বিশ্ব ইতিহাসে জ্যোতির্ময় পুরুষ বঙ্গবন্ধু
শেখ আনোয়ার
প্রকাশিত: ১১:৫০ পিএম, ১৪ আগস্ট ২০২২ রোববার
বাংলাদেশ নামক স্বাধীন সার্বভৌম ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা তিনি। স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। তাঁরই বজ্রকন্ঠে ধ্বনিত হয়েছিলো স্বাধীনতার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ার উদাত্ত আহবান। বাঙালি জাতির চেতনাকে, ভিতরের সুপ্ত শক্তিকে অভূতপূর্ব যাদুতে নাড়া দিয়েছিলেন এই মহান নেতা। বাঙালির আপোসহীন এই নেতা জেল জুলুম নির্যাতন হুলিয়া সহ্য করেছেন। পূর্ব বাংলার শোষিত বঞ্চিত নিপীড়িত জনগণকে স্বাধীনতার স্বাদ দিয়েছেন। বাঙালি জাতিকে বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশের সুযোগ করে দিয়েছেন। তিনিই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একটি নাম, একটি ইতিহাস। তাঁর সমগ্র জীবনে একটিই ব্রত ছিলো- বাংলা ও বাঙালির মুক্তির জন্য নিজেকে উৎসর্গ করা।
১৯৪৭ সালের ১৫ আগষ্ট থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার যে মহান প্রচেষ্টা, আন্দোলন, সংগ্রাম ও যুদ্ধ চলেছিলো এবং যার রাজনৈতিক ইতিহাস ক্রমান্বয়ে অগ্রসর হয়েছিলো, তার প্রান্তিক পরিণতির সাথে বঙ্গবন্ধু অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত ছিলেন। দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনে জেল-জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন আর স্বৈরশাসকের রক্তচক্ষু ছিলো বঙ্গবন্ধুর নিত্যসঙ্গী। তিনি নিশ্চিত মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন বহুবার। একাধিকবার ফাঁসির মঞ্চ তৈরি হয়েছিলো তাঁর জন্য। বাঙালির প্রতি তাঁর বিশ্বাস ও আস্থা ছিলো আকাশচুম্বী। সেজন্যই হাসিমুখে, নির্ভীক চিত্তে মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সব ধরনের জুলুম-নির্যাতন বরণ করেছেন।
১৯৭১ সালে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিরল ও অনন্য এক ঘটনা হয়ে ঠাঁই নিয়েছে বিশ্বের ইতিহাসের পাতায়। পাকিস্তানী অপশাসনের শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে রক্তক্ষয়ী সেই মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশে নিয়ে আসে নতুন প্রভাত। জাতির ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ পুরুষ বঙ্গবন্ধুর অমর কীর্তি স্বাধীন এই বাংলাদেশ। ভাবলে বিস্ময় জাগে মনে! কি ছিলো তাঁর নিখাদ দেশপ্রেম? বজ্র কঠিনসম দৃঢ়তা। সত্য এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠায় অনমনীয় যোদ্ধা হিসেবে যাঁরাই শেখ মুজিবের সংস্পর্শে এসেছেন তাঁরাই এক বাক্যে স্বীকার করেছেন তাঁর ছিলো দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্ব। লক্ষ্য অর্জনে ছিলেন অবিচল। মানুষ মুগ্ধ হয়, সাহস পায়, প্রেরণা পায় এই নেতার সহজ সরল দৃষ্টিভঙ্গী এবং বিরল নেতৃত্বগুণে। গবেষকরা বলেন, ‘তাঁর মধ্যে অসাধারণ এক আকর্ষণী শক্তি ছিলো। যাকে বলে ক্যারিশমা। তিনি তাঁর ক্যারিশম্যাটিক ক্ষমতায় জনগণকে বুঝতেন এবং বুঝাতেন। জনগণের সঙ্গে সহজেই মিশে যেতে পারতেন। জনগণের মুখের ভাষা, অন্তরের ভাষা জানতেন, বুঝতেন। তাদের উদ্বুদ্ধ করতে পারতেন।’ তাঁরই মন্ত্রে, তাঁরই উদ্দীপনায় পুরো বাঙালি জাতি সময়ের সঙ্গে নিজেদের অধিকার আদায়ের উদ্দেশ্যে জেগে ওঠে। তাঁরই বজ্রকন্ঠে ধ্বনিত হয় স্বাধীনতার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ার সেই উদাত্ত আহবান। তাঁর ৭ই মার্চের ভাষণ মন্ত্রের মতো সমগ্র বাঙালি জাতিকে পৃথিবীর একটি সুপ্রশিক্ষিত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে খালি হাতে লড়াইয়ে নামতে এবং সেই লড়াইয়ে জিততে উদ্বুদ্ধ করেছিলো। বাঙালি জাতিকে বীরের জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে আত্মপ্রকাশের সুযোগ করে দিয়েছিলেন।
আমৃত্যু একটি গণতান্ত্রিক, প্রগতিবাদী ও অসা¤প্রদায়িক সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি একটি দেশের স্রষ্টা। যিনি সমগ্র দেশের মানুষকে একসূত্রে গেঁথেছিলেন। আমরা যে স্বাধীন মানুষ, এই উপলব্ধিটা এসেছে শেখ মুজিবের কাছ থেকেই। বাঙালির স্বাধীনভাবে বাঁচার স্পৃহা জোরদার হয়েছে একমাত্র তাঁর কারণেই। শেখ মুজিবের খ্যাতি কোন পর্যায়ে উন্নীত হয়েছিলো, কিউবার রাষ্ট্রপ্রধান ফিদেল ক্যাস্ত্রোর এক বক্তব্যে তা স্পষ্ট হয়। ১৯৭৩ সালে আলজিয়ার্সে জোট নিরপেক্ষ দেশগুলোর সম্মেলন চলাকালীন ফিদেল ক্যাস্ত্রোর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। পরে ক্যাস্ত্রো সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি। কিন্তু আমি শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্বের দিক দিয়ে বলুন কিংবা সাহসিকতার দিক দিয়ে। আমার কাছে এই মানুষটাই হিমালয়।’
পৃথিবীর ইতিহাসে শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষণজন্মা লড়াকু নেতা। ক্ষণজন্মা মহান মানুষের তালিকা খুব লম্বা থাকে না। হাতেগোনা সংখ্যা থেকেই তাদের খুঁজে নিতে হয়। এসব কৃতী মানুষ নিজের কর্মেই সমাজে, দেশে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জ্যোতি ছড়ান। বিশ্ব ইতিহাসে এমন একজন জ্যোতির্ময় পুরুষ বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনিই প্রতিষ্ঠা করেছেন বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তিনি। জাতীয়-আন্তর্জাতিক চক্রান্ত প্রতিহত করে ১৪০টি দেশের স্বীকৃতি লাভ এবং ১৯৭৪ সালে সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভ এবং একইসঙ্গে ইসলামিক সম্মেলন সংস্থার সদস্য পদ লাভ করতে বঙ্গবন্ধুর সরকার সমর্থ হয়। ১৯৭৩ সালে কমনওয়েলথ, জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্ব খাদ্য সংস্থা ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামের সদস্য পদ লাভ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুই প্রথম বাঙালি যিনি জাতিসংঘে প্রথম বাংলায় ভাষণ দেন এবং বাংলাকে জাতিসংঘের স্বীকৃত ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। ভারতের সঙ্গে ২৫ বছরের মৈত্রী ও শান্তিচুক্তি, ফারাক্কার পানিবণ্টন চুক্তিতে বাংলাদেশের জন্য ৪৪ হাজার কিউসেক পানির ব্যবস্থা বঙ্গবন্ধুর শাসনামলের বিরাট সাফল্য। মাত্র সাড়ে ৩ বছরের শাসনামলে একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বিশ্ব শান্তি পরিষদ কর্তৃক সংগ্রাম, স্বাধীনতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় তার অমূল্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে জুলি ও কুরি শান্তিপদক প্রাপ্তি আজও সব বাঙালির জন্য গৌরবের।
এই হিমালয় সদৃশ মানুষ স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতি হারিয়েছে এ মাসে। স্বাধীনতার পর দেশে সমস্যার কোনো অন্ত ছিলো না। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশে ছিলো না অবকাঠামো ব্যবস্থা। অর্থনীতির অবস্থাও ছিল করুণ। এ অবস্থা থেকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ও দৃঢ় পরিচালনায় দেশ একটি সুন্দর গন্তব্যের দিকে যাচ্ছিলো। জাতির জনকের দূরদর্শিতায় ১৯৭৪-এর প্রায় দুর্ভিক্ষ অবস্থা মোকাবেলাও বাংলাদেশ করেছে। কিন্তু মানুষের ভেতর উদ্দীপনা ছিলো, সহনশীলতা ছিল, শিক্ষার প্রতি অনুরাগ ছিলো এবং অসা¤প্রদায়িক একটা চেতনাও ছিলো। বঙ্গবন্ধু একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। বাঙালিকে একটি উন্নত সমৃদ্ধ মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। তিনি যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলছিলেন, ঠিক সেই সময় স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরের মাথায় ঘাতকের বুলেটের নির্মম আঘাতে প্রাণ হারান তিনি। নির্মমভাবে সপরিবারে নিহত হন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। দিনটি বাঙালি জাতির জীবনে সবচেয়ে কলঙ্কময়, বেদনার দিন। এ দিনে কাকডাকা ভোরে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে কাপুরুষোচিত হামলা চালায় ঘাতকরা। এ নারকীয় হামলায় ভবনের প্রতিটি তলার দেয়াল, জানালার কাচ, মেঝে ও ছাদে রক্ত, মগজ ও হাড়ের গুঁড়ো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যায়। গুলির আঘাতে দেয়ালগুলোও ঝাঁজরা হয়ে যায়। চারপাশে রক্তের মধ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যায় ঘরের জিনিসপত্র। দেখা যায়, প্রথম তলার সিঁড়ির মাঝখানে নিথর পড়ে রয়েছেন চেক লুঙ্গি ও সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লাশ। তার তলপেট ও বুক ছিলো বুলেটে ঝাঁজরা। পাশেই পড়ে ছিলো তাঁর ভাঙা চশমা ও অতি প্রিয় তামাকের পাইপ।
এভাবেই নারকীয় পৈশাচিক ভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এমন ভয়াবহভাবে হত্যার ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম এই হত্যাকান্ডে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসের, জাতির জনকের জ্যেষ্ঠ পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, দ্বিতীয় পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, কনিষ্ঠ পুত্র শিশু শেখ রাসেল, নব-পরিণীতা পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি ও তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মণি, স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক ও জাতির জনকের ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তাঁর ছোট মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, কনিষ্ঠ পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত আবদুল্লাহ বাবু, ভাইয়ের ছেলে শহীদ সেরনিয়াবাত, আবদুল নঈম খান রিন্টু, বঙ্গবন্ধুর প্রধান নিরাপত্তা অফিসার কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ ও কর্তব্যরত অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিহত হন। শুধুমাত্র তাঁর দুই কন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা সে সময় জার্মানীতে অবস্থান করার কারণে প্রাণে বেঁচে যান।
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর গোটা বিশ্বে নেমে আসে তীব্র শোকের মাতম। নোবেল জয়ী পশ্চিম জার্মানীর নেতা উইলি ব্রানডিট বলেন, ‘শেখ মুজিবকে হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যে বাঙালি শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পারে তারা যে কোন জঘন্য কাজ করতে পারে।’ ভারত বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ও বিশিষ্ট সাহিত্যিক নীরদ সি চৌধুরী বাঙালিদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, ‘বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি বিশ্বের মানুষের কাছে নিজেদের আত্মঘাতী চরিত্রই তুলে ধরেছে।’ দ্য টাইমস অব লন্ডন এর ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট সংখ্যায় উল্লেখ করা হয়- ‘সবকিছু সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুকে সবসময় স্মরণ করা হবে। কারণ তাঁকে ছাড়া বাংলাদেশের বাস্তব কোন অস্তিত্ব নেই।’ একই দিন লন্ডন থেকে প্রকাশিত ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় বলা হয়, ‘বাংলাদেশের লাখ লাখ লোক শেখ মুজিবের জঘন্য হত্যাকান্ডকে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করবে।’
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা জাতীয় ইতিহাসের সবচেয়ে বেদনাবিধুর, কলঙ্কিত ও বিভীষিকাময় একটি ঘটনা। বাংলাদেশ ও বাঙালির সবচেয়ে হদয়বিদারক ও শোকের দিন। মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত স্বাধীনতাবিরোধী, বাংলাদেশ বিরোধী দেশীয় বেঈমান ও তাদের আন্তর্জাতিক মুরুব্বিদের পরাজয়ের সুপরিকল্পিত জঘন্য ও কাপুরুষোচিত নির্মম প্রতিশোধ ছিলো এ রাজনৈতিক হত্যাকান্ড। হত্যাকারীরা শুধু ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি। বঙ্গবন্ধুর গড়া ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশটাও হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে পরবর্তীকালে দেশ ও জাতিকে বিপথগামী করার অপপ্রয়াস চালানো হয়। পনেরই আগস্টের পর অন্ধকারের অতল গহŸরে তলিয়ে যায় বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর সাধের বাংলাদেশ চলে যায়, পাকিস্তানি ভাব ঘরানার বিএনপি, জামাত-স্বৈরাচার শক্তির হাতে। তারা এ দেশের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে নানা পাঁয়তারা করে। অপশাসকদের রোষানলে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণও যেনো নিষিদ্ধ হয়ে পড়ে। হত্যাকারীদের বিচার থেকে রেহাই দিতে তারা জারি করে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত সেসব খুনি দীর্ঘদিন ছিলো বিচারের আওতাবহির্ভূত। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা সচল হয়। দেরিতে হলেও বিচার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কয়েকজনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়েছে। অন্যরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন দেশে। পলাতক খুনিদের দেশে এনে তাদের শাস্তি কার্যকর করা সরকারের কর্তব্য ।
বঙ্গবন্ধু মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে পেরেছিলেন এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতিকে কাজ করতে শিখিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, জনগণের প্রতি ভালোবাসা আর স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের জন্য বেঁচে থাকবেন অনন্তকাল। সত্যিই আজও বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধু এক আদর্শের নাম। যাঁর জাদুর কাঠিতে বাংলা হয়েছে সোনাফলা দেশ। বঙ্গবন্ধু শুধু একটি শব্দ নয়। বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার স্থপতি। স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্বের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। সব থেকে সফল বাঙালি রাজনৈতিক নেতা হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু শুধু বাঙালীর নেতা বঙ্গবন্ধু নন। তিনি বিশ্ব নেতায় পরিণত হয়ে অভিহিত হয়েছেন বিশ্ববন্ধু হিসেবে। বঙ্গবন্ধু সারাবিশ্বের মানুষের কাছে অনুকরণীয়। বাংলার দুঃখী মানুষের বন্ধু, বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেতা বঙ্গবন্ধু জন্মেছিলেন বলেই আমরা এই স্বাধীনতা পেয়েছি। আজ আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। তিনি যদি না জন্মাতেন আমরা আজও পাকিস্তানের দাসত্বের নিগড়ে আবদ্ধ থাকতাম। যাঁর ব্যক্তিত্ব এবং কর্মকান্ড বাংলাদেশের মানুষের গভীরতম প্রদেশকে অনুপ্রাণিত করেছিলো। সেই জাতির পিতাকে হারিয়ে আজ আমরা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করছি তাঁর অভাব। কানে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে- ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেতো, বঙ্গবন্ধু মরে নাই..’।
লেখক: এম.ফিল গবেষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।