনজীবীর যে কোট-টাইয়ের বেশ-ভুষা আর মানুষের সঙ্গে দূরত্ব রেখে নিজের চারিদিকে একটা বাতাবরণ তৈরি করে রাখার যে প্রচলিত প্রথা সেটা আমি একটু কমই মানি। সে কারণেই হয়তো মানুষ তার সমস্যাগুলো নিয়ে আমার কাছে আসতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করে।"
হতেই পারে! আইনজীবীর কেতা রাজু মহাজনের মধ্যেই সত্যিই কম। তবে আইনের পাণ্ডিত্য তিনি অর্জন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে।
শুরুটা বাংলাদেশে সাংবাদিকতা ক্যারিয়ার দিয়ে।সাপ্তাহিক ২০০০, রেডিও এবিসি হয়ে রেডিও ফুর্তিতে কাজ করেছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রে এসে ক্যারিয়ার ভাবনায় আইন পেশাকেই বেছে নিলেন এবং যেমন ভাবা তেমন কাজ। আইন বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে শুরু করলেন প্রত্যাশিত পেশা। সব মিলিয়ে রাজু মহাজন নিজেকে তৈরি করে নিয়েছেন বেশ গুছিয়ে। তার কাজটি তিনি বোঝেন এবং করতে পছন্দ করেন। আর সে কারণেই তার পেশায় উন্নতি হচ্ছে।
রাজু মহাজনের সঙ্গে কথা হচ্ছিলো তার চেম্বারে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির ঝকঝকে শহরের অত্যাধুনিক ভবনে তার চেম্বার। সেখান থেকেই পরিচালিত হয় আটলান্টা ও ঢাকার চেম্বার। এরই মধ্যে নিউইয়র্ক, টেক্সাস, মিশিগান, ক্যালিফোর্নিয়াসহ যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে অফিস স্থাপন করার উদ্যোগ নিয়েছেন রাজু মহাজন। এখন তার ব্যবসায় কর্মশক্তি প্রায় অর্ধশত। এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে ব্যবসার অগ্রগতির সাথে সাথে।
প্রধান অধ্যয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট বিষয়ে আন্ডারগ্র্যাড। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে মিডিয়া স্টাডিজে গ্রাজুয়েশন (মাস্টার্স) সম্পন্ন করেন ভার্জিনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে। লিঙ্কন মেমোরিয়াল ইউনিভার্সিটির ডানকান স্কুল অব ল' থেকে ডক্টর অব জুরিসপ্রুডেন্স ডিগ্রি লাভ করেন। সেটা ২০১৯ সাল। বললেন, এই ডিগ্রি নেওয়ার পর অনেকেই এখানে চাকরি খুঁজে নেন। সেটা অনেকটা সহজ ও কম ঝুঁকির। বড় বেতনে কাজ পাওয়া অসম্ভব নয়। কিন্তু আমি আইন ব্যবসাটাই করতে চেয়েছিলাম। আর সে কারণে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিষ্ঠা করলাম রাজু ল' এলএলসি।
শুরুতে দুর্ভাবনা ছিলো, কারণ কোভিড-১৯ এসে হানা দিলো সকল কিছুতে। আইন ব্যবসাও ব্যতিক্রম কিছু ছিলো না। কিন্তু একই সঙ্গে আরেকটি কাজ হলো- কোভিড এর কারণে কোর্টও অনলাইনে চলে গেলো। বিচার হতে শুরু হলো অনলাইনে সাবমিশনের মাধ্যমে। সুতরাং কোর্টে দাঁড়িয়ে প্রতিপক্ষের সঙ্গে বিতর্কের লড়াইটা করতে হলো না। এতে ভ্যালিড কেসগুলো দ্রুতই আদালতের অনুমোদন পেতে শুরু করলো।
সবশেষ একটি হিসাব বলছে, গত ২৭ মাসে রাজু ল' ফার্ম থেকে ৭৩১টি কেস হ্যান্ডল করা হয়েছে এবং তার সাকসেস রেট ৯৯.৫ শতাংশ।
রাজু মহাজন বললেন, একজন আইনজীবীকে দুটি কাজ অত্যন্ত সুচারুভাবে করতে হয়- এক. পেপার ওয়ার্ক ও দুই. কোর্টে সাবমিশন। পেপারওয়ার্কে আমি নিজেকে সিদ্ধহস্ত করে নিয়েছি।
"তাই বলে কোর্টের বিতর্কে আমার ভয় নেই। আমি বিতার্কিক মানুষ। ছাত্রাবস্থায় অনেক বিতর্ক করেছি। কোর্টে আইনি তর্ক করেও আমি নিশ্চিত করতে পারবো আমার মক্কেলদের জয়," বলছিলেন এক সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির তুখোড় তার্কিক ও রেডিও ফুর্তির তুখোড় রেডিও জকি রাজু মহাজন।
তবে আইন পেশায় নিজেকে যোগ্য করে তুলতে রাজু মহাজন, অতীতের যোগ্যতায় নির্ভর করে থাকেন নি। যুক্তরাষ্ট্রে মর্যাদাকর লিঙ্কন মেমোরিয়াল ইউনিভার্সিটি থেকে আইনি ডিগ্রি ছাড়াও তিনি অর্জন করেছেন ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ার কোর্ট অব অ্যাপিল এবং কোর্ট অব অ্যাপিল অব মেরিল্যান্ডের সদস্যপদ।
এইসব যোগ্যতায় ডিসি মেট্রো এলাকা তথা এর সংলগ্ন তিন অঙ্গরাজ্য ওয়াশিংটন-মেরিল্যান্ড ও ভার্জিনিয়ায় ধীরে ধীরে তিনি পসার জমিয়েছেন। এবং বাংলাদেশি কমিউনিটি ছাড়াও অন্য দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের কাছে একটি জনপ্রিয় নাম হয়ে উঠেছে রাজু ল' এলএলসি।
বাংলাদেশ থেকে যারা যুক্তরাষ্ট্রে মাইগ্রেট করতে চান তাদের দেশেই সেবা নিশ্চিত করতে ঢাকার মহাখালীতে নিজস্ব কার্যালয় স্থাপন করেছেন, যা পরিচালিত হচ্ছে স্থানীয়ভাবে নিয়োগকৃত আইনজীবী ও আইনের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে। ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে সেখানেও নিত্য অফিস করছেন রাজু মহাজন। একইসঙ্গে তিনি তার ভার্জিনিয়া, মেরিল্যান্ড ও ডিসির কার্যালয় পরিচালনা করছেন। এবং অতি সম্প্রতি আটলান্টায় স্থাপন করেছেন নতুন কার্যালয়।
'এটা স্রেফ ভার্চুয়াল পদ্ধতির সুবিধা নেওয়া, ' বলছিলেন রাজু মহাজন।
তিনি বলেন, আমরা এই ভার্চুয়াল পদ্ধতির দিকেই যাচ্ছিলাম। কিন্তু কোভিড-১৯ আমাদের দ্রুতই এই পদ্ধতির মধ্যে ঠেলে ঢুকিয়ে দিয়েছে। এখন যে যত তাড়াতাড়ি খাপ খাইয়ে নিতে পারবে, সেই এগিয়ে থাকবে।
রাজু এলএলসি আইনি সেবা দেয় প্রধানত পাঁচটি বিষয়ে:
- রিট অব ম্যান্ডামাস
- ইবি-৩
- ফ্যামিলি বেজড
- এনআইডব্লিউ ও
- স্টুডেন্ট ভিসা
রিট অব ম্যান্ডামাসের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে যারা অবস্থান করছেন এবং এইচওয়ান-বি ভিসার জন্য আবেদন করেছেন তাদের পক্ষে আইনি লড়াই। ইবি-৩'র আওতায় যারা নিজ দেশ থেকে কিংবা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করে নিজস্ব ভিসা স্ট্যাটাস পরিবর্তনের জন্য কোনো একটি কর্মদক্ষতায় এদেশে অবস্থান করতে চান তাদের জন্য আবেদন। ফ্যামিলিভিত্তিক কেস-এর আওতায় যারা বাবা-মা সহ পরিবারের অন্য সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রে আনতে চান তাদের জন্য আবেদন। এনআইডব্লিউ বা ন্যাশনাল ইন্টরেস্ট ওয়েবার এর আওতায় যারা এরই মধ্যে শিক্ষা- গবেষণা বা অন্য কোনো দক্ষতা নিয়ে এই দেশে এসেছেন এবং তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতা এই দেশের জন্য উপযোগী তাদের পক্ষ হয়ে আবেদন। আর স্টুডেন্ট ভিসার জন্য সরাসরি আবেদনের পাশাপাশি যাদের ভিসা ডিসঅ্যাপ্রুভ হয়, তাদের পক্ষ হয়েও আবেদন করা হয় এই ল' ফার্মের মাধ্যমে।
বর্তমানে রাজু ল' ফার্মে রাজু মহাজনের সঙ্গে একই টিমে রয়েছেন আরও দুই সদস্য। এরা হচ্ছেন অ্যাসোসিয়েট অ্যাটর্নি অ্যালিসন পিনো ও ইয়াসমিন আকাদ। রাজু মহাজন রয়েছেন ম্যানেজিং অ্যাটর্নির দায়িত্বে। এছাড়া অ্যাসোসিয়েট অ্যাটর্নি হিসেবে সহায়তা করেন আরও কয়েকজন। এদের মধ্যে রয়েছেন কেনব্রিয়েল অর্ড, ন্যান্সি লাউডারমিল্ক। ল ক্লার্ক হিসেবে রাজু ল' ফার্মে কর্মরত রয়েছেন কেইটলিন মোরান, অ্যালিনা রিজভী, ডেনিয়া অ্যাঞ্জেলিনো ও স্ট্যাসি স্মিথ। এছাড়া কেস ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন জ্যাকলিন বোস, আবদুল্লাহ আর রায়হান ও রোমান উদ্দিনসহ আরও অনেকে।
রাজু ল' ফার্ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ব্রাউজ করুন rajulaw.com।
আবার ফেরা যাক কথোপকথনে। রাজু মহজনের কাছে প্রশ্ন ছিলো- এই যে নতুন নতুন রাজ্যে অফিস নিচ্ছেন এটি কেনো? কাজ যখন ভার্চুয়ালেই হচ্ছে। উত্তরে এই তরুণ আইনজীবি বলেন, বলা যেতে পারে ক্লায়েন্টদের একটা মেন্টাল সেটিসফেকশনের জন্যই এই কার্যালয়গুলো স্থাপন। এখন হয়তো অনেকেই অনলাইনে কিংবা ভার্চুয়ালে বেশি সাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, কিন্তু আবার অনেকেই রয়েছেন যারা আইনজীবীর সঙ্গে সরাসরি দেখা করতে চান, কিংবা একটি অফিসে এসেই তাদের নথিপত্র জমা দিতে চান। অনেকেই তাদের ব্যক্তিগত ডকুমেন্ট অনলাইনে আপলোড করতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। এ ধরনের ক্লায়েন্টদের মানসিক স্বস্তির এই দিকটিও আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আর এ কারণেই এমন মনোভাবের ক্লায়েন্টদের জন্য আমরা অফিসগুলো স্থাপন করেছি এবং করছি।
"আইনি লড়াইয়ে ক্লায়েন্টের আস্থাটিই সবচেয়ে বড় পুঁজি ও শক্তি," বলেন টিমোথি রাজু মহাজন।
যেসব রাজ্যে অফিস স্থাপন করছেন, সেগুলো নির্বাচনের কারণ কি? এমন প্রশ্নে রাজু মহাজন বলেন, নিউইয়র্ক ও আটলান্টায় বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে অনেকেই এখন চাইছেন সেখানে একটি ল' ফার্ম থাকুক যার ওপর পূর্ণাঙ্গ আস্থা রাখা যায়। এটি ওইসব এলাকায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরাও চাইছেন। এখানে একটা পুল ফ্যাক্টর কাজ করছে। স্থানীয়রা চাইছেন বলেই আমি সেখানে আমার কর্মপরিধি বিস্তার করছি।
আরও যারা বাংলাদেশি-আমেরিকান আইনজীবি রয়েছেন, যারা আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী বা প্রতিযোগী, তাদের বিষয়টি কিভাবে দেখছেন? এমন প্রশ্নে রাজু বলেন, এখানে একটু দায়িত্ব নিয়েই আমি একটি কথা বলতে চাই, আমার পর্যবেক্ষণ হচ্ছে- এখানে আইনজীবীদের মধ্যে পারষ্পরিক সম্পর্কটি ভালো তা কোনোভাবেই বলা যাবে না। এমনকি দুই আইনজীবি একসঙ্গে বসে চা খেতেও যেনো চান না। একটা অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতার ছাপ এখানে দেখতে পাই। কিন্তু আইন পেশায় আমি মনে করি, ক্লায়েন্টের সেবাটাই সবচেয় বড় কথা। যিনি যত ভালো সেবা দিতে পারবেন তার পসার তত ভালো জমবে, সেটা সন্দেহাতীত। সুতরাং কাজের সম্পর্ককে ব্যক্তি সম্পর্কের উর্ধ্বে রাখা উচিত।
"সম্প্রতি আমি সে কারণেই একটি উদ্যোগ নিয়ে নিউইয়র্কে একটি সেমিনার করেছি, যেখানে বেশ কয়েকটি ল' ফার্মের কর্ণধাররা সমবেত হই এবং আইনিসেবা কি করে আরও উন্নত করে তোলা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করি। আশা করি, এতে একটি ভালো ফল আসবে," যোগ করলেন রাজু মহাজন।
"দুঃখের বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশি-আমেরিকান আইনজীবিদের নিজেদের মধ্যে একটা দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক বাইরে ফুটিয়ে তোলার কারণে বাংলাদেশি কমিউনিটির মানুষ এখন অন্যদেশের আইনজীবিদের দ্বারস্থ হচ্ছেন এবং তাদের কাছ থেকে আইনি সেবা নিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। এটা দুঃখজনক। আমাদের উচিত হবে, সকলে মিলে কমিউনিটির আস্থা অর্জন করা।"
রাজু মহাজন জানালেন, এখন তিনি আরও দুই ব্যবসায়ীর সঙ্গে একটি ব্যবসায়ী জোট তৈরি করেছেন। তবে তারা আইনজীবী নন। এই দুই ব্যবসায়ীর একজন জসিম উদ্দিন যিনি বীমার ব্যবসায় সম্পৃক্ত। অপরজন মাহবুবুর রহমান যার ব্যবসা বাড়ি কেনার জন্য ঋণ দেওয়া। এই তিন ব্যবসায়ী এখন একমত হয়েছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের যেসব অঙ্গরাজ্যে বাংলাদেশি কমিউনিটির কনসেন্ট্রেশন রয়েছে সেসব অঙ্গরাজ্যে একসঙ্গে তিনটি ব্যবসা পাশাপাশি চালু করবেন। এতে কমিউনিটির মানুষগুলোকে একেকটি সেবার জন্য একেক স্থানে ছুটতে হবে না। একই স্থানে পাশাপাশি অফিসে পেয়ে যাবেন বীমা, ঋণ ও আইনি সুবিধা।
"অল নেসেসারি সার্ভিসেন ইন ওয়ান রো, আন্ডার ওয়ান রুফ," বললেন রাজু মহাজন।
রাজু ল' ফার্মের মূল শক্তি হিসেবে নিজেকে দেখেন না রাজু মহাজন। বরং তিনি এই ফার্মের বিভিন্ন টিমকেই দিতে চান সে কৃতিত্ব। এই ফার্মে রয়েছে:
- ফ্যামিলি ইমিগ্রেশন টিম
- ল' স্যু টিম
- অ্যাসাইলাম টিম
- এনআইডব্লিউ টিম
- ইবি টিম
এই যে সকলে তাকে একসঙ্গে ব্যবসার আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন, কিংবা বিভিন্ন স্টেট থেকে আমন্ত্রণ আসছে সেখানে রাজু ল'র অফিস স্থাপন করার এর কারণটি কি? এমন প্রশ্নে রাজু মহাজন বললেন, এক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় কাজ করেছে। একটি হলো- অধিকাংশ আইনজীবি যখন কথা বলেন তারা অনেক কিছুই রাখঢাক করে বলেন। এর অবশ্যই যৌক্তিক কারণও রয়েছে। কারণ ল' ভীষণরকম বিষয়ভিত্তিক। এখানে কেস বাই কেস ভ্যারিয়েশন থাকে। কিন্তু এর মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ বিষয়ই সাধারণ ও সকল কেসের জন্য প্রযোজ্য। আর তা যে কেউ চাইলে নিজের মতো করেও জেনে নিতে পারেন। এসব ক্ষেত্রে আমি রাখঢাক করি না। যে কেউ জানতে চাইলে তা বলে দেই। এতে মানুষ এক ধরনের আস্থা পায়। আর এখনতো যুগটাই ইনফরমেশনের। ফলে কারো কিছু অজানাও থাকে না।
"ক্লায়েন্টকে আইনের মারপ্যাচের ভয় না দেখিয়ে আইন যে তাদের জন্য কতটা সহজ একটি সমাধান তা আমি তাদের জানিয়ে দিতে দ্বিধা করি না, হয়তো সেটাই এই ভালোবাসা অর্জনের কারণ," বললেন রাজু মহাজন।
নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের কথা উল্লেখ করে রাজু মহাজন বলেন, সেখানে ভিডিওগুলোতে আমি বিষয়গুলো এমনভাবে বুঝিয়ে দেই যে, চাইলে যে কেউ নিজেই তার কেইস ফাইল করতে পারেন। আর কেউ যদি সেটা করেন, তাতে আমার কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু আমি দেখেছি, এতে আমার ক্লায়েন্ট কোনোভাবেই কমছে না।
এখানে আরও এক দফা সেই ডিবেটের কথাই টানলেন। বললেন, স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিতর্ক করার কারণে কোনো বিষয় ক্লায়েন্টকে সাজিয়ে গুছিয়ে বলতে কোনো অসুবিধা হয় না। এটাও একটা প্লাস পয়েন্ট বলে আমি মনে করি।
আরেকটি বিষয়, আমি যতটুকু সময় যাকে দেই, সেটুকু পুরোপুরি উজার করেই দেই। ফলে যারা একবার আমার সঙ্গে কাজ করেন বা সেবা নেন, তারা আমার কাছে আসতে চান। কিংবা তারা অন্যদের রেফার করেন।
কাজটি কোনোভাবেই ব্যবসা হিসেবে দেখতে চান না রাজু মহাজন। শতভাগ সেবার মনোভাব নিয়েই তিনি এই আইনি ব্যবসা পরিচালনা করেন। এবং তার দর্শণ হলো- ভালো সেবা দিলে, অর্থ আসবেই।
আমি চাই এমন একটি ল' ফার্ম প্রতিষ্ঠা করতে যেখানে মানুষ আস্থা পাবে, এবং গৌরবও বোধ করবে, কারণ সোখানে ক্লায়েন্টের প্রত্যাশাটাই সবচেয়ে অগ্রাধিকার পায়।
সেবার সঙ্গে যেহেতু অর্থও জড়িত, সেক্ষেত্রে আপনার ল' ফার্ম কতটা ক্লায়েন্টের আর্থিক সক্ষমতার মধ্যে? এমন প্রশ্নে রাজু মহাজন বলেন, এ ব্যাপারে আমি সম্পূর্ণ খোলামেলা। ওয়েব সাইটেই আমি প্রতিটি কাজের জন্য কত রেট তা তুলে রেখেছি। যেটি সাধারণত অন্য আইনজীবীরা করেন না। তারা ক্লায়েন্ট বুঝে দর হাঁকেন। কারো কারো কাছ থেকে সুযোগ বুঝে বড় অংক নিয়ে নেন এমন অভিযোগও আইনজীবিদের বিরুদ্ধে কম নয়। কিন্তু আমি সেটা করি না। আমি মনে করি এই যে, আমি কোন কেসের জন্য কত অংক প্রয়োজন এটা খোলামেলা জানিয়ে দিচ্ছি এটা আমার সততারই বহিঃপ্রকাশ।
"আমি কোনো কিছু হাইড করতে চাই না। ক্লায়েন্ট বুঝে দাও মারতেও চাই না।"
এতে অন্য আইনজীবিদের কাছ থেকে চাপ আসে কিনা? জানতে চাইলে রাজু মহাজন বলেন, ছোট মার্কেটে বিজনেস করলে হয়তো চাপ আসতো কিন্তু যেহেতু আমি ওয়াশিংট ডিসি থেকে এই আইনি ব্যবসা পরিচালনা করি, এখানে তেমন কোনো চাপ নেই। তাছাড়া আমি একা নই। আমার আগেই আরও দু-একজন জনপ্রিয় আইনজীবি তাদের আইনি সেবার রেট উল্লেখ করে রেখেছেন ওয়েব সাইটে। ধীরে ধীরে এটা একটা ট্রেন্ড হয়ে উঠবে বলেই আমি বিশ্বাস করি।
"আইন ব্যবসায় একটা স্বচ্ছতা আসুক, এটা আমি মনে প্রাণেই চাই," বললেন রাজু মহাজন।
একটি গল্প না শোনালেই নয়। তবে সেটি ভিন্ন গল্প। যুক্তরাষ্ট্রে রাজু মহাজন তার মিডিয়া স্টাডিজ অধ্যয়নের আওতায় গবেষণা করেছিলেন 'ঠাকুর মা'র ঝুলি' নিয়ে। এই গল্পের দুই চরিত্র লাল কমল ও নীল কমল'র কথা সবার জানা। গবেষণায় রাজু মহাজন ওই দুই চরিত্রের সঙ্গে তুলনামূলক আলোচনায় নিয়ে এলেন যুক্তরাষ্ট্রে সৃষ্ট দুই চরিত্র ব্যাটম্যান ও রবিন কে। এতে তিনি দেখালেন এই চরিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে বিষ্ময়কর মিল। এবং গবেষণায় তিনি এটাও দেখালেন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাটম্যান ও রবিন 'ইউনিক' কোনো চরিত্র নয়। এমন চরিত্র আগেও সৃষ্টি হয়েছে এবং বাংলা সাহিত্যেও হয়েছে। সুতরাং এই দুই চরিত্রকে যে আমেরিকান আইকন হিসেবে মানা হতো, মূলত চরিত্রগুলো এমন কিছু নয়। সেটা ২০১৪ সাল। লস এঞ্জেলসে মিডিয়া কনফারেন্সে এই গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে প্রেজেন্টেশন দেন রাজু মহাজন। এতে একটা হৈহৈ পড়ে যায়। কনফারেন্সে সকলের মুখে মুখে এই প্রসঙ্গ যে ব্যাটমান, রবিন অ্যামেরিকান আইকন এমন কিছু নয় যা প্রমাণ করেছে এক তরুণ শিক্ষার্থী।
সেই গবেষণাই এই দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সামনে এগিয়ে চলার মূল প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে, বললেন রাজু মহাজন।