অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

বাংলাদেশি আলির লিবিয়ায় দাস হওয়ার গল্প

সাতরং ডেস্ক

প্রকাশিত: ০১:০৩ পিএম, ৮ ডিসেম্বর ২০২১ বুধবার   আপডেট: ০১:০৭ পিএম, ৮ ডিসেম্বর ২০২১ বুধবার

প্রায়ই ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয় বাংলাদেশি অভিবাসীরা। প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি। এএফপি।

প্রায়ই ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয় বাংলাদেশি অভিবাসীরা। প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি। এএফপি।

২০১৯ সাল, আলি’র (ছদ্মনাম) বয়স তখন কেবল ১৯ বছর। মা-বাবার দোয়া নিয়ে নতুন এক জীবনপথের সন্ধানে ছুটলো এই তরুণ। দেশ-মাটির মায়া ছেড়ে সুদূর মধ্যপ্রাচ্যের উদ্দেশে রওনা দিলো সে, দালালের ওপর নিজের সর্বস্ব ছেড়ে দিয়ে। একটু ভালো জীবনের আশায়, আর দশটা বাংলাদেশি নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলেদের মতো দেশের চেয়ে বিদেশের ওপর বেশি ভরসা করলো আলি।

এরপর অনেক জল ঘোলা হলো, জীবনের ভিন্ন এক রূপ দেখলো আলি। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে লিবিয়া থেকে ইতালি এসে পৌঁছাল সে। ইতালির পালের্মোতে একদিন তার দেখা পেলেন আফ্রিকান সাংবাদিক ইসমাইল আইনাশে। তিনি আলির গল্প তুলে এনেছেন তার কলমে।

ঢাকার একটা মনোহারী দোকানে কাজ করতো আলি। দালালের বারবার প্ররোচনায় অবশেষে ঘরের তিনটা গরু বিক্রি করে বিদেশ যাবার খরচ জোগায় পরিবার। দালাল বলেছিল মাসে ৪০-৫০ হাজার টাকা অনায়াসে আয় করতে পারবে সে।

ঢাকা কলকাতা থেকে বাস, এরপর বিমানে কয়েক দেশ ঘুরে অবশেষে লিবিয়ার বেনগাজি এয়ারপোর্ট: আলির চোখে যে নতুন জীবনের আশা জ্বলজ্বল করছিল তা নিমেষেই বিলীন হয়ে গেল। ধ্বংসপ্রাপ্ত লিবিয়া দেখে তার যে খারাপ লাগার জন্ম হয়েছিল, সেটার রেশ কাটার আগেই দালালদের লিবিয়ান সহচারীরা ধরে নিয়ে গেল তাকে। কাজ দেওয়ার বদলে মুক্তিপণের খবর পাঠাল তার পরিবারের কাছে।

বাধ্য হয়ে তার মা-বাপ অবশিষ্ট দুটো গরুও বেচে দিলো। কারণ টাকা না দিলে জুটতো মারধোর, এবং হয়তো শেষকালে বিদেশবিভূঁইয়ে করুণ মৃত্যু। কিন্তু টাকা দিয়েও মুক্তি মেলল না। দাস হিসেবে খাঁটতে হলো আবারও অনেকদিন, লিবিয়ার বিভিন্ন কারখানায়।

বাধ্য হয়ে আবারও দালাল ধরলো আলি। এবার লক্ষ্য ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি পৌঁছানো। দুদিন ধরে সমুদ্রে কাটিয়ে, হাঙরের সাথে মোলাকাত করে অবশেষে সিসিলিতে পৌঁছাল সে। পালের্মো’র এক শরণার্থী শিবির হলো তার নতুন ঠিকানা।

আলি এখন একটা সুশি রেস্তোরাঁয় কাজ করে। জীবনে নতুন আশার আলো দেখতে পাচ্ছে সে। ওর ইচ্ছে ভালোমতো সুশি বানানো আর ইতালিয়ান ভাষাটা শেখা।

এমএসএন অবলম্বনে