অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

কোরআন শিক্ষা পাবেন থার্ড জেন্ডারের মানুষ, চালু হলো মাদরাসা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ০৬:২৪ পিএম, ৬ নভেম্বর ২০২০ শুক্রবার   আপডেট: ০৬:৩৩ পিএম, ৬ নভেম্বর ২০২০ শুক্রবার

থার্ড জেন্ডার নারী পুরুষের জন্য একটি মাদরাসা খোলা হয়েছে। শুক্রবার (৬ নভেম্বর) রাজধানীর বাইরে অদূরে এই ইসলামিক স্কুলটির কার্যক্রম চালু হয়। এটি দেশের প্রথম ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র যেখানে সমাজের পিছিয়ে পড়া এই বঞ্চিত মানুষগুলো ইসলামি শিক্ষার পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজি অংক শেখারও সুযোগ পাবে। পবিত্র কোরআন শিক্ষাসহ ইসলাম ধর্মের মূল আদর্শের দিকগুলোও শেখানো হবে তাদের। 

বাংলাদেশে প্রায় ১৫ লাখ তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জীবনকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই এই স্কুলটি তার কার্যক্রম শুরু করলো। 

এরই মধ্যে এই স্কুলে ৫০ জন ট্রান্সজেন্ডার শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। 'দাওয়াতুল ইসলাম তৃতীয় লিঙ্গের মাদরাসা' নাম দেওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। শিক্ষার্থীদের কোরআন তেলাওয়াত করার মধ্য দিয়ে এর শিক্ষা কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। খবরটি এরই মধ্যে প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফফি। 

খবরে শাকিলা আক্তার নামে ৩৩ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থীকে উদ্ধৃত করা হয়। তিনি বলেন, "পরম আনন্দ বোধ করছি, আমরা 'হুজুরদের' প্রতি কৃতজ্ঞ। তারা আমাদের জন্য এমন সুন্দর উদ্যোগ নিয়েছেন।" 

শাকিলা মেয়ে হয়ে জন্ম নেয় তবে ছোটবেলাতেই তাকে ঘর ছাড়তে হয় শারিরিক পরিবর্তনের কারণে। সে ডাক্তার কিংবা উকিল হতে চেয়েছিলো, কিন্তু সে সকল ইচ্ছাই শেষ হয়ে যায় যখন তাকে যোগ দিতে হয় এই তৃতীয় লিঙ্গের অন্য মানুষদের সঙ্গে।

"আমরা মুসলিম, কিন্তু মসজিদে যেতে দেওয়া হয়না। আমরা সমাজের অন্যদের সঙ্গে মিশতেও পারিনা," আক্ষেপ ঝড়ে শাকিলার কণ্ঠে।

আবদুর রহমান আজাদ নামে এক মৌলবীর উদ্যোগে আরো কয়েকজন মৌলবীকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এই তিন তলাবিশিষ্ট মাদরাসা ভবনটি।   

শিক্ষার্থীদের মোট সাতটি গ্রুপে ভাগ করে তারা কোরআন শিক্ষা দেওয়া শুরু করেছেন। এখানে ১৫০ জন পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে। এবং অন্য যে কোনো মাদরাসার মতোই এখানে শিক্ষা কার্যক্রম চলবে। ইসলামের আদর্শ শেখানোর পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা বাংলা, ইংরেজি, অংক, সমাজ বিজ্ঞান এগুলো সম্পর্কেও পাঠ্যপুস্তকভিত্তিক জ্ঞান পাবে। 

"এই মানুষগুলোকে স্থানীয়ভাবে হিজড়া ডাকা হয়। আর সমাজে তাদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে তারা মানবেতর জীবনযাপন করে আসছেন। তারা স্কুলে যেতে পারেন না, মাদরাসা বা মসজিদেও যেতে পারেন না। তারা চরম বৈষম্যের শিকার। এ জন্য সমাজ ও রাষ্ট্রই দায়ী," আবদুর রহমান আজাদকে উদ্ধৃত করে এএফপি। 

তিনি বলেন, "আমরা এই বৈষম্যের অবসান চাই। আল্লাহর কাছে মানুষের কোনো ভেদাভেদ নেই। ইসলামের চোখে সব মানুষ সমান। যে কোনো সাধারণ মানুষ যে অধিকার ভোগ করে, হিজড়াদেরও সেই অধিকার ভোগ করার সুযোগ থাকা উচিত।"

২০১৩ সালে এই মানুষগুলোকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যবস্থা নেয়। তখন থেকে তাদের থার্ড জেন্ডার বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হিসেবে দেখছে দেশ। ২০১৯ সালের নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকারও দেওয়া হয়। দেওয়া হয় জাতীয় পরিচয়পত্রও।  আদমশুমারিতে তাদের সংখ্যা গণনা করে দেখার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ২০২১ সালে এই আদমশুমারি হওয়ার কথা রয়েছে।