অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

এখনো দগদগে আম্পানের ক্ষত

এসএম শহীদুল ইসলাম, সাতক্ষীরা 

প্রকাশিত: ১২:২৯ পিএম, ১১ নভেম্বর ২০২০ বুধবার   আপডেট: ০৫:৪৭ পিএম, ১১ নভেম্বর ২০২০ বুধবার

ছয় মাস আগে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে আঘাত হেনেছিল সুপার সাইক্লোন আম্পান। দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও এর প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারেনি সেখানকার প্রকৃতি। ঘূর্ণিঝড়ে আসা নোনা পানির কারণে দিনদিন শুকিয়ে যাচ্ছে উপকূলের গাছপালা। 

২০ মে রাতে ২২৫-২৪৫ কি.মি গতিতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে আঘাত হানে আম্পান। সেই ঝড়ে উপড়ে পড়ে গাছপালা আর বিদ্যুতের খুঁটি। ভাঙে উপকূলীয় বাঁধ। ভেসে যায় শতশত ঘরবাড়ি, মাছের ঘের, পুকুর আর ফসলের ক্ষেত। বাড়ির উঠানে পর্যন্ত উঠেছিল জোয়ারের নোনা পানি। 

সেই নোনা পানির প্রভাব এখন পড়তে শুরু করেছে উপকূলীয় অঞ্চলে। আম্পান ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছ। শুধু সুন্দরবন নয়, সামাজিক বনায়নের সবুজ বেষ্টনিতেও আম্পানের দগদগে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে।

সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ সড়কের দুই পাশে সামাজিক বনায়নের গাছ শুকিয়ে বিবর্ণ হয়ে গেছে। শত শত গাছ এভাবে শুকিয়ে যাওয়ায় মানুষের চলাচলেও বাড়ছে ঝুঁকি। একই অবস্থা অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর দু'ধারে লাগানো গাছপালারও। তালা উপজেলার পাটকেলঘাট থেকে দলুয়া সড়কের দু'ধারের গাছগুলোরও ঝরে পড়ছে পাতা। 

আম্পানের আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সুন্দরবনের পার্শবর্তী  আশাশুনি সদর, প্রতাপনগর, আনুলিয়া, শ্রীউলা এবং শ্যামনগরের গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী ও কাশিমাড়ি ইউনিয়ন। পশ্চিমে কপোতাক্ষ নদ আর পূর্বে খোলপেটুয়া নদী দ্বারা বেষ্টিত এসব ইউনিয়ন বছরের শুরুতেও ছিল পুরো সবুজময়।

অথচ আম্পানের আঘাতে ইউনিয়নগুলো যেন আজ ধ্বংসস্তুপ। বেড়িবাঁধ ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। যেসব গাছ পানি সহ্য করতে পারেনা সেসব গাছ মরে গেছে ইতোমধ্যেই। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে অনেক বন্যপ্রাণিও। ফলে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন সুন্দরবন সংলগ্ন পরিবারগুলো। 

প্রতাপনগর ইউনিয়নের বাসিন্দা ইদ্রিস আলী জানান, ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, নারগিস, মোহাসেনসহ বড় বড় ঝড়কে মোকাবেলা করেছে এ বনাঞ্চল। বনাঞ্চল ছিলো বলেই উপকূলের হাজার হাজার পরিবার রক্ষা পেয়েছে। কিন্তু আম্পানের ঝড়ো বাতাসের তোড়ে সমুদ্র ঘেষা গাছগুলো আজ বিলীন হওয়ার পথে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আম্পানের দীর্ঘ সময় ধরে চলা ঝড়ো বাতাস ও সামুদ্রিক লবণ পানির স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে গাছের শ্বাসমূল শোষণ করায় গাছগুলো মরে যাচ্ছে।

সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণাঞ্চলে নদী রক্ষা ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করছে প্রগতি নামক একটি বেসরকারি সংস্থা। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী বলেন, বন ও বনের গাছ পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড়ের কবলে যেভাবে বন ও সবুজ বেষ্টনী ধ্বংস হচ্ছে, এর ফলে পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। যার পরোক্ষ প্রভাব পড়ছে কৃষির উপরও। গ্রামগুলো পানিতে ডুবে থাকায় আবর্জনা পচে দুর্গন্ধময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সুপেয় পানির অভাব প্রকট। লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও জলাবদ্ধতায় গাছ মরে যাওয়ার কারণ বলে মনে করেন এই পরিবেশবিদ।