অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

আসাদ আলম সিয়াম-এর একগুচ্ছ কবিতা

প্রকাশিত: ১২:৩১ পিএম, ২ নভেম্বর ২০২০ সোমবার   আপডেট: ০১:৫৬ পিএম, ২ নভেম্বর ২০২০ সোমবার

ঝড়

দুটো দুপুর ভাঁজ করা দেরাজে,
অপরাহ্নের নিঃসঙ্গতায় তাই ন্যাপথলিনের গন্ধ।
পদ্মপানায় স্থির মাছরাঙ্গা এক,
নিঃশঙক চিত্তে ঝড়ের অপেক্ষায়-
সামান্য বর্ষণেই বুকে তুলে নেবে, কদমের ঘ্রান।

দাওয়ায় ভাসে দূরাগত দীর্ঘশ্বাস
কাকে মনে করে থেমে যায়
কার গোবর লেপা দুটো হাত।
পুরোটা উঠান জুড়ে শুধু
অলস রোদের একলা কাটাকাটি।

মেঘ আর রোদের এমন লুকোচুরি
কোন এক প্রাচীন দুপুরে
কাছে এনেছিলো তাকে, ইশারায় -
গেছে আরো শত কতো বিষন্ন দুপুর
রয়ে গেছে শুধু ফেলে রাখা হেঁয়ালী তার।

যে যায়, কেন সে ফেলে রেখে যায়
রহস্যময় অচিন ছায়া সব?
মায়াবী স্মৃতিবিষ?
কেন প্রতি ঝড়ে ফিরে ফিরে
আসে উদ্দাম ক্ষতচিহ্ন সব,
মাতাল হাওয়ার ঘরছাড়া ডাক?

 

আগুন্তক

সূর্যের সাথে ঘুম থেকে
উঠে দেখি টেবিলে লাল খাম,
দরজায় অপেক্ষায় কিশোরী মেঘদল
তারও পিছে ঢেউয়েরা গায় প্রাতসঙ্গীত।

দুটো বালিকা জোস্ন্যা
সদ্যাগত যৌবনোষ্ণতায় এলোমেলো
আঁচলে উন্মুক্ত করে পদ্মনাভ,
পড়ে পাওয়া রাঁধাচূড়ায় মৃত কিন্নরী বোনে
বিরহের কাঁথা, কাবুলীওয়ালা ফেরী
করে ফেরে হাছনের ঘর।

কবিদের আরাধনা পাবে বলে
স্বরস্বতী ভাঙেনা মনসার পন –
যতসব চিত্রকল্প সদলে ইশকুল পালায়,
পাড়ার ইডিপাস ধোঁয়া ছেড়ে বলে ওঠে -
‘হেল অফ আ টাইম’।

 

ফিনিক্স

(সহমর্মী ষষ্ঠ পান্ডব কে)

পুরোটা বালকবেলা খরচ করে
কিশোরীর হাতে ঘুড়ি হতে চেয়েছিলো সে,
যে ঘুড়ি পাবে বলে
অনেকটা আলপথ এসেছে হেঁটে কিশোর একাকী,
পলিমাটি কাতর বিগতা নদীবুকে
দাড়ানো বিষন্ন চিমনীগাছ ছাড়িয়ে
যে ঘুড়ি ওড়ে অনেক ওপরে,
একদম আকাশের বুকের ভেতর -
লাটাইয়ের শৃংখল ছিঁড়ে যে ছোঁয় মেঘের নরম
ঠোঁট; যে ভাসে কোন ভীরুতা ছাড়াই, অনাবিল -
যতক্ষণ না গোধুলী চুমু খায় পাখিদের পালক;
কিংবা তারাদের স্কুলে ছুটির ঘন্টা বেজে গ্যালে যে বলে -
আয়, আয়, আজ তুই বিষ পান করে নে;
আর গোধুলীস্নাত শর্ষে বালিকার সাথে
যে নেয় এক পূর্ণ ভোরের প্রতিশ্রুতি
অস্তগামী সূর্যের কাছে -
তার মতো হতে চেয়েছিলো সে।

চেয়েছিলো শেষ ট্রেনের
হুইসেল হতে। চেয়েছিলো দূর থেকে
আগমনী গান হয়ে ভেসে আসতে,
তারপর ক্রমে বড় হতে হতে
খুব কাছে এসে পরিত্যাক্ত একাকী স্টেশনে
পূর্নদৈর্ঘ্য স্বপ্ন হয়ে দাঁড়াতে।
ফিরবেনা বলেই যারা ঠিক করেছিলো,
চেয়েছিলো, তার ডাকেই যেন তারা
ঠিক ঠিক ফিরে যাক,
শেষরাত্রির ঘুমে স্বপ্নালু কাউকে
ডেকে তুলে কুয়াশার স্পর্শে জানাক -
প্রতীক্ষা একাকীত্বের চেয়ে বড় নয়,
যেমনটা জেনেছে সে নিজস্ব নিঃসঙ্গতার দামে।

 

উদ্বাস্তু

পাখীরা ফিরেছে ঘরে
অথবা ঘরে ফেরে বলেই তারা পাখী।
আমাদেরই কোন ঘর নেই
শুধু ঘরের স্বপ্ন আঁকি।

এক টুকরো বাগান, আধখানা ঘর
আর বারান্দায় তোমার শাড়ী -
নাকি তোমাকে ভাবিনি বলেই
আমরা আজও, দীপান্তরী।

 

এক্সিবিশন

দেয়ালে সব নীরব পোট্রেট
ক্যামেরা আসবেনা বলে
আসেনি কেউ,

এমনকি তরুণ শিল্পীর দলও
একটা ছবি, লাফিয়ে উঠলো হঠাৎ
আর সেই মুহূর্তে আর্তনাদ করে
নীরবতা খান খান হয়ে

ছড়িয়ে পড়লো মেঝেয় -
তার দু’এক টুকরো পকেটে নিয়ে
বাড়িও ফিরলাম আমি একাই।

 

ভবঘুরে

সকালের খিড়কি পেরিয়ে অলহ্ম্যে
ঢুকে পড়ে দেবদূত, ঠিক যেন
জলরং, কোবাল্ট নীলের স্পল্যাশ,
বাধনবিহীন যে বাধঁন, অকারণ,

তার টিকিট বিকোয় সস্তায় –
আমি গেঁথে রাখি লাল বোর্ড পিন
একদা এইখানে ঠিকানা ছিলো, এখন
ভবঘুরে, বন্ধনহীন, গুগলে অর্বাচিন।

 

রাস্তায় আমাদের আড্ডা

আমরা বসেছি সন্ধ্যায়, ম্রিয়মান,
যেকথা হচ্ছে তারো বাইরে ছিলো কিছু কথা,
যদিও না বলা, তবুও শুনছিলো সকলেই।

এক একটা সর্ম্পক এক একটা সন্ধ্যায়
কেমন করে নেমে আসে অচেনা আড্ডায়।

 

একুশ

হিরণবালা দিদা হয়ে গ্যাছে
কিরণবালা পুড়েছে স্টোভে
তবু আয়নায় দাড়ালে একি
দেখি, একুশ বছরটাকে।