অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

চলেই গেলেন সৌমিত্র [১৯৩৫-২০২০]

অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক

প্রকাশিত: ০১:০৭ পিএম, ১৫ নভেম্বর ২০২০ রোববার   আপডেট: ০৩:৩৪ পিএম, ১৮ নভেম্বর ২০২০ বুধবার

তুলিয়া অঞ্চলখানি
মুখ-'পরে দাও টানি,
ঢেকে দাও দেহ
করুণ মরণ যথা
ঢাকিয়াছে সব ব্যথা
সকল সন্দেহ

বাঁচিয়ে রাখার সব চেষ্টাকে ব্যর্থ করে চলেই গেলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। টানা ৪০ দিনের  জীবনপণ লড়াইয়ে সমাপ্তি টেনে পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন এই কিংবদন্তী। 

কলকাতার বেল ভিউ ক্লিনিকে রবিবার (১৫ নভেম্বর)  দুপুর সোয়া বারোটার দিকে তিনি মারা যান। গত ৬ অক্টোবর থেকে এখানেই তার চিকিৎসা চলছিল।

গত ৪৮ ঘন্টা ধরেই প্রবীণ এই অভিনেতার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল। দিন কয়েক আগে সর্বশেষ তার শ্বাসনালীতে সফল অপারেশন হয়। তারপর তাকে প্লাজমা থেরাপিও দেওয়া হয়। মনে করা হচ্ছিল, এবার বুঝি সৌমিত্রের শারীরিক অবস্থা ভালোর দিকে যাবে। আদতে তা হয়নি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লাইফ সাপোর্টে থাকা প্রখ্যাত এই অভিনেতার শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি হয়েছে। একসময়ে সামান্যতম  সাড়া দেয়াও বন্ধ করে দেন তিনি। চেতনা সম্পূর্ণভাবে লুপ্ত হয়ে যায়।

শেষটায় অবস্থা এমন দাঁড়ায়, বিষয়টি অনেকটা ভাগ্যের হাতেই ছেড়ে দেন তার চিকিৎসকরা। সৌমিত্রর চিকিৎসায় যুক্ত ১৬ সদস্যের চিকিৎসক দলের সদস্যরা দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। দলের প্রধান চিকিৎসক অরিন্দম কর জানান, তারাও সমস্ত আশাভরসা সমর্পণ করেছেন অলৌকিক কিছুর হাতে। 

গত ১ অক্টোবর থেকে প্রবীণ এই অভিনেতার শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না। জ্বর আসলেও সেসময়ে করোনার কোনো উপসর্গ পাওয়া যায়নি। পরে করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হলে ৫ অক্টোবর তার কোভিড-১৯ পজিটিভ রিপোর্ট আসে। ৬ অক্টোবর তাকে ভর্তি করানো হয় বেলভিউ হাসপাতালে। 

সর্বশেষ ১৪ অক্টোবর সৌমিত্র করোনার নমুনা পরীক্ষায় নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। এরপরই সৌমিত্র সুস্থ হতে থাকেন। যদিও করোনা ছাড়া তার অন্যান্য রোগও ছিল। এর মধ্যে রয়েছে প্রোস্টেট ক্যানসার, সিওপিডি, প্রেশার, সুগার ইত্যাদি। যা ধীরে ধীরে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে আবার।

১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি সৌমিত্রর জন্ম, পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে। পড়াশোনা হাওড়া জেলা স্কুল, স্কটিশ চার্চ কলেজ, কলকাতার সিটি কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। 

বাংলা চলচ্চিত্রের এই দিকপাল ২০১২ সালে পেয়েছেন ভারতের চলচ্চিত্র অঙ্গনের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার। এ ছাড়া আরও পেয়েছেন দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফ্রান্সের ‘লেজিয়ঁ দ্য নর’ পুরস্কার (২০১৮)। পেয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মান পদ্মভূষণসহ (২০০৪) ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র, সংগীত, নাটক একাডেমি, ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কারসহ নানা পুরস্কার।