শাবিপ্রবিতে এবার শিক্ষার্থীদের গণঅনশনের ঘোষণা
শাবিপ্রবি করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: ০৯:০৬ পিএম, ২২ জানুয়ারি ২০২২ শনিবার
শাবিপ্রবিতে এবার শিক্ষার্থীদের গণঅনশনের ঘোষণা
জটিল হয়ে উঠছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি। এবার গণঅনশনের ঘোষণা দিয়েছে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সংকট সমাধানে শিক্ষমন্ত্রী দিপু মনির সঙ্গে শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দলের আলোচনা চলার মধ্যেই এই ঘোষণা আসে।
**শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের অনশন ভেঙে আলোচনায় আসার আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর
সংবাদ সম্মেলনে শনিবার (২২ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঘোষণাটি দেন বিক্ষুব্ধরা। জানায়, শনিবার রাত থেকেই গণঅনশন শুরু হচ্ছে।
শিক্ষার্থী রা বলেন, ‘অনশনকারী শিক্ষার্থীদের কষ্ট ও অসুস্থতা আমরা কেউ মেনে নিতে পারছি না। আমাদেরও কষ্ট হচ্ছে। তাই তাদের সঙ্গে আমরাও গণঅনশন শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের এখানে একটি কাগজ থাকবে। সেখানে নাম লিপিবদ্ধ করে যে কেউ অনশনে যোগ দিতে পারবেন। ইতোমধ্যে ৩ জন গণশনের জন্য নাম লিপিবদ্ধ করেছেন।’
এদিকে, শিক্ষার্থীদের অনশন ভেঙে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। শিক্ষক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে এ আহ্বান জানান মন্ত্রী। এ সময় তিনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের চড়াও হওয়ার ঘটনাকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন।
শিক্ষামন্ত্রীর আলোচনার প্রস্তাব প্রশ্নে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা তাতে সম্মত হলেও, অনশনরতদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা বিবেচনায় আমন্ত্রণ রাখতে পারিনি। মন্ত্রীকে সিলেটে এসে আমাদের অবস্থা দেখে যাওয়ার অনুরোধ করেছি। তা না হলে, ভার্চুয়ালি আলোচনা হতে পারে।’
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে শনিবার তার হেয়ার রোডের বাসভাবনে আলোচনায় বসেন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি তুলসী কুমার দাস, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুহিবুল আলম, ফিজিক্যাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন মো. রাশেদ তালুকদার, অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সেস অনুষদের ডিন আরিফুল ইসলাম ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন খায়রুল ইসলাম।
এর আগে শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) বিকেলে সাংবাদিকদের শাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে আগ্রহ দেখান শিক্ষামন্ত্রী।
এ সময় আলোচনার মাধ্যমেও যে কোনো সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে চাই না। তবে সেখানে আমাদের শিক্ষার্থীরা অনশন করছেন। আমি চাই, তাদের একটি প্রতিনিধি দল যদি পাঠাতে পারেন। যত দ্রুত সম্ভব, তারা এলে আলোচনা করতে চাই। শিক্ষক সমিতির নেতাদের সঙ্গেও একটু আলাপ করতে চাই।’
উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে এক সপ্তাহ ধরে উত্তাল শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়। সর্বশেষ গত বুধবার উপাচার্যের বাসার সামনে আমরণ অনশনে বসেছেন ২৪ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে একজনের বাবা হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি অনশন শুরুর পরের দিনই বাড়ি চলে যান। বাকি ২৩ অনশনকারীর মধ্যে এখন ১৫ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। বাকি ৮ শিক্ষার্থী উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের শরীরে স্যালাইন পুশ করেছেন চিকিৎসকেরা।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ১৩ জানুয়ারি। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ছাত্রলীগ ছাত্রীদের আন্দোলনে হামলা চালায়।
পরের দিন বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা ও তাদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। ওই হামলার প্রতিবাদে ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, খুলনা, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন নাগরিক ও রাজনৈতিক সংগঠন।