ফুড এলার্জি বাড়ছে দিন দিন
লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:২২ পিএম, ৩ নভেম্বর ২০২০ মঙ্গলবার আপডেট: ০৬:২৫ পিএম, ৩ নভেম্বর ২০২০ মঙ্গলবার
পৃথিবীব্যাপী দিন দিন বাড়ছে ফুড এলার্জি। কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ফুড এলার্জি অনেক সময় ঝুঁকিপূর্ণ বা প্রাণনাশকও হয়ে উঠতে পারে।
ফুড এলার্জি কী?
কোনো এক বা একাধিক খাবারের প্রতি ব্যক্তির অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াকে মূলত আমরা ফুড এলার্জি বলে থাকি। যেমন- চুল্কানি, জিহ্বা ফুলে যাওয়া, বমি, ডায়রিয়া, দম বন্ধ হয়ে আসা বা রক্তচাপ কমে যাওয়া ইত্যাদি। সাধারণত কোনো খাবার গ্রহণের পরপরই বা কয়েক ঘন্টা পরেও এই ধরণের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এই প্রতিক্রিয়া অনেক সামান্যও হতে পারে, আবার সময়ে সময়ে অনেক ব্যাপকও হয়ে উঠতে পারে।
এ ধরণের প্রতিক্রিয়াকে ডাক্তারির ভাষায় বলা হয় ‘এনাফিল্যাক্সিস’।
পৃথিবীতে প্রতি চারজনের একজনের সাধারণত খাবারের প্রতি এলার্জি থাকে। কিন্তু গত কয়েক বছরে সংখ্যাটা দিন দিন বাড়ছে।
পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৯৩ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এ ধরণের রোগীর সংখ্যা তিনগুন বেড়েছে। ২০১৩ থেকে ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডে শিশুদের এ রোগ বৃদ্ধির হার প্রায় ৭২%।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের মেডিকেল মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের এমেরিটাস প্রফেসর গ্রাহাম রুক এ রোগের এত দ্রুত বৃদ্ধির ঘটনাকে ‘ক্রেজি’ বলে মন্তব্য করেছেন।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এলার্জি স্পেশালিস্ট কারি নাড্যু জানিয়েছেন, ১৯৬০ সালে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩% লোকের ফুড এলার্জি ছিলো, সেখানে ২০১৮ সালে তা ৭% এ এসে দাঁড়িয়েছে।
শুধুমাত্র যে আক্রান্তের হার বেড়েছে তাই নয় বরং যেসব খাবারের প্রতি মানুষ এলার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখাতো এমন খাবারের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশ্ব খাদ্য সংস্থার অধীনে আন্তর্জাতিক ফুড সেইফটি অথরিটিস নেটওয়ার্ক নামে একটি সংগঠন কাজ করে। সেখানে কর্মরত পিটার বেন এমবার্ক জানিয়েছেন, কয়েক দশক আগে মানুষ সাধারণত সামুদ্রিক খাবার, দুধ বা বাদামজাতীয় খাবারের প্রতি বেশি এলার্জিক ছিলো। কিন্তু বর্তমানে মানুষ যেসব খাবারের প্রতি এলার্জিক তার লিস্টটা অনেক পরিবর্তিত এবং ব্যাপকও বটে।
এখন পর্যন্ত বিশেষজ্ঞরা একমত যে ফুড এলার্জি দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু, এটি থেকে আসলে কী প্রতীয়মান হয়?
এলার্জি বিশেষজ্ঞরা এর ‘হাইজিন হাইপোথিসিস’ নামে একটা ব্যাখ্যা দাড় করিয়েছেন। অর্থাৎ ঘরে ব্যবহৃত জিনিসপত্রে এবং ব্যক্তিগত সচেতনতা সঠিকভাবে মেনে চললে, রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম।
এ মতের আরো একটা আধুনিক ব্যাখ্যা হচ্ছে এই, ঘর পরিষ্কার রাখার চেয়ে বিভিন্ন ধরণের অণুজীব এর সংস্পর্শে আসা। এর ফলে মানবশরীর সেসব জীবাণুর বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পারে।
ডেনমার্কে এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব পরিবারে পোষা কুকুর বা বিড়াল থাকে সেসব পরিবারের সদস্যদের এলার্জিজনিত সমস্যা কম হয়ে থাকে সাধারণত।
রুকের মতে, আরেকটা ভালো বাস্তব প্রমাণ হলো, যেসব বাচ্চাদের বেশি এন্টিবায়োটিক দেয়া হয়, তাদের ফুড এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কারণ, এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের কারণে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাকটেরিয়া গুলো মারা যায়। এ ধরণের ঘটনাকে রুক ‘ওল্ড ফ্রেন্ডস’ নামে নামাঙ্কিত করেছেন।
ফুড এলার্জির কারণ কী?
ফুড এলার্জির বিভিন্ন কারণে হতে পারে। কিন্তু এর প্রধান একটি কারণ হচ্ছে, ভিটামিন ডি। যদিও এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের বিভিন্ন মতপার্থক্য রয়েছে।
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে ভিটামিন ডি-এর সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ফুড এলার্জি না হওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু অন্য কিছু গবেষণায় দেখা যায়, জন্মের সময় যেসব বাচ্চাদের ভিটামিন ডি বেশি থাকে তাদের ৩ বছর বয়স হতে ফুড এলার্জি হয়।
ফুড এলার্জি থেকে পরিত্রানের উপায়?
গবেষণা বলছে, যেসব খাবারে প্রতি একজন সম্ভাব্য এলার্জি হতে পারে, সেসব খাবার সম্পূর্ণরুপে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করলেও খুব বেশি বাঁচা যাবে না।
এর মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ‘ইম্যিয়ুনোথেরাপি’ অর্থাৎ যেসব লোক ইতিমধ্যে এলার্জিতে আক্রান্ত তাদের সামান্য কিন্তু ঘন ঘন সেসব খাবারের মুখোমুখি করা। ফলে তাদের শরীর সে ধরণের খাবারের প্রতি সহিষ্ণু হয়ে উঠতে পারে।