৫৩৭ বছরের পুরোনো বাবা আদম মসজিদ
কাজী দিপু, মুন্সিগঞ্জ
প্রকাশিত: ০১:০৫ পিএম, ১৫ নভেম্বর ২০২০ রোববার আপডেট: ০১:০৭ পিএম, ১৫ নভেম্বর ২০২০ রোববার
প্রাচীন বাংলায় যে সব সুফি সাধকের আগমন ঘটেছে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে তাদের মধ্যে হযরত বাবা আদম (রা.) অন্যতম। সুদূর আরব দেশে জন্মগ্রহন করেও ইসলাম প্রচারে ভারতবর্ষে এসেছিলেন আধ্যাত্মিক সাধক বাবা আদম। উপমহাদেশ শাসনামলে ১১৭৮ সালে ধলেশ্বরীর তীরে মিরকাদিম আসেন তিনি। তখন বিক্রমপুর তথা মুন্সীগঞ্জে ছিল বল্লাল সেনের রাজত্ব। ওই বছরই বল্লাল সেনের হাতে প্রাণ দিতে হয় তাকে। বাবা আদমকে মিরকাদিমের দরগাহবাড়িতে দাফনের পর তার মাজারের পাশে ১৪৮৩ সালে নির্মাণ করা হয় বাবা আদম মসজিদ। এটি ছিল তার মৃত্যুর ৩১৯ বছর পরের ঘটনা।
সেই থেকে ৫৩৫ বছর ধরে ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে এই মসজিদ। তৎকালীন ভারতবর্ষে যে কয়টি প্রাচীন মসজিদ ছিল, সেগুলোর মধ্যে একটি বাবা আদম মসজিদ। বাংলার সুলতান জালাল উদ্দিন ফতেহ শাহর শাসনামলে তার আগ্রহে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই সময় থেকে মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিমের দরগাহবাড়িতে প্রায় ৫৩৫ বছরের পুরোনো বাবা আদম মসজিদ এখন কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ছয় গুম্বুজ বিশিষ্ট এ মসজিদের নির্মাণশৈলী মনোমুগ্ধকর। এটি দৈর্ঘ্যে ৪৩ ফুট ও প্রস্থে ৩৬ ফুট। দেয়াল প্রায় চার ফুট চওড়া। ইট-সুরকি দিয়ে ভেতরে গাঁথা। মসজিদটি নির্মাণের সময় ১০ ইঞ্চি, ৭ ইঞ্চি, ৬ ইঞ্চি ও ৫ ইঞ্চি মাপের লাল পোড়ামাটির ইট ব্যবহার করা হয়েছে। নির্মাণ নকশা বা স্থাপত্যকলা অনুযায়ী মসজিদ ভবন উত্তর-দক্ষিনে লম্বা। পশ্চিম দেয়ালে তিনটি অলংকৃত মেহেরাব আছে। সামনের দিকে খিলান আকৃতির প্রবেশপথ। দুই পাশে সম আকারের দুইটি জানালা। সমজিদের সামনে ওপরের দিকে রয়েছে ফারসি ভাষায় খোদাই করা কালো পাথরের ফলক। এছাড়া ভেতরে ঢুকে সামনে এগোলে চার কোনায় চারটি ত্রিভুজাকৃতির স্তম্ভ চোখে পড়ে। মসজিদের চারকোণে ৪টি টরেট রয়েছে, যা অষ্টাভুজাকৃতির। চমৎকার কারুকার্যখচিত এ মসজিদটির ছাদে ৬টি গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের খিলান, দরজা, স্তম্ভের পাদদেশ, মেঝে ও ছাদের কার্নিশের নিচে ইট কেটে মুসলিম স্থাপত্যকলার অপূর্ব নকশাও লক্ষ্য করা যায়।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, বাবা আদমের নামে নির্মিত এ মসজিদটি দেখতে প্রতিবছরই দরগাহ বাড়ীতে আসেন দেশ-বিদেশের পর্যটক ও দর্শনার্থীরা। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনাও এ মসজিদ দেখতে এসেছিলেন। তবে পর্যটকদের আকর্ষন ধরে রাখা এবং কয়েক’শ বছরের ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে টিকে থাকা এ স্থাপনাটি সংরক্ষনে নেই তেমন উদ্যোগ।
খোজঁ নিয়ে জানা গেছে, ভারতবর্ষ প্রত্নতত্ত্ব জরিপ বিভাগ ১৯০৯ সালে একবার এ সমজিদটি সংস্কার করে সংরক্ষনের উদ্যোগ নেয়। এরপর দীর্ঘ সময় সেভাবেই ফেলে রাখা হয়। ১৯৯১ সালের দিকে এর চারপাশে লোহার সীমানা প্রাচীর নির্মান করা হয়। সে বছরই বাংলাদেশর সরকরের ডাক বিভাগ মসজিদের ছবি দিয়ে ডাকটিকিট প্রকাশ করে। সমজিদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এটাই ছিল সরকারের পক্ষ থেকে উল্লেখ করার মতো কোন পদক্ষেপ। মসজিদ ও মাজার কমিটির নেতৃবৃন্দ জানান, প্রায় এক যুগ আগে একবার প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ থেকে সংস্কার ও রং করা হয়েছিল।