অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

৬ জেলায় প্রাণ গেল ১৯ জনের

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৫:০৭ পিএম, ১৬ জুলাই ২০২২ শনিবার   আপডেট: ০৫:১১ পিএম, ১৬ জুলাই ২০২২ শনিবার

ছয় জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত হয়েছেন। শনিবার (১৬ জুলাই) ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে পৃথক দুর্ঘটনায় টাঙ্গাইলে ৭ জন, বগুড়ায় ৭ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২ জন, গাজীপুরে ২ জন, দিনাজপুরে ১ জন ও নীলফামারীতে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের দুল্যা মনসুর ও পাকুল্যা এলাকায় পৃথক দুর্ঘটনায় ৭ জনের প্রাণহানি হয়েছে। মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে দুল্যা মনসুর নামক স্থানে থেমে থাকা বালুভর্তি ট্রাকের সঙ্গে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেই সঙ্গে কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন। এদিন ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের দুল্যা মনসুর নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। 

গোড়াই হাইওয়ে থানার ওসি মোল্লা টুটুল জানান, ঢাকাগামী থেমে থাকা একটি বালুভর্তি ট্রাককে পেছন দিক থেকে যাত্রীবাহী বিনিময় পরিবহনের একটি বাস ধাক্কা দিলে বাস-ট্রাক দুটোই দুমরে-মুচরে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন মারা যান। খবর পেয়ে হাইওয়ে থানা পুলিশ, মির্জাপুর থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার কাজ চালায়। আহতদের উদ্ধার করে কুমুদিনী হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে আরও একজন মারা যান। সকাল ৭টার দিকে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

এদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর উপজেলার পাকুল্যা বাস স্টেশনে বাসচাপায় মা-মেয়ে-ছেলের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এতে মহাসড়কের দুই পাশে ৩০ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। 

পাকুল্যা এলাকার বাসিন্দা গোলাম নওজব পাওয়ার চৌধুরী জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একজন নারী তার দুই শিশু সন্তান নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন। এসময় উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকাগামী একটি বাস তাদের চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই ৭ বছরের মেয়ের মৃত্যু হয়। আহত হন মা ও ছেলে। তাদের উদ্ধার করে জামুর্কি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মা ও ছেলের মৃত্যু হয় বলে তিনি জানান। প্রাথমিকভাবে তাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

খবর পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (মির্জাপুর-নাগরপুর সার্কেল) এ এস এম আবু মনসুর মুসা, মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম, হাইওয়ে থানার ওসি মোল্লা টুটুলসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান।

এদিন পৃথক দুর্ঘটনায় বগুড়ার তাড়াশ ও কাহালুতে পৃথক দুর্ঘটনায় ৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, সিরাজগঞ্জের তাড়াশে বাস-ট্রাকের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। শনিবার দুপুরে হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের খালকুলা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের নাম পরিচয় জানা যায়নি।

হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লুৎফর রহমান বলেন, ঢাকাগামী একটি যাত্রীবাহী বাস দুপুরে খালকুলা বাজার এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন মারা যান। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হন। তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। 

কাহালু (বগুড়া) সংবাদদাতা জানান, বগুড়ার কাহালুতে পিকআপের ধাক্কায় প্রাইভেটকারের ৪ জন যাত্রী নিহত হয়েছেন। এসময় আহত হয়েছেন আরও ৩ জন। এদিন সকাল পৌনে ৮টার দিকে শান্তাহার সড়কের কাহালু উপজেলার দরগাহাট বাসস্ট্যান্ড থেকে ১ কিলোমিটার আগে রোকেয়া ফিলিং স্টেশনের পাশে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

কাহালু থানার এসআই আলামিন দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, পিকআপের ধাক্কায় স্পটে প্রাইভেটকারের ৩ যাত্রী নিহত হন। আরও ১ জন বগুড়া শহীদ জিয়া মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন মারা যান।’ এসআই আরও বলেন, ‌‘আহত আরও ৩ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন বগুড়া শহীদ জিয়া মেডিক্যাল কলেজে। তবে, তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতদের নাম-ঠিকানা জানা যায়নি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রাইভেটকার ও সিএনজি চালিত অটোরিক্সার মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জনের মৃত্যু ও পুলিশ সদস্যসহ ৪ জন আহত হয়েছে। শনিবার দুপুরে মহাসড়কে সদর উপজেলার উজানিসা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন জেলার কসবা উপজেলার খাড়েরা মধ্যপাড়া গ্রামের মৃত আবদু মিয়ার ছেলে বিল্লাল হোসেন (৫৫) ও সদর উপজেলার মজলিশপুর ইউপির আব্দুল মন্নাফের ছেলে সিএনজি চালক চাঁন বাদশা। 

আহতরা হলেন একই পরিবারের সিএনজি যাত্রী শাকিল আহমেদ (২৭), মাতা শিরিন আক্তার (৫০) ও স্ত্রী মিতু আক্তার (২৫)। এছাড়াও এ ঘটনায় সিএনজির অপর যাত্রী পুলিশ সদস্য হাসিবুল হাসান (২৫) আহত হয়। সে আখাউড়া উপজেলার ছতুরা শরীফ গ্রামের ফজলু ভুইয়ার ছেলে।  

আহতরা জানান, সকালে কসবা উপজেলার খাড়েরা থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসছিল। অটোরিকশাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উজানিসার এলাকায় আসার পর অপর দিক থেকে একটি প্রাইভেটকার এসে সিএনজিটিকে মুখোমুখি ধাক্কা দেয়। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক বিল্লাল হোসেনকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিএনজিচালক চাঁন বাদশা মারা যান।

এ বিষয়ে খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুখেন্দু বসু জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ না থাকায় নিহতদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত হয়েছে। ভোরে মহানগরের পুবাইলের বসুগাঁওয়ে ট্রাক-লেগুনা, একই এলাকায় সুকুন্দী ব্রিজ এলাকায় অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছে।

পুবাইল থানা পুলিশের এসআই আবুল কাশেম জানান, পুবাইলের বসুগাঁও-এ ভোর ৪টার দিকে টঙ্গীগামী ট্রাকের সঙ্গে উল্টোপথে আসা নরসিংদীগামী লেগুনার সংঘর্ষ হয়। এতে লেগুনার ১২ জন যাত্রী আহত হন। আহতদের মধ্যে মনিরুজ্জামান (৩৮) নামে একযাত্রী ঘটনাস্থলেই মারা যান। আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। 

সকাল সাড়ে আটটায় পুবাইলের সুকুন্দিবাগ ব্রিজ এলাকায় অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে ইব্রাহিম হোসেন (৩৪) নামে এক যাত্রী নিহত হয়েছেন। ইব্রাহিম নরসিংদী মনোহরদী থানার ইদ্রিস আলীর ছেলে।

পুবাইল থানা পুলিশের এসআই জাহাঙ্গীর মাহমুদ জানান, সকাল সাড়ে ৮টায় অটোরিকশা দিয়ে জয়দেবপুর থেকে টঙ্গী যাচ্ছিলেন ইব্রাহিম। এ সময় তাকে বহনকারী অটোরিকশাটি সুকুন্দীবাগ ব্রিজ এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা অপর একটি অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। আহত অটোচালকদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, জলঢাকার টেংগনমারী-মীরগঞ্জ সড়কের কিসামত বটতলা শান্তিনগর বাজারে বেপরোয়া গতির একটি ট্রাকের চাপায় এক ভ্যানচালক নিহত হয়েছেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ভ্যানচালকের নাম আজিজুল হক (৪৫)। তিনি জলঢাকা উপজেলার আরাজি কাঠালি বালাপাড়া এলাকার মৃত তৈয়ব আলীর ছেলে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে জলঢাকা থানা পুলিশের উপপরিদর্শক নুরুল হক বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে এসে লাশ উদ্ধার করেছি। ট্রাকটি আটক করা হলেও চালক পলাতক রয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ চলমান আছে।

খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুরের খানসামা উপজেলা সদরে ট্রাকের ধাক্কায় এক মোটরসাইকেল চালক নিহত হয়েছে। নিহত মোটরসাইকেল চালক জাকির হোসেন (২৬) উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের একরামুল মেম্বার পাড়ার তফসের আলীর ছেলে ও আমতলী বাজারের ব্যবসায়ী। শনিবার দুপুর ১টার দিকে খানসামা ব্র্যাক অফিসের সামনের সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী, ফায়ার সার্ভিস ও থানা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মোটরসাইকেল চালক জাকির হোসেন খানসামা বাজার থেকে আমতলী যাওয়ার পথে ট্রাকের ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়ে রাস্তায় পড়ে যান। পরে এলাকাবাসী প্রথমে তাকে খানসামা উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেয় এবং সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে খানসামা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের সদস্যরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।