১০ মাস ধরে বেতন পায়না রেলওয়ের গেটম্যানরা
শওকত জামান, জামালপুর
প্রকাশিত: ০৫:০৪ পিএম, ১ মে ২০২২ রোববার
গরিবের আবার ঈদ। আমগো ঈদ কিসের। বাপ হয়ে সন্তানের ঈদের বায়না মেটাতে পারি না। নতুন কাপড় কিনে দিতে সন্তানদের কান্না সইতে না পেরে বোবা হয়ে আছি। পেটের ভাত জোগাতেই হিমশিমে পড়তে হয় সেখানে ঈদে বাজার সদাই, স্ত্রী সন্তানের ঈদের বাইনা মেটামো কিভাবে। ১০ মাস ধরে বেতন পাই না। চলতি মাসেও বেতন হইনাই। ঋন দেনা করবো সেই উপায়ও নেই। বেতন বন্ধ থাকায় কেউ ধারদেনাও দিতে চায় না। ঈদে পরিবারের মুখে সেমাই তুলে দিতে দিবো সেমাই কেনারও টাকা পকেটে নেই। কি করবো চিন্তায় আছি।
বিভিন্ন রেল ক্রসিংয়ে দায়িত্বরতদের সাথে কথা বললেই এভাবেই ঈদের সামনে তাদের কষ্টমাখা কথাগুলো জানালেন। সড়ক পথে রেলক্রসিংয়ে যানবহন ও যাত্রী পারাপার নির্বিঘ্ন রাখতে বুকে কষ্ট নিয়ে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন গেট ব্যারিয়ারে কর্মরত গেটম্যানরা।
জামালপুরে রেলওয়ের রাজস্ব খাতে (TLR) প্রকল্পের আওতায় রেল ক্রসিংয়ের গেট ব্যরিয়ারে গেটম্যান পদে নিয়োগ পেয়েছেন ১৫ হাজার টাকা মাসিক বেতনে। রেলক্রসিংয়ে গেট ব্যারিয়ার ফেলে সড়ক চলচলরত যানবহন ও পথচারী পারাপার নির্বিঘ্ন রাখতে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন এই গেটম্যানরা। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে দায়িত্ব পালন করলেও জুলাইয়ের ২০২১ সালের জুলাই মাস থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বেতন ভাতা পাননি তারা। ১০ মাস ধরে বেতন ভাতা বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবন ঝাপন করলেও প্রকল্পের অধীনে চাকরি করায় এ বিষয়ে তাঁরা প্রতিবাদও করতে পারেন না।
কথা হয় একাধিক গেটম্যানের সাথে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, ‘কী কারণে বেতন পেলাম না তা জানি না। আশায় ছিলাম ঈদের আগে বেতন পাব, বউ পোলাপান নিয়ে আনন্দে ঈদ করব, কিন্তু তা আর হলো না।’
জামালপুর-সরিষাবাড়ি রেলপথে দামেস্বর রেলক্রসিংয়ে দায়িত্বরত গেইটম্যান মোস্তাক আহমেদ জানান, ১০ মাস ধরে বেতন পাইনা। অভাবের সংসারে টেনেটুনে কোনমতে চলছে।
কিন্তু অবুঝ সন্তানরা বুঝবে আমার অবস্থা। ঈদের বায়না ধরে কান্নাকাটি করছে। বাবা জামা কাপড় জুতা কিনে দাও। ওদের মুখের দিকে তাকাতে পারিনা। কি করবো বুঝতে পারছিনা।
জামালপুর-শেরপুর বাইপাস রেলক্রসিংয়ে দায়িত্বরত সোহাগ মিয়া জানান, আমাদের কষ্ট দেখার কেউ নেই। বেতন না পাওয়ায় পেটে ভাতই জুটছেনা ঈদের বাজার, বউ বাচ্চাদের নতুন কাপড় কিনবো ক্যামনে। দারদেনা করতে করতে বেতন বন্ধ থাকায় এখন কেউ দারদেনাও দিতে চায় না। কি করবো চোখে অন্ধকার দেখতাছি।
সবাই যখন আনন্দ উল্লাসে ঈদ উদযাপন করবে তখন রেলওয়ের গেটম্যানদের ঘরে ঘরে কান্নার রোলে চোখের জ্বলে কাটবে ঈদের দিন।
উর্ধতন উপ সহকারী প্রকৌশলী (পথ) আবু সাঈদ হাসান বলেন, বাজেট হয়ে গেছে। তবে ঈদের আগে বেতন পাওয়ার সম্ভবনা নেই। ঈদের পর গেইটম্যানরা বেতন পাবেন বলে আশার কথা শোনালেন এই কর্মকর্তা।