কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বেড়ে গেলো ফলন
সাতরং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:১৩ পিএম, ৪ নভেম্বর ২০২০ বুধবার
ভারতের টেক্সটাইল মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে প্রায় ৬ মিলিয়ন চাষী তুলার চাষ করে থাকেন। কিন্তু, কীট-পতঙ্গের আক্রমণে তাদের প্রতি বছর বিশাল অঙ্কের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। ২০১৭ সালে এ কারণে শুধু মহারাষ্ট্র রাজ্যের কৃষকদের প্রায় ৫০% উৎপাদিত শস্য নষ্ট হয়, ফলে তাদের প্রায় ১৫ হাজার কোটি রুপির ক্ষতির মুখ দেখতে হয়েছে।
যার ফলে পুরো ভারতে ব্যবহৃত কীটনাশকের ৫৫% এরও বেশি ব্যবহার করা হয় তুলা চাষে। যদিও অতিমাত্রায় কীটনাশকের ব্যবহার বিরূপ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানোর যথেষ্ট সম্ভাবনা রাখে।
কৃষকদেরকে এ থেকে মুক্তি দেয়ার উদ্দেশ্যে ভারতেরই এক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ওয়াধওয়ানি এআই’ ২০১৮ সাল থেকে এ নিয়ে এক ব্যতিক্রমি উদ্যোগ নেয়। তারা আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে এর আরো নির্ভরযোগ্য সমাধানের চেষ্টা করতে থাকে।
তথ্য সংগ্রহ
প্রতিষ্ঠানটির প্রজেক্টের প্রথম ধাপ ছিলো একটি নির্দিষ্ট জায়গায় কতগুলো কীটের আক্রমণের ঘটনা ঘটে তা জানা এবং সে অনুযায়ী কী পরিমাণ কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে তার পরামর্শ পাঠানো। কিন্তু আগের তেমন কোনো তথ্য না থাকায়, দলটির তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রথমেই একটি বিশেষ মোবাইল ফোন এ্যাপ বানাতে হয়।
কৃষকরা সাধারণত কীটের কোনো বড় আক্রমণ হবে কিনা তা বুঝতে ‘ফেরোমোন ফাঁদ’ ব্যবহার করত। দলটি কৃষকদের বলেছিলো ফাঁদে আটকে যাওয়া কীটদের একটি সাদা কাগজে রেখে তার ছবি তুলে এ্যাপটির মাধ্যমে তাদের পাঠাতে। যার মাধ্যমে তারা তুলা জাতীয় শস্যের মূল হুমকি বিভিন্ন ধরণের বলওয়ার্ম সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা পেতে পারে।
দলটির সিনিয়র গবেষক জেরোম হোয়াইট জানান, তারা প্রথম কয়েক মৌসুম শুধু মডেলটি দাঁড় করাতেই কাজ করে গেছেন। সে সময় তাদের মূল লক্ষ্য ছিল তথ্য সংগ্রহ ও তা পর্যবেক্ষণ করা।
তাদের এমন একটি মডেল দাড় করাতে হতো, যেটা ছবিতে দেখানো কীট এবং তার সংখ্যা সঠিকভাবে সনাক্ত করতে পারে, যাতে কৃষকদের সঠিক পরামর্শ প্রদান করা যায়। কিন্তু মূল বাঁধাটিই ছিল এ পর্যায়ে। অনেক কৃষক কম দামি ফোন ব্যবহার করায় ভালো মানের ছবি পাওয়া যাচ্ছিলো না। আবার অনেকে ব্যাকগ্রাউন্ডে সাদা রাখেননি, আবার অনেকে কম আলোতে ছবি তুলেছেন। ফলে এ পর্যায়ে এসে গবেষকদের একরকম নাকানি-চুবানিই খেতে হয়।
প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ মহারাষ্ট্রে ২০১৮ সালে শুরু হলেও, গত বছর তারা মডেলটির ২৮ হাজারেরও বেশি ছবি সমৃদ্ধ আরো আধুনিক সংস্করণ প্রবর্তন করে। যেহেতু এই এ্যাপটি সাধারণত কম মূল্যের ফোনে ব্যবহার হওয়ার কথা, তাই গবেষকদের এটির আকার ২৫৬ মেগাবাইট থেকে ছোট করে ৫ মেগাবাইটে নিয়ে আসতে হয়। পরবর্তীতে অফলাইনেও যাতে এটি চালানো যায়, সে ব্যবস্থাও তাদের করতে হয়।
মডেলটি ছবিগুলোকে এখন অনেক মার্জিত উপায়ে বিশ্লেষণ করে থাকে। এটি এখন ভারতের গুজরাট, মহারাষ্ট্র ও তেলাঙ্গানা রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে এ্যাপটি ব্যবহার করছেন এমন কৃষকের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার। সব কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় প্রত্যেকটি গ্রামে একজন করে প্রধান কৃষক নিযুক্ত করা হয়, তার কাজ প্রজেক্ট সমন্বয়কারীর পাঠানো নির্দেশনা সাধারণ কৃষকদের জানানো।
সাধারণত কৃষকদের তিন ধরণের বার্তা পাঠানো হয়ে থাকে- সবুজ, হলুদ এবং লাল। তার ভিত্তিতে এ্যাপে দেখানো কীটনাশক ব্যবহার করতে বলা হয়ে থাকে।
গ্রীষ্মে মহারাষ্ট্রে চালানো এক নিরীক্ষায় দেখা গেছে, ১৫০ জন কৃষক উপরে বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করেন এবং প্রায় ২৫% বেশি ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
এ ফলাফলের ভিত্তিতে মহারাষ্ট্র এবং তেলাঙ্গানা রাজ্য সরকার পরবর্তী তুলা চাষের মৌসুম অর্থাৎ জুন থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত এ প্রজেক্ট পরিচালনার সম্মতি প্রদান করে। এছাড়া গবেষকরা বেটার কটন ইনিশিয়েটিভ বা বিসিআই নামক এক বৈশ্বিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করছে। উল্লেখ্য, বিসিআই তুলা চাষীদের ভালোর জন্য কাজ করে থাকে। বিসিআই- এর সাথে কাজ করার ফলে গবেষকরা তাদের প্রজেক্ট বিশ্বের অন্যান্যা দেশেও শুরু করার কথা ভাবছেন।