ভারতীয় আদালতের ব্যতিক্রমী রায়, মেয়েটি ফিরছে বাংলাদেশে
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১১:০৮ এএম, ১৪ নভেম্বর ২০২০ শনিবার আপডেট: ০৩:১৬ পিএম, ১৪ নভেম্বর ২০২০ শনিবার
পাচারের শিকার বাংলাদেশি ১৭ বছরের এক তরুণীর এখন দেশে ফিরতে কোনো বাধা নেই। তবে সে জন্য ভারতের ভাসাই আদালতের দায়রা জজকে দিতে হয়েছে ব্যতিক্রমী রায়। ২০১৯ সাল থেকে একটি এনজিও’র মাধ্যমে মেয়েটিকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা চলে আসছে।
ভারতীয় আইনে এ ধরনের মামলায় অভিযোগ দায়েরের আগে ফেরত পাঠানোর সুযোগ নেই। আর সে কারণে মেয়েটি অবস্থান করেছিলো একটি আশ্রয় কেন্দ্রে, পুলিশ কখন অভিযোগ দায়ের করবে তারই অপেক্ষায়। সাধারণত ৯০ দিনের মধ্যে এই অভিযোগ দায়েরের বিধান রয়েছে ভারতে। তবে পুলিশ তা করতে পারেনি। সে কারণেই ব্যতিক্রমি রায়টি দিয়েছেন আদালত। ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যম এভাবেই খবরটি জানাচ্ছে।
এতে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের নভেম্বরে মেয়েটি লেখাপড়ার নামে প্রতারিত হয়ে ভারতে যায়। সেখানে তাকে জোরপূর্বক ঠেলে দেওয়া হয় দেহব্যবসায়। প্রতারকদের মূল হোতা মেয়েটির এক সৎ ভাই।
মেয়েটি যেভাবে রক্ষা পেলো
২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ওই সৎ ভাই মেয়েটিকে চেন্নাইয়ের তামিলনাড়ুর একটি গ্রামে নিয়ে যায় ও দেহব্যবসায় বাধ্য করে। একদিন সেখান থেকে পালিয়ে মেয়েটি কাছেই রেল স্টেশনে যায়। সেখানে যখন ট্রেনের খোঁজ নিচ্ছিলো- একজন পুলিশ সদস্য তা দেখতে পান। এরপর পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং থানায় নিয়ে যায়। পরে পুলিশ মেয়েটির সৎভাইকে খুঁজে বের করে এবং মেয়েটির পরিচয়ের প্রমাণ চায়। লোকটি তা দিতে ব্যর্থ হলে প্রথমে স্থানীয় একটি আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয় মেয়েটিকে। পরে সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় চেন্নাইয়ের অপর একটি আশ্রয় কেন্দ্রে। এবং আরো পরে তাকে রেসকিউ ফাউন্ডেশন নামের একটি এনজিওর কাছে দেওয়া হয়। শিশু কল্যান কমিটির নির্দেশেই তা করে পুলিশ। এরপর মেডিকেল টেস্টে ধরা পড়ে মেয়েটি তখন ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। পালগড়ের সিডব্লিউসি তখন বিহার পুলিশকে জানায়, এবং সৎ ভাই, তার স্ত্রী এবং আরো এক অচেনা ব্যক্তির নামে একটি মামলা দায়ের করা হয়। পরে মেয়েটি একটি সন্তান প্রসব করলে তা দত্তক দেওয়া হয়।
তখন থেকে মেয়েটি প্রায় দেড় বছর ধরে একটি শিশু আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছে এবং দেশে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছে।
এ অবস্থায় রেসকিউ ফাউন্ডেশন একটি এনওসি (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট) চেয়ে মুম্বাইয়ের ভাসাই আদালতের কাছে আবেদন দাখিল করে, যাতে মেয়েটি বাংলাদেশে ফিরতে পারে। মেয়েটির দেশে ফেরার খরচ এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করার দায়িত্বও নেয় ফাউন্ডেশনটি। আদালত অনলাইনে এর শুনানি নেয় এবং মেয়েটি ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে শুনানিতে হাজিরা দেয়। এ সব কিছু আয়োজন করে রেসকিউ ফাউন্ডেশন।
এরপর আদালত মেয়েটির দেশে ফেরার পক্ষে রায় দেয়। ফলে তার দেশে ফিরতে আর কোনো বাধা থাকলো না।