‘মুক্তিবাহিনী দিবস’ প্রবর্তনের দাবি প্রবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের
পুলক মাহমুদ, নিউইয়র্ক
প্রকাশিত: ১১:৫৩ এএম, ১০ ডিসেম্বর ২০২১ শুক্রবার
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সর্বোচ্চ আত্মদানকারী শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে আলাদাভাবে ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস’ পালনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফর করা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী, আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি’র সম্মানে আয়োজিত এক সভায় এ আহ্বান জানানো হয়।
নিউইয়র্কের জ্যামাইকার এক পার্টি হলে আয়োজিত এই সংবর্ধনা সভার শুরুতে, স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদ এবং শহীদ বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এরপর প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে প্রধান অতিথি আ ক ম মোজাম্মেল হককে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান, মুক্তিযোদ্ধা শরাফ সরকার, মনজুর আহমেদ, সৈয়দ আব্দুল মতিন, শওকত আকবর রিচি এবং খোরশেদ আনোয়ার। বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাসুদুল হাসানের সভাপতিত্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা বঙ্গবন্ধুর স্নেহভাজন কমান্ডার ড. আব্দুল বাতেন অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, দেশে স্বাধীনতা বিরোধীরা আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। একাত্তরে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে বিএনপি-জামায়াত জোট। রাজনৈতিক কর্মসূচীর আড়ালে জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের সংগঠিত করে বাঙালী জাতির বিরূদ্ধে চূড়ান্ত যুদ্ধে নেমেছে বিএনপি-জামায়াত। তাই একাত্তরের মত আবারো একাতাবদ্ধ হয়ে এদের প্রতিরোধ করতে হবে। তিনি প্রবাসে বসবাসকারী মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানান, স্বাধীনতা বিরোধীদের বিপক্ষে বিশ্বজনমত গড়ে তোলার।
মতবিনিময় সভায় প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দাবি সম্বলিত একটি আবেদনপত্র হাতে তুলে দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মুন্সী বসির উদ্দিন, ইসমাইল খান আনসারী এবং হায়দার আলী।
সভায় মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হুসাইন ও খুরশিদ আনোয়ার বলেন, প্রবাসে স্বাধীনতা বিরোধীদের অপতৎপরতা দিন দিন বেড়েই চলছে। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এদের প্রতিহত করতে হবে। এ সময় মন্ত্রী বলেন, দেশে ও প্রবাসে বসবাসকারী মুক্তিযোদ্ধাদের উন্নতমানের পরিচয় পত্র দেয়ার পরিকল্পনা আছে তার মন্ত্রনালয়ের। এবং শীগ্রই তার বাস্তবায়ন করবে সরকার। তবে সবার আগে কারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা সেটি খুঁজে বের করার কাজটি করছেন তারা। তিনি বলেন দেশের মতো প্রবাসের মুক্তিযোদ্ধারাও সব রকম সুবিধা পাবেন। তিনি জানান, মৃত্যুর পরও মুক্তিযোদ্ধাদের যেনো কেউ ভুলে না যায় সেজন্য মৃত্যুর পর তাদের সমাধি সংরক্ষনেরও ব্যবস্থা নেবে সরকার।
এ সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা বঙ্গবন্ধুর স্নেহ ভাজন কমান্ডার ড. আব্দুল বাতেন মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, মুক্তিবাহিনীই বাংলাদেশের প্রথম সশস্ত্র বাহিনী যারা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ করে চুড়ান্ত বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলো। শুধু তাই নয়, পাক সেনারা আত্মসমর্পণ করেছিলো, ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় যৌথ বাহিনীর কাছে। তাই ২৭ এপ্রিল বা অন্য কোনো সুবিধাজনক দিনকে ‘মুক্তি বাহিনী দিবস বা মুক্তিযোদ্ধা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃত দেয়ার দাবী জানান তিনি। এ ব্যপারে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়কে যথাযথ ভূমিকা পালনের ও জননেত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করার আহ্বান জানান। সভার শেষ পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের হাতে একটি ক্রেস্ট তুলে দেন শেখ রাসেল ফাউন্ডেশন ইউএসএ ইনক্ এর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. তাজুল ইসলাম।
মতবিনিময় সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী, গোলাম মেরাজ, মুস্তফা খান মিরাজ। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন সর্ববীর আলমগীর হোসেইন, নাসির উদ্দিন, রুহুল আমিন ভূঁইয়া, এ এইচ হাওলাদার, আর আমিন, কাজী মুনির হোসাইন, মোহাম্মদ সানাউল্লাহ, জালাল উদ্দিন সরকার, মাহবুব ই খোদা হানিফ, কামরুজ্জামান সিকদার, হিরু ভূঁইয়া, শেখ ইমাম হোসেন, মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ প্রমুখ। অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্বাবধানে ছিলেন, মুক্তিযোদ্ধা শরাফ সরকার ও জহিরুল ইসলাম।
নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কন্সুলেটের ভারপ্রাপ্ত কন্সাল জেনারেল এসএম নাজমুল হাসান এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের প্রেস সেক্রেটারী ফজলে এলাহি মিনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।