শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা দিতে জন্মনিবন্ধনের শর্ত শিথিল
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: ০৪:১৪ পিএম, ৭ জানুয়ারি ২০২২ শুক্রবার আপডেট: ০৪:১৭ পিএম, ৭ জানুয়ারি ২০২২ শুক্রবার
শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা দিতে জন্মনিবন্ধনের শর্ত শিথিল
১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার আওতায় আনতে জন্মনিবন্ধন করার শর্ত শিথিল করেছে সরকার। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ২০০১ সালের পর জন্ম নেয়া শিশুর জন্মনিবন্ধনের ক্ষেত্রে পিতা-মাতার জন্মনিবন্ধন নম্বর দিতে হবে না।
রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. ওসমান ভুঁইয়ার সই করা অফিস আদেশ থেকে এ তথ্য জানা যায়।
জানতে চাইলে ডেপুটি রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. ওসমান ভুঁইয়া বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যাতে দ্রুত জন্মনিবন্ধন করতে পারে এ জন্যই সরকার পিতা-মাতার জন্মনিবন্ধন ছাড়া নতুন জন্মনিবন্ধন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আশা করছি এখন শিক্ষার্থীরা সহজেই জন্মনিবন্ধন করে করোনার টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পারবে।’
অফিস আদেশে বলা হয়, সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কোভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন প্রদানের জন্য জন্মনিবন্ধন আবশ্যক। ২০০১ সালের পর জন্ম নেয়া শিশুর জন্মনিবন্ধনের ক্ষেত্রে বিডিআরআইএস সফটওয়্যারে পিতা-মাতার জন্মনিবন্ধন নম্বর দেয়ার নিয়ম আছে।
ছাত্র-ছাত্রীদের কোভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন দেওয়া ও সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধনের জন্য পিতা-মাতার জন্মনিবন্ধন ছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্মনিবন্ধন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আরও বলা হয়, ১২-১৮ বছর বয়সী ছাত্র-ছাত্রীদের কোভিড-১৯ টিকার জন্য সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানের দেয়া সনদের ভিত্তিতে প্রয়োজনে পিতা-মাতার জন্মনিবন্ধন ছাড়া ন্যূনতম সময়ে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হলো।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে টিকা ছাড়া ১২ বছর বয়সী কোনো শিক্ষার্থী স্কুলে যেতে পারবে না বলে সিন্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে ইনস্ট্রাকশন দিয়ে দিয়েছে যে ভ্যাকসিন ছাড়া ১২ বছরের ওপরে কেউ স্কুলে আসতে পারবে না। ভ্যাকসিন তো এখন গ্রামগঞ্জ পর্যন্ত আমাদের এভেইলেবল আছে। সে জন্যই এটা ইমপোজ করে দেয়া হয়েছে। ভ্যাকসিনে গিয়ে যদি স্কুলে যাওয়া ইজি হয় তাহলে সেটাই সবাই কামনা করে।’
তিনি বলেন, ‘টিকা না নিয়ে কেউ স্কুলে যেতে পারবে না। অন্তত পক্ষে ফার্স্ট ডোজ নিতে হবে। ১২ বছরের নিচে এখনও কাউন্টে আসেনি আমাদের দেশে। বাচ্চাদের নিবন্ধনেরও প্রয়োজন নেই। তারা বার্থ সার্টিফিকেট বা যেকোনো একটি সার্টিফিকেট নিয়ে গেলেই টিকা পেয়ে যাবে।’
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ায় ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এরপর দফায় দফায় বাড়ানো হয় ছুটির মেয়াদ। সর্বশেষ ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছুটির মেয়াদ বাড়ানো হয়। এ ছুটি শেষে ১২ সেপ্টেম্বর খুলে দেয়া হয় প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
গত অক্টোবর মাসে মানিকগঞ্জে পরীক্ষামূলকভাবে ১২০ শিক্ষার্থীদের করোনা প্রতিরোধী টিকা দেওয়া হয়। এরপর ১ নভেম্বর থেকে স্কুল-কলেজের ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। প্রথমে কিছুদিন ঢাকার স্কুলকলেজে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া শুরু হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে দেশের সব জেলায় স্কুলের শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হয়। ফাইজারের টিকা পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
দেশে ষষ্ঠ থেকে একাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী আছে কমবেশি ১ কোটি ২০ লাখ। যাদের মধ্যে অধিকাংশের বয়স ১২ থেকে ১৭ বছর। সরকারের লক্ষ্য এসব শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া।
করোনার ডেলটা ধরনের দাপটে গত বছরের মাঝামাঝি দেশে করোনায় মৃত্যু, রোগী শনাক্ত ও শনাক্তের হার বেড়েছিল। তবে আগস্টে দেশব্যাপী করোনার গণটিকা দেওয়ার পর সংক্রমণ কমতে থাকে। গত ডিসেম্বরের প্রথম কয়েক সপ্তাহ ধরে করোনা শনাক্ত ১ শতাংশের ঘরেই ছিল। কিছুদিন ধরে সংক্রমণে আবার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিয়েছে। মৃত্যু, শনাক্তের সংখ্যা ও শনাক্তের হার, এই তিন সূচকই বাড়তির দিকে।