শাবিপ্রবিতে অনশনরত ২০ শিক্ষার্থী হাসপাতালে
শাবিপ্রবি করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: ০২:৩৬ পিএম, ২৪ জানুয়ারি ২০২২ সোমবার
শাবিপ্রবিতে অনশনরত ২০ শিক্ষার্থী হাসপাতালে
উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগের দাবিতে ষষ্ঠ দিনের মতো অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
অনশনে অংশ নেয়া ২৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২০ জনই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকি ৮ জন উপাচার্য ভবনের সামনে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের অবস্থাও অবনতির দিকে। তবুও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় তারা।
শিক্ষার্থীরা বলেছেন, ‘এতগুলো শিক্ষার্থীর জীবন সংকটাপন্ন, তবুও উপাচার্য তার চেয়ার আঁকড়ে ধরে আছেন। সবার জীবনের চাইতে তার কাছে চেয়ারের গুরুত্ব বেশি। আমরাও তার পদত্যাগের আগ পর্যন্ত অনশন থেকে উঠব না।’
আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী জানান, সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাতজন শিক্ষার্থী আজ বিকেলে আবারও ক্যাম্পাসের অনশনস্থলে ফিরবেন এবং সেখান থেকে অনশন চালিয়ে যাবেন।
রবিবার সন্ধ্যার পর ভিসির বাসভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন শিক্ষার্থীরা। রাত সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চ থেকে সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে একটি মশাল মিছিল বের হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে করে আবার একই স্থানে এসে শেষ হয়।
পরবর্তীতে রাত ১০টায় একই স্থানে ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন শিক্ষার্থীরা।
উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে উত্তাল শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়। গত ৬ দিন ধরে উপাচার্যের বাসার সামনে আমরণ অনশনে বসেছেন ২৮ শিক্ষার্থী। তাদের শরীরে স্যালাইন পুশ করেছেন চিকিৎসকেরা।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ১৩ জানুয়ারি। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ছাত্রলীগ ছাত্রীদের আন্দোলনে হামলা চালায়।
পরের দিন বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা ও তাদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। ওই হামলার প্রতিবাদে ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, খুলনা, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন নাগরিক ও রাজনৈতিক সংগঠন।
এর মধ্যে শিক্ষার্থীরা শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিকে তাদের দাবি লিখিতভাবে দেবেন বলে জানিয়েছেন। তবে শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের মূল দাবি উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ। এই দাবি না মানা পর্যন্ত তারা আন্দোলন থেকে সরবেন না।
শনিবার রাতে ঢাকায় নিজ বাসভবনে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি জানান, প্রয়োজনে তার প্রতিনিধিদল শাবিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত। শিক্ষার্থীরা যখন কথা বলতে রাজি হবে, তখনই প্রতিনিধি যেতে পারবে। পারিবারিক কারণে এখন তিনি সিলেটে যেতে পারছেন না।
এরপর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গভীর রাতে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেছেন শিক্ষামন্ত্রী।
বৈঠকে উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না এলেও দাবিগুলো লিখিতভাবে জমা দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। দীপু মনি আশ্বস্ত করেন, লিখিত দাবি পেলে সেগুলো সমাধানে উদ্যোগ নেবে সরকার।