দিলারা হাশেম স্মরণে শোকসভা নিউইয়র্কে, রাষ্ট্রীয় সম্মাননার দাবি
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:২২ পিএম, ২৬ মার্চ ২০২২ শনিবার
কথা সাহিত্যিক, সাংবাদিক দিলারা হাশেম মানুষের স্মরণে থাকবেন তার উপন্যাসে সৃষ্ট চরিত্রসমূহের মধ্য দিয়ে, তার কণ্ঠে উচ্চারিত কথামালা কিংবা গান দিয়ে, আর তার আঁকা ছবি দিয়ে। সেই ষাটের দশক থেকে যে গুণি মানুষটি শিল্প-সাহিত্য অঙ্গনে শুধু দিয়েই গেছেন, বিনিময়ে নিয়েছেন সামান্যই। তার প্রয়াণ হয়েছে গত ১৯ মার্চ। শেষ জীবনে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ছিলেন, ছিলেন এখানকার মেরিল্যান্ড নিবাসী। দিলারা হাশেমের মৃত্যুতে শোকসভা হয়ে গেলো নিউইয়র্কে। সেখানে আলোচকরা অনেক কথা বললেন তার স্মৃতিতে। জানা গেলো সত্যজিৎ রায়ের মতো কিংবদন্তী তার সিনেমায় অভিনয় করার অনুরোধ করেছিলেন দিলারা হাশেমকে, কিন্তু তাঁকে কিন্তু অত্যন্ত বিনয়ের সাথে অপারগতা জানিয়েছিলেন এই সাংবাদিক সাহিত্যিক।
আলোচকরা আরও বললেন, দিলারা হাশেমের মতো এই বিশাল মানুষটি দেশে বাংলা একাডেমী পুরষ্কার পেলেও পাননি আর কোনো রাষ্ট্রীয় সম্মাননা। তারা মনে করেন জীবদ্দশাতেই দিলারা হাশেম পেতে পারতেন একুশে কিংবা স্বাধীনতা পদক।
এ নিয়ে দুঃখ-ক্ষোভও প্রকাশ করলেন বক্তারা। তাঁর মৃত্যূর পর ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দুতাবাস থেকে কেউ শোক জানাতে জাননি বলেও অনেকে দুঃখ প্রকাশ করেন।
শুক্রবার ২৫ মার্চ নিউ ইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন মিলনায়তনে আয়োজিত হয় ‘স্মৃতিতে অমর দিলারা হাশেম’ শীর্ষক বিশেষ এই শোকসভা। আয়োজন করে সাউথ এশিয়ান রাইটার্স এন্ড জার্নালিস্টস ফোরাম। শুরুতে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন দু’জন কিংবদন্তী বেতার ও টিভি ব্যক্তিত্ব ইকবাল বাহার চৌধুরী ও রোকেয়া হায়দার। ইচ্ছে থাকলেও শারিরীক কারনে শেষ মুহুর্তে বক্তব্য রাখতে পারেননি আরেক দু’জন কিংবদন্তী মাসুমা খাতুন ও সরকার কবীরুদ্দিন। এরা সকলেই ছিলেন দিলারা হাশেমের সহকর্মী।
নিউ ইয়র্কের অনেক বিশিস্টজন, সাংবাদিক, লেখক ও মুলধারার রাজনীতিবিদ দিলারা হাশেমের বিশেষ প্রয়ানে শ্রদ্ধান্জলী জানাতে এই শোকসভায় অংশ নেন।
শিল্পী রুপা চৌধুরী ‘আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রানে’ গানটি গেয়ে প্রয়াক দিলারা হাশেমের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন এর আগে একমিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
চার দশক ধরে দিলারা হাশেমের অত্যন্ত স্নেহধন্য ও ঘনিষ্ট ছিলেন সাংবাদিক লেখক আকবর হায়দার কিরন। তার উদ্যোগেই এই বিশেষ শোকসভার আয়োজন করা হয়। দিলারা হাশেমের কথা বলতে গিয়ে বারবার অশ্রুভারাক্রান্ত হয়েছেন তিনি।
দিলারা হাশেমের স্মৃতিতে এই বিশেষ আয়োজনে তাঁর জীবনের দিক নিয়ে আলোচনা করেন বক্তারা। প্রবাসের সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ বিশিস্ট সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ তাঁর সাথে কতো স্মৃতিময় সময় কেটেছে উল্লেখ করে বলেন, তাঁর জীবদ্দশায় একুশে ও স্বাধীনতা পেলে আমরাও কী যে খুশি হতাম।
নিউইয়র্কের বই মেলা ও আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসবে তাঁর বহুবার যোগদান এবং সম্মাননা পাওয়া অত্যন্ত স্মৃতিময় হয়ে থাকবে, বলেন বক্তারা।
দিলারা হাশেমের জীবন নিয়ে আলোকপাত করেন সাংবাদিক ও লেখক মিনহাজ আহমেদ। অনেকেই সরকারের প্রতি দাবি জানান দিলারা হাশেমের মতো একজন গুণি-জ্ঞানীর নামে যেন ঢাকায় একটি সড়ক নামকরন করা হয়।
অনুস্ঠানের অন্যান্যের ভেতর বক্তব্য রাখেন মুলধারার ডেমোক্র্যাট নেতা মোর্শেদ আলম, লেখক সাইদ তারেক, সিনিয়র সাংবাদিক মাইন উদ্দিন আহমেদ, দেশ পত্রিকার সম্পাদক মিজানুর রহমান, উদিচীর নেতা এম ই চৌধুরী শামীম, সাংবাদিক হাসানুজ্জামান সাকি, সংস্কৃতিজন গোপাল সান্যাল ও রিমন ইসলাম।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক মাহফুজুর রহমান, মনোয়ারুল ইসলাম, লেখক শেলী জামান খান, লেখক সাংবাদিক মনিজা রহমান, শিল্পী জাহেদ শরীফ ছাড়াও এমডি হামিদ, আইরিন রহমান, তফাজ্জল লিটন, রেশাদ খান, আমজাদ হোসেন প্রমুখ।