অপরাজেয় বাংলা :: Aparajeo Bangla

স্বস্তি নিয়ে মধ্যাহ্নভোজে টাইগাররা

স্পোর্টস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:১৯ পিএম, ২৮ নভেম্বর ২০২১ রোববার  

টেস্ট ক্রিকেটের সৌন্দর্যই বুঝি এই। ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলানো। দ্বিতীয় দিন যেখানে ছিলো মুমিনুল হকদের কাছে হতাশার সেখানে নতুন সূর্য নিয়ে এসেছে টাইগারদের মুখে হাসি। পাকিস্তানের চার উইকেট নিয়ে স্বস্থিতেই মধ্যাহ্নভোজে গেছে স্বাগতিকরা। 

কোন উইকেট না হারিয়ে ১৪৫ তোলা পাকিস্তান লাঞ্চে গেছে ২০৩-৪ নিয়ে। যার পেছনে পুরো ভূমিকা তাইজুল ইসলাম ও মেহেদি হাসান মিরাজের। অবশ্য সাথে ক্যাচ মিসের একটা আক্ষেপও আছে। 

দিনের প্রথম ওভারেই জোড়া সাফল্য তুলে নেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। পরপর দুই বলে সাজঘরে ফেরান অভিষিক্ত ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক ও আজহার আলিকে।

আগেরদিন করা বিনা উইকেটে ১৪৫ রান নিয়ে খেলতে নেমেছিল পাকিস্তান। দিনের প্রথম বলেই এক রান নিয়ে শফিককে স্ট্রাইক দেন আবিদ আলি। পরপর তিন বল ডট খেলেন শফিক। ওভারের পঞ্চম বলে করতে চেয়েছিলেন স্কয়ার কাট।

কিন্তু তার সেই শটটিতে বল ব্যাটে লাগার আগে আঘাত হানে প্যাডে। বাংলাদেশের ফিল্ডারদের জোরালো আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ারও। খালি চোখেই বোঝা যাচ্ছিল, বল আঘাত হানতো স্ট্যাম্পে। তাই আর রিভিউ নেয়নি পাকিস্তান।

যার ফলে শফিকের অভিষিক্ত ইনিংসের সমাপ্তি ঘটেছে ১৬৬ বলে ৫২ রান করে। যেখানে ছিল দুইটি করে চার-ছয়ের মার। শফিক ফিরতে পারতেন ব্যক্তিগত ৯ রানেই। তাইজুলের বলে ঠিক একইভাবে প্যাডে লেগেছিল শফিকের। কিন্তু আম্পায়ার আউট দেননি। বাংলাদেশও রিভিউ নেয়নি। ফলে বেঁচে যান শফিক।

ওপেনারের বিদায়ের পর তিন নম্বরে নেমেছিলেন অভিজ্ঞ আজহার আলি। তাকে প্রথম বলেই বোকা বানান তাইজুল। মিডল স্ট্যাম্পে পিচ করা ডেলিভারি ডিফেন্ড করলেও তার ব্যাট পেরিয়ে বল আঘাত হানে প্যাডে।

এবারও জোরালো আবেদন বাংলাদেশের ফিল্ডারদের। কিন্তু সাড়া দেননি আম্পায়ার। সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক। টিভি রিপ্লে দেখে আউটের সিদ্ধান্ত জানান থার্ড আম্পায়ার। শূন্য রানে সাজঘরে ফেরেন আজহার। চার নম্বরে নামেন অধিনায়ক বাবর।

ডানহাতি ওপেনার আবিদ আলির সঙ্গে শুরুর ধাক্কা সামাল দেওয়ার কাজটা বেশ ভালোভাবেই করছিলেন বাবর। আগেরদিনের মতোই সাবলীল ব্যাটিং করতে থাকেন আবিদ। বাংলাদেশের বোলারদের কোনো সুযোগই দেননি তিনি। দেখেশুনে খেলে ইনিংসের ৬৮তম ওভারে ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নেন আবিদ।

তবে আবিদকে বেশিক্ষণ সঙ্গ দেওয়া হয়নি বাবরের। পাকিস্তানের ইনিংসের ৭৩তম ওভারে আক্রমণে ছিলেন মিরাজ। দ্বিতীয় বলেই তাকে বাউন্ডারি হাঁকান বাবর, পৌঁছে যান ব্যক্তিগত ১০ রানে। তবে এক বল পর প্রতিশোধ নিয়ে নেন বাংলাদেশের অফস্পিনার। সরাসরি বোল্ড করে ১০ রানেই বাবরের বিদায়ঘণ্টা বাজান তিনি।

অফস্ট্যাম্পের বাইরে পিচ করা ডেলিভারিটি পেছনে পায়ে আলতো ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন বাবর। কিন্তু সেই বলটি টার্ন না করা সোজা চলে যায় বাবরের ব্যাটের বাইরের কানা দিয়ে, সোজা আঘাত হানে অফস্ট্যাম্পে। সরাসরি বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরার আগে ৪৬ বলে ১০ রান করেছেন বাবর।

অধিনায়কের বিদায়ের পর ফাওয়াদও বেশি কিছু করতে পারেননি। একপ্রান্তে আবিদ নিখুঁত ও সাবলীল ব্যাটিং করতে থাকলেও ফাওয়াদের বিপক্ষে বারবারই প্রশ্ন তুলছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। শেষ পর্যন্ত তাইজুলের ঘূর্ণিতেই বাজে ফাওয়াদের বিদায়ঘণ্টা।

ইনিংসের ৭৮তম ওভারের তৃতীয় বলে তাইজুলের ঘূর্ণিতে পুরোপুরি পরাস্ত হন ফাওয়াদ। বেশ লম্বা বাঁক খাওয়া ডেলিভারিটি ফাওয়াদের গ্লাভস ছুঁয়ে প্যাডে লেগে উইকেটের পেছনে গেলে দুর্দান্ত ক্ষিপ্রতায় এক হাতে সেটি গ্লাভসবন্দী করেন উইকেটরক্ষক লিটন দাস।

বাংলাদেশের বোলার-ফিল্ডারদের জোরালো আবেদনের পরেও আউট দেননি আম্পায়ার। সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক। টিভি রিপ্লে দেখে ফাওয়াদকে কট বিহাইন্ড আউটের ঘোষণা দেন থার্ড আম্পায়ার। আউট হওয়ার আগে ফাওয়াদ করেছেন ১৫ বলে ৮ রান।

তাইজুলের আগের ওভারে লেগ বিফোরের জোরালো আবেদন হয়েছিল সেঞ্চুরিয়ান আবিদ আলির বিপক্ষেও। সেবারও আউট দেননি আম্পায়ার। পরে বাংলাদেশ রিভিউ নিলে দেখা যায় বলটি প্যাডে লাগার আগে আবিদের ব্যাটের ভেতরের কানা ছুঁয়ে গেছে। তাই বেঁচে যান পাকিস্তানি ওপেনার।

ফাওয়াদকে আউট করার পর ইনিংসের ৮০তম ওভারে আবিদের বিপক্ষে পরিষ্কার সুযোগ তৈরি করেছিলেন তাইজুল। তার হালকা বাঁক খাওয়া ডেলিভারি আবিদের ব্যাটের বাইরের কানা ছুঁয়ে চলে যায় প্রথম স্লিপে। কিন্তু সেটি তালুবন্দী করতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত। ফলে ১১৩ রানে জীবন পেয়ে যান আবিদ।

তাই চার উইকেট নেয়ার আনন্দ যেমন আছে সাথে যোগ হয়েছে আক্ষেপও।