অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা

ডিসট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, সিলেট

প্রকাশিত: ১১:০০ পিএম, ১৬ জানুয়ারি ২০২২ রোববার   আপডেট: ০৯:৩৮ এএম, ১৭ জানুয়ারি ২০২২ সোমবার

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ

তিন দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও এর জেরে পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষের পর সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

**শাবিপ্রবিতে উপাচার্য মুক্ত, পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষে আহত ২০

জরুরি সিন্ডিকেট সভা শেষে রবিবার (১৬ জানুয়ারি) রাতে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এ কথা জানিয়েছেন।

তিনি আরও জানান, যার পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছিলেন সেই প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজা পদত্যাগ করেছেন। তার পরিবর্তে বেগম সিরাজুন্নেসা হলের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নাজিয়া চৌধুরীকে।

বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা হলেও প্রশাসনিক সব কার্যক্রম চলবে বলে জানান উপাচার্য।

এদিকে, উপাচার্যের এই ঘোষণার পর ফের বিক্ষোভ শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। হল ছাড়বে না বলে ঘোষণা দিয়ে বঙ্গবন্ধু, শাহপরান ও সৈয়দ মুজতবা আলী হলের ছাত্ররা মিছিল করেছে।

বঙ্গবন্ধু হলের ছাত্র শাকিল আহমদ জানান, হঠাৎ করে উপাচার্যের এই সিদ্ধান্ত এসেছে। এটা মেনে নেওয়া সম্ভব না। এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিতে হবে। শিক্ষার্থীরা হল খালি করবে না।

হল ছাড়ার সিদ্ধান্ত না মেনে কোনো শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান ওই হলের প্রভোস্ট সামিউল ইসলাম।

প্রাধ্যক্ষ জাফরিনের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা হলের ছাত্রীরা বৃহস্পতিবার রাত থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে তারা সরে যান। দাবি পূরণ না হওয়ায় শনিবার সন্ধ্যায় ফের বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়ক আটকে তারা বিক্ষোভ শুরু করেন।

মধ্যরাতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়ে সরে গেলেও রবিবার সকাল থেকে ফের শুরু হয় তাদের বিক্ষোভ। তাতে যোগ দেন সহপাঠীরাও।

বেলা ৩টার দিকে নিজ কার্যালয় থেকে বের হয়ে বাসভবনের দিকে যাওয়ার পথে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে যান আন্দোলনকারী ছাত্রীরা। এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে উপাচার্যকে ঘেরাও করে স্লোগান দিতে থাকেন তারা। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়ায় আইআইসিটি ভবনে গিয়ে অবস্থান নেন উপাচার্য ফরিদ।

বিকেল ৪টার দিকে সেখানে পুলিশ সদস্যরা অবস্থান নিলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তারা ‘ক্যাম্পাসে পুলিশ কেন’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। কোষাধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম ও অন্য শিক্ষকরা গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করেন।

উত্তেজনা বাড়তে থাকলে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। শিক্ষার্থীরাও ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। এরপর শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া।

শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে কয়েকটি রাবার বুলেট ছোড়া হয়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ গুলিবিদ্ধ হন।

এর মধ্যেই বিক্ষোভকারীদের আইআইসিটি ভবন থেকে হটিয়ে উপাচার্যকে বের করে তার বাসভবনে নিয়ে যায় পুলিশ।

মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ জানান, পুলিশের গুলিতে অধ্যাপক জহির গুলিবিদ্ধ হননি। ওই গুলি কারা ছুড়েছে তা তিনি জানেন না। তাকে মাউন্ড এডোরা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় এক নারী কনস্টেবলও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ইটের আঘাতে তিনিও আহত হয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আলমগীর কবীর জানান, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় শিক্ষক, পুলিশ ও শিক্ষার্থীসহ অন্তত অর্ধশত আহত হয়েছেন। তাদের সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রক্টর আরও জানান, গুলিবিদ্ধ অধ্যাপক জহিরকে মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি শঙ্কামুক্ত।