গ্রীষ্মের রঙিন ফুলে বর্ণিল রাবি ক্যাম্পাস
রিপন চন্দ্র রায়, রাবি
প্রকাশিত: ০৬:২৭ পিএম, ১৮ মে ২০২২ বুধবার আপডেট: ০৬:৩০ পিএম, ১৮ মে ২০২২ বুধবার
প্রকৃতি থেকে অনেক আগেই বিদায় নিয়েছে ঋতুরাজ বসন্ত। প্রকৃতিতে এখন বিরাজ করছে গ্রীষ্মকাল। খাঁ খাঁ রোদ্দুর, তপ্ত বাতাস, চারদিকে নিঝুম, নিঃস্তব্ধ, ঝিমধরা প্রকৃতি, ঘামে দরদর তৃষ্ণার্ত পথিক। সূর্যের প্রখর তাপে সমস্ত প্রকৃতি যেন নির্জীব হয়ে ওঠে। দূর আকাশে পাখনা মেলে চিল যেন বৃষ্টিকে আহবান জানায়। গাছের নিচে মানুষের নিঃশব্দ অবস্থান গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরের পরিচিত দৃশ্য।
তবে গ্রীষ্মের এসব সাহিত্যিক উপমা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যলয়ের সাথে যায় না। ক্যাম্পাসের বর্তমান চিত্র একেবারেই ভিন্ন। বিশ্ববিদ্যলয় ক্যাম্পাসে যেন এখনো বিরাজ করছে ঋতুরাজ বসন্ত। জ্যৈষ্ঠের এই খরতাপে ক্যাম্পাসের প্রকৃতি যেন নিজেকে উজার করে দিয়েছে। গ্রীষ্মকালীন বাহারি সব ফুলে সেজেছে নতুন রূপে। রাজশাহীর এই কাঠফাটা রোদ্রেও তাই নয়নাভিরাম এই প্রকৃতির দিকে তাঁকিয়ে হৃদয়ের তৃষ্ণা মেটাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যলয়ের শিক্ষার্থীরা।
গত মাসে পুরো রাজশাহী অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে তীব্র তাবদাহ। সেই তাবদাহে মানুষের মত বৃক্ষরাজিরও যেন হাসফাঁস অবস্থা। ধুঁকতে থাকা সেই বৃক্ষরাজি গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে যেন আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে। পেয়েছে নতুন যৌবন। নিজেকে ভরে তুলেছে ফুলে-ফলে। রঙিন এসব ফুলে বর্ণিল মতিহারের এই সবুজ চত্বর। গ্রীষ্মের এই খরতাপেও প্রকৃতিকে বসন্তের রঙে সাজিয়েছে কৃষ্ণচ‚ড়া, জারুল, সোনালু, কাঠগোলাপ, রক্ত জবা, বকুলসহ নাম না জানা বাহারি সব ফুল।
কৃষ্ণচূড়ার পাপড়িগুলো ধীরে ধীরে খসে যাচ্ছে। শাখায় গজিয়েছে নতুন পাতা। সেই কচি পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে কৃষ্ণচ‚ড়ার রক্তিম পাপড়ি। জারুল তার বেগুনি আভায় প্রকৃতিতে দিয়েছে নতুন মাত্রা। জারুলের বেগুনি আভায় মনোহরা বিশ্ববিদ্যলয়। সোনালু গাছে পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে হলুদ ফুলের ঝর্ণা। মাঝারি আকৃতির গাছগুলোতে যেন দোল খাচ্ছে কিশোরীর কানের দুল। আর প্রেমিকার কানে কাঠগোলাপের শুভ্রকোমল পাপড়ি যেন বাড়িয়ে দিচ্ছে প্রেমের মহিমা। প্রকৃতির এমনই সৌন্দর্য মন ভরিয়ে দিচ্ছে ঈদ শেষে ক্যাম্পাস ফেরত শিক্ষার্থীদের।
বিশ্ববিদ্যলয়ের কাজলা গেট দিয়ে ঢুকতেই হাতের ডানে চোখে পড়বে হলুদ ফুলের সমাহার। সোনাঝরা এই ফুলের নাম সোনালু। পদ্মা নদীর দখিনা হাওয়ায় কিশোরীর কানের দুলের মতো দুলছে হলুদ রঙের থোকা থোকা ফুল। আবার ফুলের ফাঁকে দেখা যায় লম্বা ফল। হলুদ বরণ সৌন্দর্যে মাতোয়ারা করে রেখেছে পুরো ক্যাম্পাস। জ্যৈষ্ঠের খরতাপে হালকা সুগন্ধিযুক্ত এই ফুলের হলুদ আভা এই রাস্তায় আসা পথিকের নজর কাড়বেই।
সেই সঙ্গে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন যায়গার বড় বড় কৃষ্ণচ‚ড়ার সবুজ পাতার ফাঁকে লাল পাপড়ি, বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকের দুই পাশে সারফিনিয়া ফুলের গোলাপী আর সাদা পাপড়ি প্রকৃতি পিপাসু শিক্ষার্থীদের হৃদয় ছুয়ে যায়। ইবলিশ চত্বরে বসে থাকা কপোত-কপোতীর প্রেমে হালকা ঢেউ দিয়ে যায় জারুলের বেগুনি আভা। আর টিএসসিসির সামনের বকুলের সুগন্ধে হৃদয় হারা হয় সেখানে পড়তে বসা শিক্ষার্থীরা।
ক্যাম্পাসের প্রকৃতি সম্পর্কে বিশ^দ্যিালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শেখ ফাহির আমিন বলেন, গ্রীষ্মের এই প্রচণ্ড খরতাপে ক্লাস করে প্রাণ যেন নির্জীব হয়ে যায়। এমন সময় সোনালু গাছের নিছে বসে হালকা দখিনা হাওয়ার সাথে মিতালী যেন দেহে ফের প্রাণ দেয়। গ্রীষ্মকালের এই অনিন্দ্য সুন্দর প্রকৃতি যে কারো মন ভালো করে দিবে নিমিশেই।
নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী লামিয়া ইসরাত বলেন, ঈদের ছুটির পর মাত্র কয়েকদিন হয় ক্যাম্পাসে এসেছি। এসেই দেখি নানা রঙের ফুলে-ফলে ভরেছে ক্যাম্পাস। সেজেছে নতুন সাজে। রাজশাহীর এই তীব্র গরমেও বর্ণিল এই ক্যাম্পাসে যেন নিজেকে খুঁজে পাই নতুন রূপে।