৮ কোটি ৬১ লাখ গাছ মুজিববর্ষে, সবুজময় বাংলার হাতছানি
বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০১:৫৮ পিএম, ১৭ নভেম্বর ২০২০ মঙ্গলবার আপডেট: ০২:৩৭ পিএম, ১৭ নভেম্বর ২০২০ মঙ্গলবার
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাছের চারা লাগান গণভবন চত্ত্বরে, হেলিকপ্টারে দুর্গম পাহাড়ে ছেটানো হয় সিডবল
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী-মুজিববর্ষে নেওয়া বিশেষ কর্মসূচির আওতায় সারাদেশে ১ কোটি গাছের চারা রোপন করা হয়েছে। এই চারা লাগানো হয়েছে সরকারের সাধারণ ও নিয়মিত বনায়ন কর্মসূচির বাইরে।
গাছের ধরণ ভেদে একটি গাছ থেকে অন্যটি ১৫ থেকে ৩০ ফুট দূরত্বে রোপণ করতে হয়। সে হিসেবে কেবল মুজিব বর্ষের কর্মসূচির কারনেই দেশে নুন্যতম ২ বর্গ কিলোমিটার নতুন বন তৈরি হবে।
তবে মুজিববর্ষের এই বিশেষ কর্মসূচিসহ চলতি বছরে বন বিভাগের মাধ্যমে দেশে মোট ৮ কোটি ৬১ লাখ ৬২ হাজার গাছ রোপণ করা হয়েছে। যার মাধ্যমে প্রায় ২০ বর্গকিলোমিটার অঞ্চল বনায়ন সম্ভব হয়েছে।
এই বছরই দেশে প্রথম হেলিকপ্টার দিয়ে সিডবল ছিটিয়ে বনায়ন করা হয়েছে দুর্গম পাহাড় ও উপকূল অঞ্চলে।পরিণত হয়ে উঠলে দেশকে আরও সবুজময় করে তুলতে ভূমিকা রাখবে এই গাছগুলো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৬ জুলাই গণভবণ প্রাঙ্গণে বেশ কয়েকটি গাছের চারা রোপণ করে এই ১ কোটি গাছ লাগানোর কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এরপর থেকে পুরো বর্ষা মওসুম ধরে মন্ত্রিসভার সদস্যরা, সংসদ সদস্যরা, রাজনীতিক নেতারা এই মুজিববর্ষের বিশেষ বৃক্ষরোপণে অংশ নেন। এবং দেশের বিভিন্ন অংশে গাছ লাগান। গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্য, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় ১ কোটি চারা বিতরণ ও রোপণের কাজ শেষ করা হয়।
গণভবন চত্বরে সেদিন তিনটি গাছের চারা রোপণ করেন প্রধানমন্ত্রী। একটি তেঁতুল, একটি ছাতিয়ান ও একটি চালতা গাছের চারা রোপণ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর এই কর্মসূচির উদ্বোধনের ওই দিনই দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় তিনটি চারা-একটি ফলদ, একটি বনজ এবং একটি ঔষধি গাছের চারা আনুষ্ঠানিকভাবে লাগানো হয়। আর পরে ১৬ জুলাই থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৃক্ষরোপণ মৌসুমে দেশের ৪৯২টি উপজেলার প্রতিটিতে ২০ হাজার ৩২৫ টি চারা রোপণ করা হয়।
এক কোটি চারার মধ্যে:
বনজ প্রজাতি- চাপালিশ, কড়ই, মেহগনি, কদম, গামারি, জারুল, বকুল, চিকরাশি, সোনালু, হিজল, মহুয়া, শিমুল, কৃষ্ণচূড়া ইত্যাদি।
ফলদ প্রজাতি- জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, আমড়া, জলপাই, কাঠ বাদাম, বেল, তেঁতুল, চালতা, লটকন ইত্যাদি
ওষধি প্রজাতি- আমলকি, হরিতকি, বহেরা, অর্জুন ইত্যাদি।
”জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে প্রথম বৃক্ষরোপণ অভিযান শুরু করেছিলেন, তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ‘মুজিববর্ষে’ এই কর্মসূচিটি বাস্তবায়ন করা হলো”
গত ১২ নভেম্বর তথ্য অধিদফতরের সভাকক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এক কোটি বৃক্ষের চারা বিতরণ ও রোপণ কর্মসূচি সফলভাবে সম্পাদন উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন এ কথা বলেন।
তার দেওয়া তথ্যমতে, মুজিববর্ষের এই বিশেষ কর্মসূচিসহ চলতি বছরে বন বিভাগের মাধ্যমে দেশে মোট ৮ কোটি ৬১ লাখ ৬২ হাজার গাছ রোপণ করা হয়েছে।
সে হিসেবে দেশের এই এক বছরের বনায়নে দেশে প্রায় ২০ বর্গকিলোমিটার নতুন বন তৈরি হবে। তবে এসব গাছ সামাজিক বনায়নেই বেশি লাগানো হয়েছে। ফলে সামাজিক জীবনযাপনকেই সবুজময় করবে এই বনায়ন।
দেশের সবুজায়নে বিভিন্ন পদ্ধতিতে গাছ লাগানো হয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম ছিলো পাহাড়ে ও উপকূলাঞ্চলে হেলিকপ্টার থেকে সিডবল ছিটিয়ে বনায়ন প্রক্রিয়া।
গত ২০ ও ২১ সেপ্টেম্বর উপকূলীয় এবং পার্বত্য এলাকায় বনায়নের উদ্দেশে হেলিকপ্টারে বীজ ছিটানোর কার্যক্রম পরিচালনা করে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। দেশের আকাশসীমা রক্ষার পাশাপাশি বিমান বাহিনীর এই উদ্যোগ ছিলো প্রশংসনীয়। বন অধিদফতরের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশের উপকূলীয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের দুর্গম এলাকায় বনায়ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই সিডবল ছিটায় বিমানবাহিনী। বনায়নের জন্য নির্বাচিত স্থানগুলো দুর্গম ও সড়কপথে যাতায়াতের অনুপযোগী হওয়ায় হেলিকপ্টারের মাধ্যমে এসব এলাকায় বীজ ছিটানোর কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
এসব গাছ
- জলবায়ু পরিবর্তন রোধ,
- কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনা,
- অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ানো,
- খাদ্য-পুষ্টির উৎস বাড়ানো
- বৃক্ষাচ্ছাদন বাড়ানোসহ
দেশের পরিবেশ ও প্রতিবেশ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।'
পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ দেশের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব। সবাই সম্মিলিতভাবে প্রকৃতি সংরক্ষণের লক্ষ্যে কাজ করলেই দেশের পরিবেশ উন্নত করা সম্ভব। '
মুজিববর্ষের এক কোটি চারা রোপণের পাশাপাশি চলতি বছরে বন অধিদফতর
- ১৪ হাজার ৬৬৯ হেক্টর ব্লক বাগান,
- ১ হাজার ৬১০ কিলোমিটার স্ট্রিপ বাগান এবং
- উপকূলীয় এলাকায় ১০ হাজার ৭৭ হেক্টর ম্যানগ্রোভ বাগান সৃজনের মাধ্যমে ৭ কোটি ৪৬ লাখ ৮২ হাজার চারা রোপণ করেছে।
এছাড়াও জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে মোট ১৪ লাখ ৮০ হাজারটি বিভিন্ন প্রজাতির বনজ, ফলদ ও ওষধি বৃক্ষের চারা সারাদেশে রোপণের জন্য বিতরণ করা হয়েছে।
তবে গাছ লাগালেই হবে না, দেশের সবুজায়নে এইসব গাছের ভূমিকা নিশ্চিত করতে তার সঠিক পরিচর্যা করতে হবে। গাছগুলো বড় হয়ে উঠতে দিতে হবে।
চারাগুলো পরিণত গাছ হয় উঠলে আগামী ৫ বছর জিআইএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে উপজেলাভিত্তিক বৃক্ষ আচ্ছাদন পরিমাপের উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী। এছাড়া গাছের বেড়, উচ্চতা ও এতদঞ্চলের জন্য প্রযোজ্য হিসাব অনুযায়ী গাছে জমাহওয়া কার্বনও মেপে দেখা হবে। যা দেশের সবুজায়নে প্রকৃতির উন্নয়নে মুজিব বর্ষের অবদান হিসবেই চিহ্নিত করার সুযোগ থাকবে।