অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

মৎস্যকন্যাদের অজানা দুনিয়া

সাতরং ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৫:৪৪ পিএম, ১৭ জানুয়ারি ২০২২ সোমবার   আপডেট: ০৬:০১ পিএম, ১৭ জানুয়ারি ২০২২ সোমবার

মৎস্যকন্যা

মৎস্যকন্যা

আমাদের পৃথিবীতে এখনো অনেক জায়গায় রহস্য ছড়িয়ে আছে। ভূপৃষ্ঠের চেয়ে সমুদ্রের গভীরে আরও বেশি রহস্য যার এখনো কোনো কুল-কিনারা পায়নি মানুষ।

বিজ্ঞানের উন্নতির এ যুগেও যখন সমুদ্রতলে এতসব অজানা ব্যাপার রয়ে গেছে, তাহলে আজ থেকে আরও কয়েকশ বছর আগে সমুদ্র তো মানুষের কাছে আগাগোড়াই রহস্য ছিল।

সেজন্য সমুদ্র বা পানিকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে নানারকম কিংবদন্তি। যেমন লকনেস মনস্টার, ক্রাকেন, মৎস্যকন্যা ইত্যাদি। আজকের লেখায় ঘুরে আসা যাক মৎস্যকন্যার অজানা দুনিয়া থেকে।

মৎস্যকন্যাকে বর্ণনা করা হয়েছে আধা মানুষ আর আধা মাছ হিসেবে। এর উর্ধ্বাংশ মানবীর মতো, আর নিচের দিকটা মাছের আকৃতির। আরব্য রজনীর গল্পে মৎস্যকন্যার মুখকে চাঁদের সাথে তুলনা করা হয়েছে। তাদের হাত ও পা পেটের ভেতর থাকে বলে বর্ণনা করা হয়েছে।

ইংল্যান্ডের রয়্যাল কলেজ অব সার্জন-এর সাবেক একজন কিউরেটর সিজেএস থম্পসন তার দ্য মিস্ট্রি অ্যান্ড লোর অব মনস্টারস বইয়ে লিখেছেন মৎস্যকন্যার কিংবদন্তি হাজার বছরের পুরনো। ব্যাবিলনিয়ান সময়ের দেবতা ইরা বা ওনেস, মৎস্যদেবতাকে কল্পনা করা হয়েছে দাঁড়িওয়ালা ও মুকুটসমৃদ্ধ মুখ, মানুষের ঊর্ধ্বাঙ্গ এবং নিম্নাংশ মাছের হিসেবে। গ্রিকদেরও একইরকম দেবতা আছে। হিন্দুদের বিষ্ণুর মৎস্য অবতার এ ধরনের দৃষ্টান্ত।

বিভিন্ন ফোকলোরে মৎস্যকন্যাদের ভীতিকর ও মৃত্যুর কারণ হিসেবে দেখা হওয়ার উদাহরণ আছে। সমুদ্রগামী নাবিক ও জলদস্যু উভয়ই মৎস্যকন্যাকে ভয় পেত। পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান: অন স্ট্রেঞ্জার টাইডস সিনেমায় মৎসকন্যাদের দেখা যায় যূথবদ্ধ হয়ে জলদস্যুদের ওপর আক্রমণ চালাতে। অবশ্য পরে এক মৎস্যকন্যার চরিত্রকে আমরা সিনেম্যাটিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে দেখি।

বাস্তবে মৎস্যকন্যা দেখার ও এমনকি ধরার গল্পও আছে। এ গল্পগুলো বেশিরভাগ মধ্যযুগেই ছড়িয়েছিল। অনেক নাবিকই দাবি করতেন তিনি সমুদ্রে মৎস্যকন্যা বা সুন্দরী নারীর দেখা পেয়েছেন। ১৬০০ সালের এক গল্প অনুযায়ী জনৈক মৎস্যকন্যা এক নালার মাধ্যমে হল্যান্ডে (বর্তমানে নেদারল্যান্ড) প্রবেশ করার সময় আহত হয়। পরে স্থলবাসী তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলে। সেই মৎস্যকন্যা পরে দেশটির নাগরিক বনে যান, ডাচ ভাষাও শিখে ফেলেন। আরও আশ্চর্যের ব্যাপার হলো তিনি নাকি শেষ অব্দি ক্যাথলিক হিসেবে কনভার্ট হয়েছিলেন।

অনেক নাবিক, জাহাজের ক্যাপ্টেন আচানক মৎস্যকন্যা দেখে প্রেমে বিভোর হতেন। তারপর যেই না কোমরের নিচে চোখ পড়তো, অমনি তাদের ভালোবাসার আশা তাসের ঘরের মতো ভেঙেচুরে যেত।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, মানুষের আকারের কাছাকাছি কিছু সামুদ্রিক প্রাণী যেমন ম্যানাটিস (সি কাউ) ইত্যাদির বিকৃত বিবরণ থেকে মৎস্যকন্যার কিংবদন্তির সূচনা হয়েছে। সমুদ্রে নাবিকদের হ্যালুসিনেশনে ভোগা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আবার অনেক নাবি শেষ বিকেলের মৃদু আলোয়, রোমান্টিক সময়ে মৎস্যকন্যা দেখতে পেতেন। তাদের দেখার দূরত্ব, কম আলো, কনফার্মেশন বায়াস ইত্যাদির কথা মাথায় রেখে বলাই যায় তারা ভুল দেখেছেন, বা স্বাভাবিক কোনো সামুদ্রিক জীবকে ভুলভাবে দেখেছেন।

একুশ শতকেও মৎস্যকন্যা দেখার গুজব মাঝেমধ্যে ইন্টারনেটে ছড়িয়েছিল, কিন্তু সেগুলো হালে পানি পায়নি। সে যাই হোক, মৎস্যকন্যা থাকুক বা না থাকুক, তাকে নিয়ে গল্প পড়তে আমাদের আপত্তি নেই। আর ক্রিপ্টোজুওলজিস্টদের কাছে এটি একইভাবে বিনোদন আর জ্ঞানের খোরাক। তবে সত্যিই মৎস্যকন্যারা থেকে থাকলে কেমন হতো সেটা ভাবলেও অবাক হতে হয়। তাহলে কি মানুষ আবার সমুদ্রে ফিরে যাওয়ার কোনো উপায় পেত? অথবা জৈবিক কোনো সম্পর্কও ঘটতো এ দুই প্রজাতির মধ্যে? নাকি পুরো সম্পর্কটি সাংঘর্ষিক হতো?

লাইভসায়েন্স অবলম্বনে