বাংলা একাডেমিতে ড. নূরুন নবী’র নতুন বইয়ের প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত
অপরাজেয় বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:৩৪ পিএম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ শুক্রবার
একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক, বিজ্ঞানী ও মুক্তিযোদ্ধা ড. নূরুন নবী’র লেখা বই দ্য রোল অব নিক্সন-কিসিঞ্জার ইন দ্য ১৯৭১ পাকিস্তান ওয়ার ক্রাইমস অ্যাগেইনস্ট বাংলাদেশ-এর প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টায় বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান মিলনায়তনে এ প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
প্রকাশনা উৎসবে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ও কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।
কবি ইউসুফ রেজার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতি ছিলেন কবি আসাদ চৌধুরী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মুক্তধারা ইউএস-এর স্বত্বাধিকারী বিশ্বজিৎ সাহা।
আমেরিকা থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে উৎসবে অংশ নেন ড. নূরুন নবী। অনুষ্ঠান শেষে কেক কেটে কবি আসাদ চৌধুরীর জন্মদিন উদযাপন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মসিউর রহমান বলেন, বইটিতে লেখক চারটি বিষয় তুলে ধরেছেন। সেগুলো হলো একজন তরুণ মুক্তিযোদ্ধার অনুভূতি, একাত্তরে তার পরিবারের সদস্যদের দুঃখ দুর্দশা, সরকারের সাথে সম্পৃক্ত নয়, অথচ মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে তারা যেভাবে কাজ করেছে, এবং একাত্তরে রাষ্ট্র পরিচালকদের ভুলের খেসারত বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে দিয়েছে তা।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, একাত্তরে নিক্সন ও কিসিঞ্জার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার করেছিল, ৫০ বছরের বাংলাদেশে তা ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশকে তারা তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছিল, বাংলাদেশ এখন প্রয়োজনের চেয়ে উদ্বৃত্ত সম্পদ আছে এবং উৎপাদন হচ্ছে। তিনি বলেন একাত্তরে লেখক নিজের চোখে যা দেখেছেন, তা প্রকাশ করেছেন বইয়ে।
লেখক ড. নূরুন নবী উৎসবের প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথিদ্বয়, সভাপতি এবং উপস্থিত অতিথিবৃন্দকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে সারা বিশ্বে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এবং তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার এ বিষয়ে নীরব ছিলেন।
তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর যুদ্ধাপরাধের নিন্দা করেনি, তাদের থামানোর কোনো উদ্যোগ নেয়নি, যা তাদের ক্ষমতার মধ্যে ছিল। যদি নিক্সন-কিসিঞ্জার ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য ইয়াহিয়া খানকে অন্ধভাবে সমর্থন না করত, তাহলে বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের যুদ্ধাপরাধ কম হতো অথবা হতো না। তাই বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সংগঠিত যুদ্ধাপরাধের দায় নিক্সন-কিসিঞ্জার এড়াতে পারে না।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ বিষয়ে ড. নূরুন নবীর লেখা আরও ১৭টি বই প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি তাঁর লেখা দুইটি বই ভারতের ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে গবেষণার জন্য স্বীকৃতি পেয়েছে।
ড. নূরুন নবীর লেখা উল্লেখযোগ্য বই হচ্ছে অনিবার্য মুক্তিযুদ্ধ, জন্ম ঝড়ের বাংলাদেশ, বাংলাদেশে পাকিস্তানের যুদ্ধাপরাধ ও প্রেসিডেন্ট নিক্সন- ড. কিসিঞ্জারের দায়, জাপানিদের চোখে বাঙালি বীর, স্মৃতিময় নিপ্পন, আমার একাত্তর, জন্মেছি এই বাংলায়, আমেরিকায় জাহানারা ইমামের শেষ দিনগুলি, শামসুর রাহমান- স্বাধীনতার কবি, অন্তরঙ্গ আলোচনায় বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু ও বিশ্ববন্ধু, Born in Bangla, Bangabandhu and Turbulent Bangladesh, BULLETS of '71 A freedom Fighter's Story.
ড. নূরুন নবী বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ২০২০ সালে বাংলাদেশ সরকারের দ্বিতীয় জাতীয় সম্মাননা একুশে পদক লাভ করেন।
মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক ছাড়াও বিজ্ঞানী হিসেবে ড. নূরুন নবীর খ্যাতি রয়েছে বিশ্বব্যাপী। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে কোলগেটসহ প্রায় ১০০টি পণ্যের পেটেন্ট আবিস্কারক।