বাবুল মৃধার ‘বিনামূল্য স্টোর’
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: ০৫:৩৩ পিএম, ১৫ নভেম্বর ২০২০ রোববার আপডেট: ০৭:৪৬ পিএম, ১৫ নভেম্বর ২০২০ রোববার
বাবুল মৃধা শরীয়তপুর থেকে ঢাকার ইস্কাটনে আবাস গেড়েছেন ১৯৭৬ সালে। প্রায় ৩০ বছর ধরে সেখানে মুদিখানার ব্যবসা করেন তিনি। প্রতিদিন হরেক রকমের খদ্দের আসেন তার দোকানে। কোনো খদ্দের কখনো কখনো হাজার টাকার মুদি সামগ্রি কিনে নিয়ে যান তার দোকান থেকে। আবার কেউ কেউ ১ টাকা ২ টাকা ভিক্ষা চাইতেও আসেন। এরকম বিষয়গুলো ভাবাতো বাবুল মৃধাকে। তিনি কষ্ট পেতেন এই ভেবে, অনেকের কতই না আছে, আর অনেকের এমন কম আছে, যা দিয়ে দুবেলা খাবারের জোগার করতে পারেননা।
করোনা মহামারী শুরুর পর তিনি গরীব মানুষের কষ্ট দেখেছেন খুব কাছ থেকে। কষ্টটা এমনই ছিল, অসহায় মানুষগুলোর মুখের ভাষা বদলে গেছে। যারা ১ টাকা ভিক্ষা চাইতো, তারা টাকা না চেয়ে, বলতো ভাত খাবো টাকা দেন।
এসব দেখে বাবুল মৃধা সিদ্ধান্ত নিলেন, অসহায় ক্ষুধার্ত মানুষদের জন্য তিনি কিছু করবেন।
গত জুলাই মাসে বাবুল মৃধা তার ইস্কাটন রোডের মুদি দোকান বাবুল স্টোরের সামনে, একটি র্যাকে খাবার সাজিয়ে রাখতে শুরু করলেন। খাবারের মধ্যে রুটি, কলা , ডিম, বিস্কুট আর পানি। র্যাকে নোটিশও টানালেন একটা। সেখানে লেখা- এখান থেকে খাবার নিতে কারো অনুমতি লাগবেনা। যার যতটুকু প্রয়োজন, দয়া করে নিয়ে যান।
বেশ সাড়া ফেললো তার এই উদ্যোগ। চেয়ে নেওয়ার লজ্জায় পরতে না হওয়ায় অসহায়, ক্ষুধার্ত মানুষেরা খাবার নিতে থাকলেন এখান থেকে। মানুষ হাতে খাবার নিয়ে যখন প্রশান্তির হাসি হাসেন, সেই হাসি বাবুল মিয়াকে আরো উৎসাহিত করলো, ভাল কিছু করার জন্য।
বাবুল মৃধা অপরাজেয় বাংলা ডটকমকে জানালেন, প্রতিদিন প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন অস্বচ্ছল অসহায় মানুষ কোন টাকা ছাড়াই এখান থেকে খাবার নিয়ে যান। এখানে পাউরুটি, কলা, বিস্কুট, পানি থাকে। সামনে আরো ভাল খাবার তিনি সংযুক্ত করবেন। খাবারের খরচের যোগান আসে কোত্থেকে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তার ভাই তাকে প্রতিদিন ২০০ টাকা করে দেন। বাকিটা তিনি ব্যবস্থা করেন। সব মিলিয়ে খাবারের পেছনে প্রতিদিন তার ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা খরচ হয়।
বাবুল মৃধার সঙ্গে কথা বলতে বলতেই দেখা মিললো আলফাজ মিয়ার সঙ্গে। দিনমজুর। করোনার কারণে তার কাজ কমে গেছে। খাবার টাকা নেই আবার কারো কাছে হাত পাততেও পারেন না লজ্জায়। তাই এখানে এসেছেন বিনামূল্যে খাবার নিতে। তিনি জানালেন, এখান থেকে খাবার নিতে কারো অনুমতি লাগেনা। তাই তিনি এখান থেকে খাবার নেন।
বাবুল মৃধা জানালেন, আগামীতে তিনি তার দোকানের সামনে অসহায় গরীবদের জন্য বিনামূল্যের পোশাকের দোকান দেবেন। তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষজনের অব্যবহৃত পোশাক সংগ্রহ করে, লন্ড্রি করে, সেলাই করে সেগুলোকে পরিধানযোগ্য করে তুলবেন। তারপর তার দোকানের সামনে সেগুলো সাজিয়ে রাখবেন। যার যত ইচ্ছা বিনা মূ্ল্যে নিয়ে যেতে পারবেন। তিনি বলেন, সবাই হাত বাড়ালে, দেশের মানুষের কষ্ট থাকতো না।
কথার ফাঁকে ফাঁকে অনেককেই চোখে পড়লো বাবুল মৃধার খাবারের র্যাকের সামনে। অনেকেই খাবার নিয়ে যাচ্ছেন। বাবুল মৃধা তার সহকারীকে আরো কিছু খাবার সাজিয়ে রাখার তাড়া দিলেন, কারণ দুপুরের দিকে চাপ বাড়বে।